অলিম্পিকে বাংলাদেশ : সাফল্য কেবল অংশগ্রহণে

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২১, ০৮:০৩ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সময়ের হিসাবে অলিম্পিকে বাংলাদেশের যাত্রা ২৭ বছরের। ১৯৮৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক থেকে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশ নিয়ে আসছেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। 

গত নয়টি আসরে ৪৩ জন লাল-সবুজের প্রতিনিধি বিশ্বের সেরা এই আসরে অংশ নিয়েছেন। এবার টোকিও অলিম্পিকে চারটি ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশের ছয় ক্রীড়াবিদ অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন- আর্চার রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী, সাঁতারু আরিফুল ইসলাম ও জুনাইনা আহমেদ, শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি এবং অ্যাথলেট জহির রায়হান। এরই মধ্যে বাকি অলিম্পিক থেকে বিদায় নিয়েছেন। অন্যরাও বিদায় নেবেন নিজস্ব নিয়মে। 

অন্ততঃপক্ষে পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ অলিম্পিক অংশগ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এবার যে এর ব্যতিক্রম হবে না সেই গ্যারান্টি দিতে পারছে না। তবে আর্চারির রিকার্ভ মিক্সড ইভেন্টে শেষ ষোলতে উঠে কিছুটা হলেও চমক দেখিয়েছেন রোমান-দিয়া জুটি। যদিও তারা এরচেয়ে বেশি দূর যেতে পারেনি। এখন একক ইভেন্টে লড়াইয়ের পালা। তবে বাংলাদেশের মতো এত জনসংখ্যার দেশ হিসেবে অলিম্পিকে কোনো পদক না পাওয়ার বিষয়টি অনেকের কাছেই আশ্চর্য ঠেকে।

টোকিও ২০২০ অলিম্পিকে যদিও আর্চারি নিয়ে আশার আলো জ্বেলে রেখেছেন রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপে এই দুই তীরন্দাজের লড়াইয়ের কারণেই মূলত আশাবাদী হওয়া। 

এবারের অলিম্পিক আসর শুরু হওয়ার আগে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা অ্যাথলেট সাইদুর রহমান ডন আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ’বাংলাদেশের মতো এত জনসংখ্যার একটি দেশ এখনো অলিম্পিকে কোনো পদক জিততে না পারার বিষয়টি আমাকে পীড়া দেয়। আমাকে তো বাংলাদেশি হিসেবে অনেকে জিজ্ঞেস করে থাকেন, বাংলাদেশ কেন এখন পদক পায়নি’। ডনের মতো বাংলাদেশের মানুষেরও একই কথা, কবে অলিম্পিকে পদক পাবে? কিন্তু পাঁচ বছর আগের স্কোরটাও করতে পারেননি তিনি। 

রিও অলিম্পিকের পর উন্নতি হয়নি বাকির। বরং রিও অলিম্পিকের চেয়ে আরও বাজে পারফরম্যান্স হয়েছে টোকিওতে। বাকি প্রথম সিরিজের ১০ শুটে ১০২.৮ স্কোর করেন। ছয় সিরিজের পরের পাঁচটিতে তিনি করেন যথাক্রমে ১০৩.৪, ১০২.৯, ১০৩.৮, ১০৩.৮ ও ১০৩.১ স্কোর। বাকির গড় স্কোর ১০.৩৩ নিজে শেষ করেন বাকি। ফলে মোট স্কোরটা দাঁড়ায় ৬১৯.৮। অথচ রিও অলিম্পিকে বাকির স্কোর ছিল ৬২১.২। অবস্থান ৫০ জনের মধ্যে ২৫তম ছিল। আগের পারফরম্যান্স ধরে রাখা তো দূরের কথা, ভালো খেলতেই পারেননি বাকি। তাহলে অলিম্পিকে অংশগ্রহণই কি বাংলাদেশের একমাত্র কাজ নয়? কমনওয়েলথ গেমসে দুটি রৌপ্য আছে তার দখলে। কিন্তু অলিম্পিকে এলেই যেন কী হয়ে যায় বাকির! এবারও বাছাইপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশি এই শুটার। 

তবে এখনো প্রত্যাশার কেন্দ্রে ছিল আর্চারি। দেশের আর্চারিতে সবচেয়ে আলোচিত নাম রোমান সানা। দেশসেরা আর্চারও তিনি। টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নতুন মাইলফলক তৈরি করেছেন ১৯৯৫ সালে খুলনায় জন্ম নেওয়া আনসারের ক্রীড়াবিদ ল্যান্স নায়েক রোমান। টোকিও অলিম্পিকে ইউমেনোস হিমাপার্ক আর্চারি গ্রাউন্ডে প্রথম দিন বাংলাদেশের জন্য দারুণ কেটেছে। সকালে নারী আর্চার দিয়া সিদ্দিকী নিজের ক্যারিয়ারের সেরা স্কোর ৬৩৫ করে র‌্যাংকিং রাউন্ডে ৩৬তম হন। এর ঘণ্টা দুই পর রোমান সানা ৬৬২ স্কোর গড়ে ১৭তম হয়েছেন। রোমান ও দিয়ার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ মিক্সড ইভেন্টে ১৬তম পজিশন পেয়েছে। সাঁতারে ২০১২ লন্ডন ও ২০১৬ রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন মাহফিজুর রহমান সাগর। এবার নতুন দু’জনকে অলিম্পিকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। দু’জনেরই বয়স বিশের নিচে। 

২০১৯ সালে বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া এবং আইওসির বৃত্তির আওতায় থাকা আরিফুল ইসলামের টোকিও অলিম্পিকে ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়া অনেকটা নিশ্চিতই ছিল। সেই সঙ্গে উপরি পাওনা লন্ডনপ্রবাসী জুনায়না আহমেদের সুযোগ পাওয়া। ফলে টোকিও অলিম্পিকের সাঁতার ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশ থেকে দু’জন সুযোগ পান। অনেক নাটকীয়তার পর অ্যাথলেটিকস ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সুযোগ অধিকাংশ সময়ে দেশের দ্রুততম মানব কিংবা মানবীরাই পেয়ে থাকতেন; কিন্তু দীর্ঘদিন পর ৪০০ মিটার স্প্রিন্টের জন্য মনোনীত হয়েছেন অ্যাথলেট। এবারের টোকিও অলিম্পিকে ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে নির্বাচিত হন দেশের অন্যতম সেরা স্প্রিন্টার জহির রায়হান। ১ আগস্ট অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ৪০০ মিটার স্প্রিন্টের হিটে নামবেন জহির।

এখন দেখার অপেক্ষায় অংশগ্রহণের গণ্ডি পেরিয়ে মনে রাখার মতো কোনো অর্জন হয় কি-না বাংলাদেশের।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh