চিরসবুজ এক মিসরীয় সিনেমার নাম

দ্য নাইটিঙ্গেলস প্রেয়ার

রাফিউজ্জামান রাফি

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২১, ০২:১৪ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

আমনাকে তার বাবা বলেছিল, নাইটিঙ্গেল পাখি গান করার পর তুমি যদি প্রার্থনায় বসো এবং তোমার প্রার্থনা শেষে আবারও যদি নাইটিঙ্গেলটি গান গেয়ে ওঠে, তবে তোমার প্রার্থনা সত্যি হবে। বহু বছর পরে কোনো একদিন নাইটিঙ্গেল পাখির গান শেষে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে হাত তুলে সে প্রার্থনা করেছিল, সে যেন তার বোনের খুনের প্রতিশোধ নিতে পারে। সেদিন আমনার প্রার্থনা শেষ হতেই নাইটিঙ্গেলটি আবার গান শুরু করে। গল্পটি মিসরীয় সিনেমা দ্য নাইটিঙ্গেলস প্রেয়ারের। মিসরীয় সভ্যতার কথাতো সবারই জানা। এবার একটু মিসরীয় সিনেমা সম্পর্কে জানি! 

সর্বকালের সেরা ১০টি চলচ্চিত্রের একটি চলচ্চিত্র এই ‘দ্য নাইটিঙ্গেলস প্রেয়ার’। এই চলচ্চিত্রটির কথা বলতে গেলে আমাদের চলে যেতে হবে ৫০-এর দশকে। ১৯৫৯ সালে মিসরীয় নির্মাতা হেনরি বারাকাত এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। তানহা হুসাইয়েনের লেখা দোয়া আল কারাওয়ান নামক একটি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। ট্যাজেডি, হত্যা, প্রতারণা ও ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়ে তৈরি এই চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্রটি আমনা নামের এক যুবতীর। আমনারা দুই বোন। বাবা-মা ও দুই বোনের এই ছোট পরিবারটি বাস করত মিসরের এক নিভৃত গ্রামে। গ্রামটির অধিকাংশ মানুষই ছিল প্রতিক্রিয়াশীল। অন্যদিকে আমনার বাবা ছিল একজন প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ। একসময় ব্যাভিচারের অপরাধে অভিযুক্ত করে আমনার বাবাকে হত্যা করে গ্রামবাসী। এই ঘটনার পর আমনাদের পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হয়। সপরিবারে মরুভূমির সে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর আমনা, তার বোন হানাডি ও তার মা শহরে এসে ঠাঁই নেয়।

অজো-পাড়াগাঁওয়ের তিনটি নারী এই প্রথম শহুরে জীবনচিত্র দেখে যারপরনাই অবাক হয়ে যায়। শহরের গাড়িঘোড়া, আধুনিক জীবন ব্যবস্থা এর আগে কখনো দেখেনি তারা। আর তাই এসব দেখে তারা বেশ অবাক হয়। তারা আরও অবাক হয় শহুরে নারীদের স্বাধীন জীবনচিত্র দেখে। শহরে এসে আমনা ও হানাডি গৃহ পারিচারিকার কাজ নেয়। আমনা কাজ নেয় শহরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। হানাডি কাজ নেয় ওই শহরে বসবাসরত ইঞ্জিনিয়ার নামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে। দু’বোনের খাটনির টাকায় মাকে নিয়ে যখন দু’মুঠো খেয়ে-পরে তিনজনের এই পরিবারটির মোটামুটি চলে যাচ্ছিল, ঠিক তখন সুখের আকাশে ডাকতে শুরু করে দুঃসময়ের মেঘ।  এভাবেই এগিয়ে যায় দ্য নাইটিঙ্গেলস প্রেয়ারের গল্প। 

চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্র অর্থাৎ আমনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফাতিন হামামা এবং ইঞ্জিনিয়ারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহমেদ মাজহার। আমনার বোন হানাডির চরিত্রটির রূপদান করেছেন অভিনেত্রী জাহরাত এল ওলা। আমনা ও হানাডির মায়ের চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেত্রী আমিনা রিজক। সর্বকালের সেরা এই চলচ্চিত্রটি খ্যাতিতে মিসরের সীমানা ছাড়িয়ে মন জয় করে নিয়েছে পৃথিবীর সব দেশের সিনেমাপাগল দর্শক এবং চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের। স্বীকৃতিস্বরূপ চলচ্চিত্রটির ঝুলিতে জমা হয় একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স পুরস্কার। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আগের মতোই সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে চলচ্চিত্রটি। আর তারই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে এই চলচ্চিত্রটিকে সর্বকালের সেরা ১৯তম আফ্রিকান চলচ্চিত্রের উপাধি দেওয়া হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh