ফেসবুক!

আহসান হাবীব

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২১, ০৩:২৯ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

গফুর সাহেব হঠাৎ করে আবিষ্কার করলেন যে ফেসবুক সব সর্বনাশের মূল। ফালতু সময় নষ্ট। নাস্তার টেবিলে বসলে তার দুই ছেলে-মেয়ের হাতে থাকে ফোন। ফেসবুক চলছে। স্ত্রী রান্না করছে তার হাতেও ফেসবুক চলছে। কোনো কথাবার্তা নেই। কই তিনিতো ফেসবুক করেন না, তার সময় কি কাটে না... অ্যাঁ? এর একটা বিহিত হওয়া দরকার, অতি শিগগির বিহিত হওয়া দরকার। তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু বখতিয়ারকে ফোন দিলেন।

-বখতিয়ার? 

-বল 

-তোর সাথে জরুরি আলাপ আছে একটা

-কি বিষয়ে?

-ফেসবুক নিয়ে তুই কি ভাবছিস?

-ছ্যা ছ্যা ফালতু সময় নষ্ট। কেন তুই কি ফেসবুক খুলেছিস নাকি? 

-পাগল না মাথা খারাপ। আমি ভাবছি অতি শিগগির ফেসবুকের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। 

-কি আশ্চর্য

-আশ্চর্য কেন? 

-আমিও ঠিক এই কথাটাই ভাবছিলাম। ফেসবুকের কারণে আজকাল কারও কোন প্রাইভেসি নেই। এর ঘটনা ও জেনে যাচ্ছে। ওর ঘটনা এ জেনে যাচ্ছে। সবচে বড় কথা ফালতু সময় নষ্ট। 

- হ্যাঁ ঠিক এই পয়েন্টে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। পারিবারিক প্রাইভেসি, শান্তি এসব ফিরিয়ে আনতে ফেসবুকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো অতীব জরুরি। 

-একদম ঠিক কথা। এক কাজ কর আজ বিকেলে পার্কে চলে আয় আলোচনা করে আমাদের প্ল্যান অব অ্যাকশন ঠিক করি।

-ঠিক আছে। ৫টায় আমি চলে আসব। 

ঠিক ৫টায় রমনা পার্কের দক্ষিণ গেটের কাছের এক বেঞ্চে দুই রিটায়ার্ড বন্ধু এক হলেন।

-প্রথমে যে কাজটা করতে হবে জাকারবার্গের একটা কুশপুত্তলিকা দাহ করতে হবে

-জাকার বার্গ কে?

-আরে আশ্চর্য জাকারবার্গকে চিনিস না? ওইতো যত নষ্টের মূল। ফেসবুকের মাথা। ওর কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে আমাদের আন্দোলন শুরু করতে হবে। 

-কোথায় পুড়াব? 

-কেন প্রেস ক্লাবের সামনে। ওখানেইতো সাংবাদিকরা সব থাকে। ওরা নিউজ করবে। 

-ঠিক বলেছিস। তাহলে তাই হোক; কিন্তু কুশপুত্তলিকাটা বানাবে কে?

-ওটা নিয়ে ভাবিস না, আমার এক ভাগ্নে আছে আর্ট কলেজে পড়ে। ও পারে না এমন কাজ নেই। অলরেডি ওকে আমি বলেওছি। ও কাজ শুরু করে দিয়েছে।

-দ্যাটস গ্রেট। 

-আচ্ছা আরেকটা কাজ আছে

-কি?

-আমাদের দু’জনকেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। 

-কি বলছিস? গফুর সাহেবের চোয়াল ঝুলে পড়ে। ‘ফেসবুকের বিরুদ্ধে নেমে ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট করব মানে? মরে গেলেও না... নেভার!’

-আরে বাবা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে। নইলে আমরা প্রচারটা করব কীভাবে? মানুষ জানবে কীভাবে? ইভেন্ট খুলতে হবে... বুস্ট করতে হবে। ম্যালা কাজ আছে। তুই ভাবিস না আমার মেয়ে মুন্নিকে বললে সব করে দিবে। 

-কিন্তু , বখতিয়ার...

-দেখ গফুর এর মধ্যে কে নো কিন্তু নেই। নো ওয়ে... নাচতে নেমে খ্যামটা দিলে হবে না। 

-খ্যামটা না শব্দটা হবে ঘোমটা

-ওই হলো, যাহা বাহান্ন তাহাই সাতান্ন...

শেষ পর্যন্ত দুই বন্ধুর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হলো। ইভেন্টও খোলা হলো একটা। বেশ সাড়াও পড়ে গেল। পাশাপাশি ফেসবুক প্রেমিকরা অবশ্য গালাগালও শুরু করে দিল। তবে সাতশ বিশজনের মতো লাইক দিয়েছে ওদের এই ইভেন্টে, সহমত প্রকাশ করে কমেন্ট করেছে দেড়শজনের মতো এবং বলেছে প্রেসক্লাবের কুশপুত্তলিকা দাহ প্রোগ্রামে তারা অতি অবশ্য আসছে। 

-ব্যাস হয়ে গেছে। আমাদের আন্দোলন ১০০% সাকসেসফুল। 

-তা আর বলতে। কুশপুত্তলিকা হাতে এসেছে? 

-কবেই, এবার জাকারবার্গ শেষ। তাহলে পরশু আমরা যাচ্ছি। আমরা একটু আগে যাব। আর ফেসবুকের সাতশ বিশ আর দেড়শ মোট আটশ সত্তর জন ...ওদের টাইম দিয়েছি ঠিক ৮টায়। 

-ওকে, ইয়ে তোর কি মনে হয় নিউজ হবেতো?

-কি বলছিস? প্রেস ক্লাবের গেটের কাছে আটশ নয়শ পাবলিক যখন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়াবে ফেসবুকের বিরুদ্ধে, তখন ভাবতে পারিস কি ঘটবে? তারপর যখন জাকারবার্গের কুশপুত্তলিকা জ্বলে উঠবে। 

পরশু দিন মানে সোমবার, সকাল ৭টায় দুই বন্ধু জাকারবার্গ গলায় লেখা একটা কাকতাড়ুয়ার মতো পুতুল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে হাজির হলো। গফুর গলা খাকারী দিয়ে বলল

-বখতিয়ার একটা সমস্যা হয়েছে

-কি সমস্যা? 

-নীলক্ষেতে কারেন্ট ছিল না বলে ব্যানারটা প্রিন্ট করতে পারেনি। 

-সমস্যা নেই। আমাদের ফেসবুক ফ্রেন্ডরাও কয়েকটা বড় ব্যানার নিয়ে আসবে, কথা হয়েছে। ওদের বলে দিয়েছি হাতে লিখে পোস্টারও নিয়ে আসতে। ভাবিস না। একটা তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যাবে আজ। কটা বাজে দেখতো

-পৌনে আট। 

-আর পনের মিনিট। দেখবি রাস্তায় জ্যাম লেগে যাবে। 

সোয়া ১০টা বাজে। দুই বন্ধু প্রেস ক্লাবের গেটের সামনে দর দর করে ঘামছে। আশপাশে কাকপক্ষিও নেই। একটা ছোট্ট টোকাই অবশ্য আগ্রহ করে জাকারবার্গের পুতুলটা দেখছে। এক পর্যায়ে বলেই বসল ‘পুতুলডা আমারে দিবাইন?’ 

-বখতিয়ার

-কি?

-পুতুলটা ওকে দিয়ে দে

-তাই? দিয়ে দিব? কিন্তু ...

-কোনো কিন্তু না। কেউ আসবে না। ফেসবুক ফ্রেন্ড সব আসলে মনে হচ্ছে ফেক ফ্রেন্ড! 

ছোট পিচ্চিটা জাকারবার্গকে কাঁধে নিয়ে রওনা হয়েছে। ওদিকে দুই বন্ধুও রওনা হয়েছে রিকশায় তাদের বাসার দিকে। দু’জনেই নিশ্চুপ। রোদ মরে গিয়ে আকাশে মেঘ করেছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। বলতে না বলতেই ঝম ঝম বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দুই বন্ধু একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। এই অবস্থায় একটা সেলফি তুলে ফেসবুকে দিলে কেমন হয়? দু’জনেই ভাবে। কয়টা লাইক পড়ে দেখা যেত। তবে কেউই পকেট থেকে ফোন বের করে না। ঝম ঝম বৃষ্টির মধ্যে রিকশা এগিয়ে চলে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh