মো. সামছুদ্দিন
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২১, ০৩:২০ পিএম
শিক্ষাক্ষেত্রে এই সংকটের দায় নেবে কে?
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (NTRCA) গত ১৫ জুলাই ৫১,৮৬৫ পদে শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ১৪,৬৬৭ জনের বেশি পদ পূরণ করতে পারেননি। কারণ ৮,৪৪৮ পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি এবং ৬,৭৭৭ পদে নারী কোটা পূরণ হয়নি। তাই এই ১৫,৩২৫টি পদ বাদ দিয়ে বাকি ৩৬,৫৪০ পদের রেজাল্ট প্রকাশ। পরিতাপের বিষয় যে, এই ৩৬,৫৪০ পদের মধ্যে ২১,৮৭৩ পদেই ইন্ডেক্সধারী তথা চাকরিরত শিক্ষকরা পুনরায় নিয়োগ পেয়েছেন।
পারতপক্ষে, পরিপূর্ণভাবে পদ পূরণ হয়েছে মাত্র ১৪,৬৬৭টি। ফলত ২১,৮৭৩ পদ শূন্যই থেকে গেল। কারণ চাকরিরত এই সমস্ত সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক যদি নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন তাহলে তাদের আগের প্রতিষ্ঠানে পদ খালি থাকছে। আর যোগদান না করলে নতুন সুপারিশপ্রাপ্ত পদ শূন্যই থাকবে। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র শিক্ষক সংকট। অথচ এই শূন্যতা তৈরি হতো না যদি ইন্ডেক্সধারী শিক্ষকদের গণবিজ্ঞপ্তিতে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিয়ে বদলির সুযোগ দেওয়া হতো।
অন্যদিকে, ঐ ২১,৮৭৩ পদে বেকার নিবন্ধিতরা আবেদন করে হাজার হাজার টাকা আবেদন ফি দিয়েও বঞ্চিতই থেকে গেলেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যে তীব্র শিক্ষক সংকট জটিলতায় পড়ছে তার প্রকৃত দায়ভার কার? এছাড়া, নিবন্ধনহীন চাকরিরত ইন্ডেক্সধারী সিনিয়র শিক্ষকদের পাশ কাটিয়ে শুধু নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের এমন অভিনব বদলির ব্যবস্থায় সিনিয়র শিক্ষকদের প্রতি কতটুকু সুবিচার হয়েছে?
আরো একটি সংকট সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ হলো—নিয়োগপ্রত্যাশীদের জাতীয় মেধাতালিকার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক মেধাতালিকার ভিত্তিতে যত খুশি তত প্রতিষ্ঠানে আবেদন গ্রহণের মাধ্যমে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া। এতে দেখা যাচ্ছে কিছু আবেদনকারী (ধরে নেওয়া যাক ৯ জন) কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন। একইসঙ্গে ঐ ৯ জন প্রার্থী অ থেকে ও পর্যন্ত ৯টি প্রতিষ্ঠানেও আবেদন করে সবাই কোনো না কোনোটিতে নির্বাচিত হয়েছেন। তাহলে দশম প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রার্থীই পাবে না; কারণ একজন প্রার্থী কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত হলে সফটওয়্যারে বাকি সব প্রতিষ্ঠানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার নাম ব্লক হয়ে যায়। যার ফলে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রার্থীশূন্যতায় ভোগে। যদি অ প্রতিষ্ঠানের প্রার্থীদের নম্বরক্রম ৭৫, ৭০, ৬৫, ৬০, ৫৫ ও ৫০ হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে ৭৫ নম্বরধারী ঐ প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত হবেন।
অন্যদিকে, ই প্রতিষ্ঠানের প্রার্থীদের নম্বরক্রম যদি শুরুই হয় ৬০, ৫৫, ৫০, ৪৫ দিয়ে, তাহলে ই প্রতিষ্ঠানে ৬০ নম্বরধারী নির্বাচিত হবেন। অথচ অ প্রতিষ্ঠানের ৭০ নম্বরধারীও বঞ্চিত হবেন। যা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ কথাটির অপপ্রয়োগ প্রমাণিত হয়। অথচ এমন ক্ষেত্রে, ইন্ডেক্সধারীদের মেধাতালিকা থেকে বাদ দিয়ে অবশিষ্টদের সম্পূর্ণভাবে জাতীয় মেধাতালিকা অনুসরণ করে একটিমাত্র সাধারণ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেধাক্রমানুযায়ী শূন্যপদে নিয়োগের ব্যবস্থা হলে জাতি ঐ সংকট থেকে মুক্ত হতে পারত।
-ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর