নিরাপদ সড়ক আন্দোলন

শিক্ষার্থীরা মামলা থেকে মুক্তি পায়নি তিন বছরেও

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২১, ০৩:৩১ পিএম

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন

তিন বছর আগে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার মামলার বিচার শেষ হয়েছে; কিন্তু নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এখনো হয়রানির শিকার। তাদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো এখনো নিম্ন আদালতে ঝুলে আছে। আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীকে। গত তিন বছরেও এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি পুলিশ। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা মামলার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মামলা থাকায় পাসপোর্ট হচ্ছে না জামিনে থাকা শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের নামে মামলা থাকায় তারা সরকারি চাকরি পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন নানা ভোগান্তির শেষ নেই তাদের।

সব মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন, এমন কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছেন, গ্রেফতারের পর অনেকে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এখন যুদ্ধটা করছেন নিজেরাই। কেউ কেউ চাকরি না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মামলার তথ্য থাকায় কারও পাসপোর্ট হয়নি, কারও কারও জন্য মামলার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা এই সমস্যার সুরাহা চান।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কয়েকটি মামলা স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। তবে নিম্ন আদালতে অনেক মামলা তিন বছর ধরে চলমান রয়েছে। পুলিশ এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের আদালতে তারিখে তারিখে হাজিরা দিতে হয়। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে এ মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে পুলিশ বিলম্ব করছে। 

তিনি আরও বলেন, মামলাগুলো ভিত্তিহীন। শুধু শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও চাপ দেওয়ার জন্য মামলা হয়েছে। এ জন্য তদন্ত কাজ শেষ করছে না পুলিশ। ছাত্ররা তখন বলেছিলেন, তারা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য এ আন্দোলন করেছেন। তাদের দাবিগুলো ছিল যৌক্তিক; কিন্তু সেই দাবিগুলো আজও সুরাহা হয়নি। বরং শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে আছেন।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না। তারপরও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, তাদের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। ওয়ারেন্টের ভয়ে তারা এখন নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছে। পুলিশ অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে চার্জশিট থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীর নাম বাদ দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সব আন্দোলনেই ছাত্রদের ভূমিকা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন বাচ্চারা তাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এরপরও তাদের হয়রানি বন্ধ হচ্ছে না। 

গ্রেফতার হয়ে জামিনে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের লেখাপড়া শেষ হয়ে গেছে। সম্প্রতি সরকারি কর্ম কমিশনসহ (পিএসসি) কয়েকটি সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। আবেদন ফরমে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি-না, তার উল্লেখ করতে হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, তিনি মামলার কথা উল্লেখ করলে কোনো প্রতিষ্ঠান কি তাকে চাকরি দেবে?

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, শিগগির এসব মামলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তদন্ত বিলম্বিত হওয়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে তদন্ত কার্যক্রম কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। 

জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই জাবালে নূর পরিবহনের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল করিম (রাজীব) ও দিয়া খানম (মীম) নিহত হয়। এরপরই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তৎকালীন নৌ মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়। ঢাকায় ৪ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান সরকারি দলের কিছু নেতা-কর্মী। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং এর পরদিন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর একই কায়দায় হামলা চালানো হয়। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ অবস্থাতেই হামলার শিকার হন। আর পুলিশ নামে-বেনামে শত শত শিক্ষার্থীকে আসামি করে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা করে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্রসহ শত শত শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়। অন্যদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হয় বুয়েটের শিক্ষার্থী দাইয়ান নাফিস প্রধানসহ ৪০ জন এবং অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে। এসব মামলার বাদী হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও র‌্যাব।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh