চেয়ারম্যানের স্ত্রীর গলা ধাক্কায় আহত

এবার সেই শতবর্ষী বৃদ্ধার হাসপাতালের ছাড়পত্র গায়েব!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২১, ০৬:৫২ পিএম

শতবর্ষী বৃদ্ধা আলেমা। ছবি: প্রতিনিধি

শতবর্ষী বৃদ্ধা আলেমা। ছবি: প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ত্রাণের স্লিপ চাওয়ায় চেয়ারম্যানের স্ত্রীর গলা ধাক্কায় জখম হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়া সেই শতবর্ষী বৃদ্ধা আলেমা বেওয়ার এবার হাসপাতালের ছাড়পত্র গায়েব হয়েছে। 

অভিযোগ উঠেছে, প্রভাব খাটিয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান হাসপাতালে কর্তব্যরতদের ম্যানেজ করে বৃদ্ধা আলেমার ছাড়পত্র গায়েব করেন। এছাড়া তার কারসাজিতে হাসপাতালে ভর্তি বইতে  রোগীকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩আগস্ট) বিকেলে এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন বৃদ্ধার ছেলে নুরুজ্জামান। 

এর আগে সোমবার (১৯ জুলাই) ত্রাণের স্লিপ নিতে উপজেলার পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আলীর বাড়ি গেলে তার স্ত্রী ও মেয়ের দেওয়া গলা ধাক্কায় আলেমা বেওয়া জখম হন। আহত বৃদ্ধা আলেমা বেওয়া উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি মদনপুর গ্রামের মৃত ছপির উদ্দিনের স্ত্রী ও রিকশাচালক নুরুজ্জামানের মা। 

জানা যায়, অতি দরিদ্র আলেমা রিকশাচালক ছেলে নুরুজ্জামানের সংসারে বসবাস থাকেন। সম্প্রতি লকডাউনে রিকশাচালক ছেলের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় নিদারুন অর্থ কষ্টে পড়ে পরিবারটি। ঈদের কয়েকদিন আগে পলাশীর চেয়ারম্যান শওকত আলী ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে বৃদ্ধা আলেমার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি নেন। ত্রাণ নিতে তাকে ১৯ জুলাই সকালে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকেন চেয়ারম্যান।  সকালে কিছু মুখে না দিয়েই  তিনি  ইউনিয়ন পরিষদে চলে যান। পরে চেয়ারম্যান তার বাড়িতে রাখা স্লিপ নিয়ে আসতে বললে বৃদ্ধা পরিষদের পাশে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। সেখানে দুপুর পর্যন্ত স্লিপের জন্য অপেক্ষা করেন ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা। এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষ করে চেয়ারম্যান বাড়িতে চলে এলে স্লিপ চান বৃদ্ধা। এ সময় চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৫) ও মেয়ে সুহিন আক্তার (১৯) ওই বৃদ্ধাকে গলা ধাক্কা দিলে বৃদ্ধা মেঝেতে পড়ে যান। এসময় তার দাঁত ভেঙে রক্ত ঝরতে থাকে এবং হাত, পা ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।  

বিপদ দেখে দ্রুত পল্লী চিকিৎসক নিয়ে নিজ বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন চেয়ারম্যান। মায়ের অসুস্থতার খবরে ছেলে নুরুজ্জামান স্থানীয়দের সহায়তায় আলেমাকে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।  ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসাপত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন আলেমা বেওয়া। এ নিয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হলে আহত বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ান আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। বৃদ্ধাকে অর্থসহায়তা দেওয়াসহ ন্যায় বিচার পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। 

এ ঘটনায় আহত বৃদ্ধার ছেলে নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ১৯ জুলাই রাতে চেয়ারম্যান শওকত আলীকে প্রধান অভিযুক্ত করে চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও মেয়েকেও আসামি করে আদিতমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে থানা পুলিশ নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে ২৮ জুলাই স্ত্রীসহ চেয়ারম্যান শওকত আলীকে গ্রেফতার করেন। তবে ওই দিনই আদালত জামিন দেয় তাদের। বৃদ্ধা আলেমা বেওয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সনদ ও ছাড়পত্র মূলে বিচার কার্য সম্পন্ন হবে জানা গেছে।

এদিকে বৃদ্ধার চিকিৎসা সনদ দুর্বল করতে ক্ষমতার প্রভাবে ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী হাসপাতালের কর্তব্যরতদের ম্যানেজ করে বৃদ্ধার আলেমার ছাড়পত্র গায়েব করেন। এছাড়া তার কারসাজিতে হাসপাতালে ভর্তি বইতে রোগীকে পলাতক দেখানো হয়েছে বলেও নুরুজ্জামানের অভিযোগ। যথারীতি চিকিৎসকদের বলে স্বাক্ষর করে রোগীকে নিয়ম অনুযায়ী বাড়িতে নেওয়ার পরও পলাতক দেখানোর বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে পুনরায় অভিযুক্ত করে বৃদ্ধার ছেলে নুরুজ্জামান মঙ্গলবার ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। 

আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহমেদ বলেন, দায়িত্বরতদের জানিয়ে গেলে পলাতক দেখানো হয় না। রোগীকে কেন পলাতক দেখানো হয়েছে, তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh