নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২১, ১১:১৪ এএম
হেলেনা জাহাঙ্গীর
গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরগরম হেলেনা জাহাঙ্গীর ইস্যু। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচিত এই ব্যবসায়ীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। সবশেষ বৃহস্পতিবার (২৯) রাতে গুলশান ২ এর ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসা থেকে তাকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তার বাসা থেকে জব্দ করা হয় বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, বিদেশি মুদ্রা, চাকু ও হরিণের চামড়া। পরে তাকে র্যাব সদরদফতরে নেয়া হয়।
কখনো ব্যবসায়িক আবার কখনো রাজনীতিবিদ হিসেবে আলোচনায় আসেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। তার আসল নাম হেলেনা আক্তার। ১৯৯০ সালে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করলে নামের সাথে যুক্ত হয় জাহাঙ্গীর। তিনি তিন সন্তানের জননী।
১৯৭৪ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার তেজগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। জন্ম কুমিল্লায় হলেও বাবার চাকরির সুবাধে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী, সদরঘাট এলাকায়। পড়াশোনা স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে। চাকুরি সূত্রে তার বাবা প্রমোশনাল প্রস্তাব পেয়ে রাশিয়ায় চলে গেলে মায়ের সাথে গ্রামের বাড়ি ফিরে যান হেলেনা।
অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলমের সাথে তার বিয়ে হয় হেলেনার। স্বামীর সংসারে হেলেনা জাহাঙ্গীর পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন; শেষ করেন স্নাতকোত্তর। এরপর শুরু করেন তার উদ্যোক্তা জীবন।
এফবিসিসিআই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক গণমাধ্যমকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের দেয়া সাক্ষাৎকার সূত্রে জানা যায়, বিয়ের সময় স্বামী জাহাঙ্গীর আলম নারায়ণগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠিত পোশাক কারখানার জিএম পদে চাকরি করতেন। পাশাপাশি সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসার সাথেও সংশ্লিষ্টতা ছিলো।
তবে গৃহিণী হিসেবে বসে না থেকে পড়াশোনা শেষ করে হেলেনা জাহাঙ্গীর শুরুতে চাকরির চেষ্টা করেন। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য ইন্টারভিউও দিয়েছেন তিনি। একদিন চাকরি খোঁজার সূত্র ধরে চলে যান স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের অফিসে। সেখানে স্বামীর অফিস কক্ষ দেখে তিনি ঠিক করেন নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার। স্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান স্বামী জাহাঙ্গীর আলম।
বিয়ের ছয় বছর পর ১৯৯৬ সালে রাজধানীর মিরপুর ১১ তে একটি ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে তিনি শুরু করেন প্রিন্টিং ও অ্যামব্রয়ডারি ব্যবসা।
সফল নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে মিডিয়ায় হেলেনা জাহাঙ্গীর আলোচনায় আসেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজেও একটি জয়যাত্রা আইপি টিভি চালু করেন। জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজেকে আইপি টিভি ও নার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন।
বেশকিছু দিন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজ সেবক সিস্টার হেলেনা জাহাঙ্গীর নামে পরিচিতি পান। সমাজ সেবক ও নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় টকশোতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এছাড়াও প্রায় এক ডজন সামাজিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয় দায়িত্বে রয়েছেন হেলেনা। রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে তার দাপুটে উত্থান ও পদচারণ।
হেলেনা জাহাঙ্গীর ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সদস্য ও নির্বাচিত পরিচালক। পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও সক্রিয় সদস্য তিনি।
প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কৃতও হয়েছেন রোটারি ক্লাবের একজন ডোনার হিসেবে। প্রিন্টিং, অ্যামব্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার এবং ওভেন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। সব মিলিয়ে ১২ হাজার কর্মী কাজ করছেন তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। সাম্প্রতিক ঘটনার পর তাকে ওই কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়। কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কয়েকটি বিদেশযাত্রার সফরসঙ্গীও হয়েছিলেন তিনি।
মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচিত লাভ করা হেলেনা জাহাঙ্গীর বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে দেশজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত হন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগে সহযোগী সংগঠন হিসেবে ‘চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের সম্পৃক্ততায় কারণে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে। তার ফেসবুকে ২০ লাখের বেশি ফলোয়ার।
বর্তমানে আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হলেও এর আগে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুটি দলের প্রধান খালেদা জিয়া ও হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ছবি প্রকাশ পেয়েছে।
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। তখন দাবি করতেন, তার কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তিনি স্বতন্ত্র রাজনীতি করতে চান। যদিও পরে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
হেলেনা জাহাঙ্গীর গুলশান ক্লাব, গুলশান নর্থ ক্লাব, বারিধারা ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, গলফ ক্লাব, গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাব, বোট ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, উত্তরা লেডিস ক্লাব, গুলশান ক্যাপিটাল ক্লাব, গুলশান সোসাইটি, বনানী সোসাইটি, গুলশান জগার্স সোসাইটি ও গুলশান হেলথ ক্লাবের সাথে সংশ্লিষ্ট।