মান নিয়ে শঙ্কা

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পাবলিক পরীক্ষা

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২১, ১১:২৫ এএম

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পাবলিক পরীক্ষা

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পাবলিক পরীক্ষা

অটোপাস ঠেকাতে এবার এসএসসি-এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী শুধু গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা নেবে সরকার। এতে এবারও শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উচ্চ শিক্ষা ভর্তির ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হতে পারে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত পরিসরের এই পরীক্ষা নিয়ে নানা উদ্বেগ ও শঙ্কা রয়েছে। এরপরও অটোপাসের চেয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মূল্যায়ন ভালো বলছেন তারা। 

জানা যায়, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষা হবে না। এতে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীরা কীভাবে ভর্তি হবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন অনেকে। কারণ এইচএসসির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা সাধারণত বায়োলজিকে চতুর্থ বিষয় হিসেবে রাখে। কারণ মেডিকেলে পড়ার জন্য বায়োলজি বিষয়টি থাকতে হবে। এখন যদি বায়োলজিতে পরীক্ষা দিতে না পারে, তাহলে তারা কি মেডিকেলে পরীক্ষা দিতে পারবে, এমন বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষার্থীদের মনে।

ঢাকা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ আল হাসান বলেন, সে মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছে। এখন সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বায়োলজি বিষয়ের পরীক্ষা না হলে মেডিকেলে ভর্তি কীভাবে হবে? এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছে সে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, এইচএসসির কোনো শিক্ষার্থীর বায়োলজি চতুর্থ বিষয়, অথচ এসএসসিতে কৃষি শিক্ষা ছিল তার চতুর্থ বিষয়। ওই শিক্ষার্থী এসএসসির চতুর্থ বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিল, এইচএসসির চতুর্থ বিষয় বায়োলজিতেও তাকে একই নম্বর দেওয়া হবে। ওটা তার বায়োলজির নম্বর হিসেবে যুক্ত হবে। তার মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব জায়গায় ওই নম্বরই গ্রহণযোগ্য হবে। আবশ্যিক বিষয়গুলোতেও একইভাবে নম্বর দেওয়া হবে।

জানা যায়, দেশে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও সমমান এবং এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। এর মধ্যে গত বছর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া গেলেও, এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীরা সাত মাস এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পাঁচ মাস ধরে দিন গুনছে পরীক্ষার টেবিলে বসার জন্য। 

সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ছোট পরিসরে আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি এসএসসি এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে শিক্ষা বোর্ডগুলো সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। 

ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার অভিভাবক নজমুল হক সরকার বলেন, তার সন্তান নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। সে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছে। উচ্চশিক্ষায় ভালো করার জন্য নবম-দশম শ্রেণিতে ভালো পড়াশোনা করা খুবই জরুরি; কিন্তু সে ভালোভাবে ক্লাস পরীক্ষা ও পড়াশোনাতো করতেই পারেনি। এখন সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দেবে। এতে তার সঠিক মূল্যায়ন সে নিজেই করতে পারবে না। এ ছাড়া এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলে তার জীবনে অনেক ক্ষতি হবে। রাজধানীর এই স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সে ভালো ফলাফল করেছে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, আমরা যেভাবেই হোক পরীক্ষা নিতে চাই, যাতে এ বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কেউ অটোপাসের অপবাদ না দিতে পারে। এরই মধ্যে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। সংক্ষিপ্ত পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ হয়েছে। কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা নেওয়াও শেষের পথে। আশা করছি, নভেম্বরে করোনার সংক্রমণ অনেকটাই কমে আসবে। ফলে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে পারব।

জানা যায়, পরিস্থিতি অনুকূলে এলে এবার এসএসসি ও এইচএসসি উভয় ক্ষেত্রেই গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে। অর্থাৎ এইচএসসিতে যদি কোনো শিক্ষার্থীর নৈর্বাচনিক বিষয় পদার্থ, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত থাকে, তাহলে তাকে এই তিন বিষয়ের ছয়টি পত্রে পরীক্ষা দিতে হবে। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হবে দেড় ঘণ্টায়। রচনামূলক অংশে নম্বর থাকবে ৩৫ ও এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন) থাকবে ১৫ নম্বরের। তবে প্রশ্নপত্র এখন যেভাবে হয়, সেভাবেই হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বাছাই করার ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ থাকবে। যেমন- আগে যেখানে ১০টি প্রশ্নের মধ্য থেকে ৮টির উত্তর দিতে হতো, সেখানে এখন সেই ১০টি প্রশ্নই থাকবে। তবে এর মধ্যে চারটির উত্তর দিতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ বেড়ে যাবে। আর প্রতি বিষয়ে মোট ১০০ নম্বরের বদলে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। তবে ৫০ নম্বরকে ১০০ তে রূপান্তর করে পরীক্ষার ফল দেওয়া হবে। এবার আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, আইসিটি ও ধর্ম এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে না।

বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের একাধিক শিক্ষক বলেন, অটোপাস দেওয়ার চেয়ে এই সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা অবশ্যই ভালো। তবে ছোট সিলেবাসের আলোকে যে পরীক্ষা হবে তা একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর এক মাসের পড়া। তবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য এই সিলেবাস ঠিক আছে। আর যেসব বিষয়ে পরীক্ষা হবে না, সেগুলো পড়াও শিক্ষার্থীরা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh