রফতানি আয়ে হোঁচট, বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২১, ১০:২৫ পিএম

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে রফতানি আয়ে ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রফতানি কমেছে সোয়া ১১ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। পাশাপাশি ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি করেছে শঙ্কা, যা আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ২৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্যের মোট রফতানি হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলার। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭২ কোটি ৯০ মার্কিন ডলার। রফতানি কমেছে ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। আগের বছর একই সময়ে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৯১ কোটি ৯ লাখ মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই মাসে সবচেয়ে রফতানি কমেছে বিল্ডিং তৈরির কাঁচামাল রফতানিতে। এখাতে শতভাগ রফতানি কমেছে। এরপরেই রয়েছে চামড়াজাত পণ্য। এ খাতে রফতানি কমেছে ৪৩.৫৭ শতাংশ। এরপরের অবস্থান পাট ও পাটজাত দ্রব্যের। এই খাতে ৪১.২৯ শতাংশ রফতানি কমেছে।

রফতানিকারকরা বলছেন, করোনার ধাক্কায় গতবছরের এপ্রিলে শিল্পকারখানা উৎপাদন প্রায় বন্ধ ছিল। আবার অনেক বিদেশি ক্রেতা বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্রয়াদেশ বাতিল করায় রফতানি তলানিতে নেমে গিয়েছিল। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারির কিছুটা উন্নতি হয়। ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনীতি সচল হতে শুরু করে। বাতিল হওয়া ক্রয়াদেশ প্রত্যাহারের পাশাপাশি আসতে থাকে নতুন পণ্যের অর্ডার। এসব বিবেচনায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিধিনিষেধ জারি হলেও সচল রাখা হয়েছে শিল্পকারখানা। এ কারণে রফতানি বাড়ে। তবে করোনা মহামারি মোকাবিলায় আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধ এবং ঈদুল আজহার কারণে টানা ১২ দিন বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে রফতানিমুখী শিল্পে।

যদিও বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। গত অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ (৩৮ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। এ আয় তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৪১ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। তার আগের বছর রফতানি হয়েছিল ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি থেকে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) দেশ আয় করেছে তিন হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। তবে আমদানি নিয়ে পুরো অর্থবছরের হিসাব এখনও প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের হিসাবে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৪২৩ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতির ঘোষণাপত্রে পুরো অর্থবছরের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতির তথ্য প্রকাশ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দুই হাজার ২৭৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের (২০১৯-২০) অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৭৮৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৮৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর পণ্য বাণিজ্যের পাশাপাশি সেবা খাতের (বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি) ঘাটতিও বেড়েছে অনেকটা। ২০২০-২১ অর্থবছরে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ২৫৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

এদিকে চলতি অর্থবছর (২০২১-২২) বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে পুরো অর্থবছরের বাণিজ্য ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই হাজার ৬০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলসহ বেশির ভাগ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ পূর্বাভাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh