হার্ট অ্যাটাকের আগে জানান দেয় শরীর, উপসর্গগুলো...

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২১, ০১:২৩ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

যখন হৃদপিণ্ডের কোনো শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি করে তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টোরলের সমস্যা, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ- এগুলো মূলত হার্ট অ্যাটাকের কারণ। 

অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক হলেও সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব হয় না। সমস্যা হল কখনো কখনো বুকে কোনো ধরনের ব্যথা ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কিনা তা খুব ভাল করে বোঝা যায় না। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যায় হৃদরোগ ও স্ট্রোকের কারণে। বয়স ৪০ হওয়ার পর সাধারণত, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ শোয়েব মোমিন মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে শহুরে জীবনে সাধারণত যথেষ্ট পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম করা হয়ে ওঠে না। যার ফলে ডায়বেটিস, হার্টের রোগ, স্ট্রোক, প্যারালাইসিসের ঝুঁকি বাড়ে ও শরীরে কোলস্টোরেলের মাত্রা বেড়ে যায়। এ কারণে চল্লিশোর্ধ প্রত্যেক ব্যক্তির নিয়মিত কিছু রুটিন স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা উচিত। 

অনেকে মনে করেন ছেলেদের হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেশি। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি থাকে। তবে হৃদযন্ত্রে কোনো রকম জটিলতা তৈরি হলে, তা আগাম জানান দেয় শরীর। আর হার্ট অ্যাটাক এক নীরব ঘাতক। যে কেউ যেকোনো সময় এর শিকার হতে পারেন। এর লক্ষণগুলো জানা থাকলে একটি জীবন হয়তো বাঁচিয়ে দেয়া সম্ভব।

তাই জেনে নেয়া যাক হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে :

১. শ্বাস-প্রশ্বাসে যদি কষ্ট হয়, তা হলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে। শ্বাস নিতে কষ্ট হলে, দম আটকে আসলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। হৃদযন্ত্রের কোনো রকম সমস্যা হলে ফুসফুসও অক্সিজেন কম পায়। তাই এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

২. কোনো কারণ ছাড়াই ঘাম হচ্ছে? একটুতেই হাঁপিয়ে যাচ্ছেন? তা হলেও দুশ্চিন্তার কারণ রয়েছে। শরীরে রক্ত চলাচল ঠিকঠাক না হলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক করে অক্সিজেন পায় না। তাই হাঁপ ধরতে পারে।

৩. যদি মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখেন দরদর করে ঘামছেন, তা হলে উপেক্ষা করবেন না।

৪. অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকে ব্যথা অনুভূত হয় না। এ ক্ষেত্রে বুকে অস্বস্তিকর অনুভূতি এবং বুকে চাপ ধরা ভারি ভাব অনুভব করার বিষয়টিতে নজর দিতে হবে। এই সময় শ্বাস নিতেও সমস্যা হতে পারে। তাই বুকে ব্যথা বা চাপ লাগার মতো অনুভূতি হলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানান।

৫. একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের আগে থেকে বেশিরভাগ আক্রান্তরই বদহজমের সমস্যা ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও বুক জ্বালা যা আমরা অনেকে স্বাভাবিক বদহজমের সমস্যা ভেবে অবহেলা করি, তা-ও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত। এর পাশাপাশি আচমকা কোনো কারণ ছাড়াই মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব হলে বিষয়গুলো অবহেলা করবেন না।

৬.  শুধু বুকে ব্যথাই নয়, শরীরের অন্যান্য বিশেষ কিছু অঙ্গে ব্যথা অনুভব হওয়াও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। পেটের উপরের অংশ, কাঁধ, পিঠ, গলা, দাঁত ও চোয়াল এবং বাম বাহুতে হুট করে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া বা চাপ অনুভব অথবা আড়ষ্টতা অনুভব করাও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। তাই এই বিষয়গুলিকে মোটেই অবহেলা করবেন না।

৭. মেয়েদের ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ আলাদা। বুকে ব্যথা, ঘাম হওয়া বা হাঁপ ধরা ছাড়াও পেটে অস্বস্তি, পিঠে ব্যথার মতো কিছু অন্যান্য লক্ষণও দেখা দিতে পারে। এছাড়া বমি বমি ভাব, চোয়াল ও মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়।

৮. বুকের ব্যথা বাম হাতে স্থানান্তরিত হওয়াকে সবসময়েই হ্যার্ট অ্যাটাকে লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে শুধু বাম হাত নয়, ডান হাতে ব্যথা স্থানান্তরিত হওয়াও হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাভাস হতে পারে। রোগীরা এই ব্যথাকেও প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হওয়ার সাথে তুলনা করেন।

৯. অনেক রোগীর মাথা হালকা হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়। এই অনুভূতির সঙ্গে রোগীর মনে হয় সে শিগগিরই জ্ঞান হারাতে যাচ্ছে। এর কারণ হল মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছাতে পারছেনা। হৃৎস্পন্দনের তাল হারানো, হৃদযন্ত্রের রক্ত সরবরাহের ক্ষমতা নষ্ট হওয়া ইত্যাদির কারণে হার্ট অ্যাটাক হওয়া রোগীর মাথা হালকা হয়ে আসার অনুভূতি হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh