বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২১, ০৮:২৫ পিএম
বাজেট ঘোষণা করেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
বরাদ্দবিহীন বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কোন প্রকার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই জুম কনফারেন্সের মাধ্যমে মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) বিকেলে ৪১৫ কোটি ৭২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৬ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
সেই সাথে গত অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বিপরিতে ১২১ কোটি ৯৬ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৮ টাকার সংশোধিত এবং চূড়ান্ত বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র। সে হিসেবে গত অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটের ২৮ দশমিক ৫২ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে।
এদিকে, ‘মঙ্গলবার ঘোষণা হওয়া বাজেট বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৯তম এবং বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ্’র তৃতীয় বাজেট। এর আগে গত বছর ৩ আগস্ট বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ করোনা পরিস্থিতির কারণে ভার্চুয়ালি ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করেন।
দুই বছরের বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবারের প্রস্তাবিত বাজেট গত ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটের থেকে ১১ কোটি ৯০ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৭৯ টাকা কম। গত অর্থ বছরে বাজেটের আকার ছিল ১২৭ কোটি ৬২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।
বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। তার এই লক্ষকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা কাজ করছি। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বরিশাল নগরী আধুনিক শহরে রূপ নিবে।
মেয়র বলেন, ‘ইতোপূর্বে বাজেট ঘোষণা হতো বিভিন্ন দান এবং সহায়তা নির্ভর। কিন্তু আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নিজস্ব আয় নির্ভর বাজেট ঘোষণা করে আসছি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহী নিশ্চিত করায় গত তিন বছরে সিটি করপোরেশনে নিজস্ব আয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, গত তিনটি বাজেট পাশ না হলেও সরকারি কোন বরাদ্দ ছাড়াই সিটি করপোরেশনের নিজস্ব আয়ে বরিশাল সিটির উন্নয়ন করেছি। পাঁচ বছরের চুক্তিতে রাস্তা নির্মাণ করেছি। পাঁচ বছরের মধ্যে রাস্তার কোন ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই তা তাদের নিজস্ব খরচে সংস্কার বা মেরামত করে দিবে। যা দেশের কোন সিটিতেই এর আগে করে দেখাতে পারেনি। আমরা নিজস্ব আয়ে নগর পরিচ্ছন্নতা, খাল রক্ষায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং ড্রেজেন ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। এ কারণে বরিশাল সিটিতে এখন আর বৃষ্টি হলে আগের মতো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সৃষ্টি হলেও তা অল্প সময়ের মধ্যেই নেমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের খাতভিত্তিক আয় বেড়েছে। যা দিয়ে আমরা নগর উন্নয়নের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন দিয়ে আসছি। আগে সিটি করপোরেশনে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসের পর মাস বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ে ছিলো। কিন্তু এখন কোন কর্মচারী তা বলতে পারবে না। বরং আমি আসার পরে সিটি করপোরেশনের খাতভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি উৎসব ভাতাও দিয়েছি। পূর্বের কোন মেয়র করতে পারেনি।
এদিকে সিটি করপোরেশনের বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবারের ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ২২ টাকা। সরকারি অনুদান (রাজস্ব) ৯ কোটি ৮১ লাখ ১ হাজার ৯৬০ টাকা। সরকারি থোক বরাদ্দ ২০ কোটি টাকা এবং সরকারি বিশেষ অনুদান ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। এর বাইরে সরকারি ও দাতা সংস্থার সাহায্য হিসেবে আরও ২১১ কোটি ১২ লাখ ২১ হাজার ৪৩২ টাকা আয় দেখানো হয়েছে।
বাজেট বয়ে উন্নয়নখাতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায়ও খাত ভিত্তিক মাত্র ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর বাজেটের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৩৪৯ কোটি ৮৮ লাখ ৯১ হাজার ২৩৪ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে উন্নয়নখাতে।
এর বাইরে রাস্তাঘাট, ড্রেন, ব্রিজ-কালভার্ট, পুকুর ও খাল সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন স্থাপনে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ ও সংরক্ষণ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬৪ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৯৯৮ টাকা এবং প্রশাসনিক ও অফিস পরিচালনা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এছাড়া বর্জ ব্যবস্থাপনা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা, সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণমূলক খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ কোটি ৬৯ লাখ ৩৮০ কোটি টাকা।
অপরদিকে, ‘পানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯ কোটি ১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪৮ টাকা, পরিবেশ উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন খাতে ৫ কোটি ৭০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৩৩ টাকা, শিক্ষা, সংস্কৃতিক, খেলাধুলা, তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং বিবিধ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা।
মঙ্গলবার বিকালে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বাজেট অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ছাদেকুল আরেফিন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বর্তমান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তার মেয়াদের তৃতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। এর আগে দায়িত্ব গ্রহণের পরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নগর ভবনের সামনে ব্যাপক আয়োজন করে উন্মুক্তভাবে প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন। কিন্তু প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় ঘোষণা করা প্রস্তাবিত বাজেটের কোনটিই পাশ করেনি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ- একনেক। এ কারণে বরিশাল সিটি করপোরেশনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। তবে তৃতীয় দফায় ঘোষণা করা প্রস্তাবিত বাজেট প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একনেক অনুমোদন দিবে বলে আশাবাদী নগরবাসী।