প্রণোদনার ঋণ অপব্যবহার, প্রয়োজন কঠোর নজরদারি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২১, ০৭:১৩ পিএম | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২১, ০৭:১৪ পিএম

প্রণোদনার ঋণ অপব্যবহার, প্রয়োজন কঠোর নজরদারি

প্রণোদনার ঋণ অপব্যবহার, প্রয়োজন কঠোর নজরদারি

করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট আর্থিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত এক লাখ ২৮ হাজার ৩০৩ কোটি টাকার মোট ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এর মধ্যে ১০টি প্যাকেজের আওতায় সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প ও সেবা, রফতানিমুখী শিল্প ও কৃষি খাতে ভর্তুকি সুদে বিতরণের জন্য ৯৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে বিতরণ করা হচ্ছে প্রণোদনার এই ঋণ। সুদের অর্ধেক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার; কিন্তু কিছু গ্রাহক স্বল্প সুদের এ ঋণের যথাযথ ব্যবহার না করে নানা অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

অথচ এসব ঋণ দেওয়া হয়েছিল চলতি মূলধন হিসেবে, যা দিয়ে প্রতিদিনের খরচ মেটানোর কথা; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, কিছু ব্যবসায়ী প্রণোদনার ঋণের টাকা ব্যবসায় না খাটিয়ে অন্য ব্যাংকের ঋণ শোধ করেছেন, বেশি মুনাফা করতে বিনিয়োগ করেছেন লাভজনক অন্য ব্যবসায়। কেউ কেউ এ অর্থে জমি কিনছেন। কেউ কিনেছেন গাড়ি-বাড়ি। এ ছাড়া অর্থের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে বড় উল্লম্ফনের পেছনে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ বিনিয়োগের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ঋণের অন্যতম উদ্দেশ্য স্বল্প সুদের ঋণ শিল্পে বা ব্যবসায় খাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করা, যাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা টিকে থাকে এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়। কিছু ব্যবসায়ী প্রণোদনা ঋণের ওই টাকা ব্যবসায় না খাটিয়ে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার করায় প্রণোদনার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

প্রথম থেকেই প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ প্রাপ্তি নিয়ে অসন্তোষ ছিল হতদরিদ্র মানুষ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের। পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে স্বল্প সুদে এ ঋণের সুবিধা বড় বড় শিল্প কারখানা আর সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা পেলেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা খুব কমই ঋণ সহায়তা পেয়েছেন। অভিযোগ আছে, বরাদ্দের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ টাকা পড়ে থাকলেও ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের অনেকে চেয়েও ঋণ পাননি। 

করোনা-পরবর্তী সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে বিষয়ে এখনই একটি কার্যকর নীতিমালা ও সুপারিশ প্রণয়ন করতে হবে। প্রণোদনার অর্থের যাতে কোনো ধরনের অপব্যবহার না হয় এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা এর সুফল পায় এবং ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয়, এ জন্য নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। সরকারি আর্থিক সহায়তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন না হলে সমাজে বৈষম্য আরও বাড়বে। এ ধরনের ঋণের অপব্যবহার হলে ঋণগ্রহীতা এবং ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

-সম্পাদকীয়, ২৯ জুলাই, সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh