ডায়াবেটিস থাকলে ফল খেতে হবে সাবধানে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২১, ১০:২৭ এএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২১, ১১:৩৫ পিএম

তাজা ফলমূলে আছে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ। ফাইল ছবি

তাজা ফলমূলে আছে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ। ফাইল ছবি

ডায়াবেটিসের রোগীদের যেকোনো ফল খাওয়াই কি বিপজ্জনক; না, একেবারেই তা নয়। এটা সত্যিই যে কিছু কিছু ফল রক্তে শর্করা মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন- আম, লিচু, কলার মতো ফল যা জিআই ইন্ডেক্সের উপর দিকের তালিকায় পড়ে। তাই এই ফলগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলা বা পরিমাণ মতো খাওয়া ভালো। 

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। আর নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের একটি বড় নিয়ামক হল পরিমিত পরিমাণে সঠিক খাবার গ্রহণ। যেহেতু এই রোগে রক্তে চিনি বা শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাই মিষ্টি বা শর্করা জাতীয় যেকোনো খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশেষ সাবধানতা মেনে চলতে হয়। 

ডায়াবেটিস রোগীরা যেকোনো খাবার গ্রহণের আগে ভাবা উচিত সেই খাবারটির ক্যালরি মান কত, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও গ্লাইসেমিক লোড কেমন। কোন খাদ্য রক্তে সহসা কতটা শর্করা বাড়িয়ে দিতে পারে তার গাণিতিক হিসাব হলো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও গ্লাইসেমিক লোড। জিআই ৫৫–এর নিচে হলে তাকে কম জিআইযুক্ত খাবার, ৫৬ থেকে ৬৯ হলে মধ্যম জিআই খাবার এবং ৭০–এর বেশি হলে তাকে উচ্চ জিআই খাবার বলা হয়। যে খাবারের জিআই যত কম, সেটা তত কম শর্করা বাড়ায়।

আমেরিকান ডায়াবিটিস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রচুর ফলে এমন কিছু উপকারি ভিটামিন ও ফাইবার রয়েছে যা টাইপ টু ডায়াবেটিস দূরে রাখতে সাহায্য করবে। 

জেনে নেয়া যাক ডায়াবেটিস রোগীরা কোন ফল খেতে পারবেন ...

নাসপাতি : অনেকেই মনে করেন, নাসপাতির কোনো গুণ নেই। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। নাসপাতিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা ডায়াবেটিক ডায়েটে অবশ্যই রাখা উচিত। ফ্রুট স্যালাড বানালেও অবশ্যই তাতে নাসপাতি রাখবেন।

আপেল : এখন সারা বছরই কোনো না কোনো জাতের আপেল পাওয়া যায়। আপেলের গুণাগুণ নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। এতেও প্রচুর ফাইবার রয়েছে। একটি আপেল খেলে পেট অনেকক্ষণ ভর্তিও থাকবে। ফাইবারের পাশাপাশি কিছু পরিমাণে ভিটামিন সি’ও রয়েছে এই ফলে।

কিউই : মজাদার এই ফলটি বিদেশি হলেও আজকাল আমাদের দেশে সহজেই কিনতে মেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফলটি দেহের সুগারের স্তরকে কমিয়ে আনতে সহায়তা করে, তাই এই ফলটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশ কার্যকরি। এতে রয়েছে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি।

পিচ : ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য পিচ ফল দারুণ উপকারি। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে এবং শরীরের বিপাক হার বাড়াতে সাহায্য করে পিচ। যদি সকালে স্মুদি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে দই বা ঘোলের সাথে কয়েকটি পিচের টুকরো, সামান্য দারচিনি গুঁড়ো ও অল্প আদা দিয়ে স্মুদি বানাতে পারেন।

জাম বা অন্য বেরি : গ্রীষ্মের ফল কালোজাম ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপকারী একটি ফল। জামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে যা শরীরের পক্ষে খুব ভাল। এতে থাকা বিভিন্ন উপাদান রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে তাই ডায়াবেটিক রোগীরা একদম চিন্তামুক্তভাবে এই ফলটি খেতে পারেন। শুধু ফলই নয়, কালোজামের বীজকে গুঁড়ো করে দিনে একবার যদি হাফ চামচ খাওয়া যায় সেটিও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যদি স্ট্রবেরি পেয়ে যান, খেতে পারেন। চেরি খুব সহজে পেয়ে যাবেন। ফ্রুট স্যালাদ আরও সুস্বাদু করার জন্য চেরি দারুণ কাজে লাগে। বেরি ড্রাই ফ্রুট হিসেবেই খেতে পারেন। তবে দেখে নিতে হবে তাতে বাড়তি চিনি মেশানো রয়েছে কিনা।

কামরাঙ্গা : বিশেষ করে টক কামরাঙ্গা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। কালো জামের মতো এটিও রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে ফলে ডায়াবেটিক রোগীরা তাদের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই ফলটি তাদের খাবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

পেয়ারা : প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে পেয়ারায়। ডায়েটারি ফাইবার থাকার কারণে জিআই খুবই কম পরিমাণে থাকে যা রক্তের শর্করা না বাড়িয়েই শরীরে দেয় বাড়তি পুষ্টি। এছাড়া ডায়েটারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও সহায়তা করে।

আনারস : আনারস অ্যান্টি ভাইরাল, অ্যান্টি ইনফ্ল্যামাটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটরিয়াল একটি ফল, যা খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়, ফলে সাধারণত ভাইরাল জ্বরে আনারস অনেক বেশি কাজে দেয়। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও আনারস বেশ কার্যকরি।

পেঁপে : পেঁপেতে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল, যার কারণে পেঁপে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। কাঁচা ও পাকা দুই রকম পেঁপেই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। খিদে পেলে পেট ভরাতেও অনন্য এই খাবার, তবে পাকা পেঁপে মিষ্টি হলে খাবেন পরিমিত পরিমাণে।

তরমুজ : যত ইচ্ছা তত পরিমাণে যে ফলটি খেতে পারেন ডায়াবেটিস রোগীরা, সেটা হচ্ছে তরমুজ। খিদে মেটানো, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগানো ছাড়া পানি শূন্যতাও রোধ করে এই ফলটি।

ডালিম : ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগারের নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে ডালিম। ডালিম এমনিতেই অনেক রোগের কার্যকরি ওষুধ হিসেবে কাজে দেয়, তবে ডায়াবেটিস রোগটি নিয়ন্ত্রণে এটি বেশ সহায়তা করে।

জামরুল : তরমুজের মতো জামরুলেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি, তাই ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত জামরুল খেতে পারেন। জামরুল রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও জামরুলে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ উপকারী।

আমলকী : আমলকীতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি আছে। ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত আমলকী খেলে রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

আমড়া : আমড়া একটি পুষ্টিকর টক ফল। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি খুবই উপকারী।

টক বড়ই : টক বড়ইতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

তবে মনে রাখবেন -

- তাজা ফলমূলে আছে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ। তাই ফল একেবারে বাদ দেওয়া যাবে না। 

- প্রধান খাবারের পর ফল খাবেন না, এতে শর্করা বেশি বাড়বে। মধ্য সকাল বা বিকেলে খাবারের বিরতিতে খান। 

- একসাথে অনেক ফল খেয়ে ফেলবেন না। একেক দিন একেক রকমের ফলের স্বাদ গ্রহণ করুন। 

- ফলের মৌসুমে অন্যান্য শর্করা যেমন ভাত, রুটি, আলু কমিয়ে ফেলতে পারেন। 

- কিডনি রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh