নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২১, ০৮:৪৬ পিএম
হেলেনা জাহাঙ্গীর।
রাজধানীর গুলশান থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটি থেকে সদ্য পদ হারানো হেলেনা জাহাঙ্গীরের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করে হেলেনাকে আদালতে হাজির করেন।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু রিমান্ডের জোর দাবি জানান। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী রিমান্ডের আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে হাজির করা হয়।
এর আগে, শুক্রবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর গুলশান থানায় র্যাব-১ বাদী হয়ে দুইটি মামলা দায়ের করে বলে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ্ত কুমার চক্রবর্তী।
তিনি জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। এছাড়াও বিশেষ ক্ষমতা আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনসহ চারটি ধারায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (৩০ জুলাই) র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
খন্দকার আল মঈন জানান, অপকৌশলের মাধ্যমে নিজেকে মাদার তেরেসা, পল্লীমাতা, প্রবাসীমাতা হিসেবে পরিচিত পেতে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। মানবিক সহায়তার নামে হেলেনা জাহাঙ্গীর বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, একটি উচ্চবিলাসী উদ্দেশ্য বাস্ত্যবায়নের জন্য তিনি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন। এজেন্ডা বাস্তবায়নে তিনি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মাঠ পর্যায়ে হেলেনার প্রচার চালাত।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরের ৩৬ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর ভবন থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র্যাব। বাসভবনে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুর্মিটোলায় র্যাবের হেডকোয়ার্টারে নেয়া হয়।
অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু সাংবাদিকদের জানান, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকাধীন বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বিদেশি মদ, ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম, হরিণের চামড়া, ওয়াকিটকি সেট ও বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত আলামত ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে র্যাব হেফাজতে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দ্রুতই বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার। জয়যাত্রা টেলিভিশনের চেয়ারপারসন হেলেনা নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন।
হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য ছিলেন। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেরও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন তিনি।
সম্প্রতি নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠন। এটির কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নাম আসে হেলেনা জাহাঙ্গীরের। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাহবুব মনিরকে। তাদের নাম-সংবলিত পোস্টার ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
পোস্টারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
সংগঠনটির দাবি, দুই-তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।