কুষ্টিয়ায় পাটের বাম্পার ফলন, দাম পেয়ে খুশি কৃষক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২১, ০১:১৩ পিএম

কুষ্টিয়ায় পাটের বাম্পার ফলন

কুষ্টিয়ায় পাটের বাম্পার ফলন

কুষ্টিয়ায় চলতি মৌসুমের শুরুতেই সোনালি আঁশ পাটের মূল্য গত বছরের চেয়ে বেশি। ভালো মূল্য পাওয়ায় এ জেলার ছয় উপজেলার কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক। করোনার সংকটময় সময়ে স্বস্তি ও খুশিতে আত্মহারা পাটচাষিরা। এতে কৃষক পরিবারে বইছে আনন্দ। সব শঙ্কা কাটিয়ে এবার হাসি ফুটেছে হাজারো পাটচাষির মুখে। 

কুষ্টিয়ায় পাট প্রধান চাষ এলাকা সদর, মিরপুর, দৌলতপুর, খোকসা উপজেলার কৃষকরা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর পাটের দাম বেশি। গত বছর এ সময় প্রতি মণ পাটের দাম ছিল এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু এ বছর মৌসুমের শুরুতেই বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৯০০ টাকায়। 

প্রতি বিঘায় শুধু পাট বিক্রি করেই কৃষক লাভবান হচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সেই সাথে পাটখড়ির দাম যুক্ত করলে প্রতি বিঘায় এখন কৃষকের লাভ হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলায় এ বছর এক লাখ এক হাজার ২৮৪ একর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের থেকে ৩০ ভাগ বেশি জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। প্রতি বিঘায় আট থেকে ১০ মণ পাট উৎপাদিত হচ্ছে। 

জমিতে দেশি, রবি-১, মোস্তা, জেআরও এবং তোষা জাতের পাট চাষ করা হয়েছে। তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে পাট কাটা, জাগ দেয়া, পাটখড়ি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্তসময় পার করছেন কুষ্টিয়ার চাষিরা। বৃষ্টিতে নদী-নালা, খাল-বিল ও ডোবাতে পানি থাকায় পাট জাগ দেয়ায় কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের। গত বছরের তুলনায় আবহওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের চাষ বেড়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকায় পাটচাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ জমি থেকে পাট কাটছেন, কেউ পাটের বোঝা বাঁধছেন, কেউ কেউ মাথায় করে সেই বোঝা নিয়ে যাচ্ছে নদী-খাল কিংবা পুকুরে। আবার অনেক জায়গায় পাট জাগ দিচ্ছেন কৃষকরা। অনেকে আঁশ ছাড়িয়ে, পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে বিক্রির জন্য বাজারে নিচ্ছেন।

মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ভারোল গ্রামের কৃষক জয়নাল আলী বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছরে পাটের দাম বেশি। গত পাটের মণ ছিল এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। এবার আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা মন হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া এবার পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। এতে আমরাও খুব খুশি। 

দৌলতপুর উপজেলার কৃষক হামিদুর হক বলেন, এ বছর চার বিঘা পাটের চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ১২ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। খরচ বাদে ডাবল লাভ হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় আমরা লাভবান।

মিরপুর উপজেলার চাষি খাদেমুল ইসলাম বলেন, গত বছর দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। তাতে ১২ মণ পাট উৎপাদন হয়েছিল। এবার দুই বিঘায় ২০ থেকে ২২ মণ পাট ঘরে তুলেছি। এবার ভালো লাভ হয়েছে। কারণ আগের বছরের চেয়ে দামও বেশি, ফলনও বেশি। 

এলাকার কৃষকরা জানান, বিগত বছরের তুলনায় দাম ভালো পেয়েছেন তারা। ফলনও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়াও উপযোগী ছিল। ভালো দাম পেলে আগামীতেও আগ্রহ বাড়বে। ফলে পাট চাষ বাড়বে। পাটের সাথে সাথে পাটখড়ির চাহিদাও বেশি। প্রতি বিঘায় প্রায় পাঁচ হাজার টাকার পাটখড়ি পাওয়া যায়। সব মিলে চাষিরা খুশি। জ্বালানির কাজ ও বেড়া দেয়ার কাজে পাটখড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ জন্য দিন দিন পাটখড়ির দাম ও চাহিদা বাড়ছে। 

কুষ্টিয়া জেলা পাট অধিদফতরের মুখ্য কর্মকর্তা সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস জানান, গত বছর কৃষকরা সর্বশেষ দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত মণ হিসেবে পাট বিক্রি করেছেন। যখন পাট ওঠে তখনও এক হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছেন। এবারে পাটের দাম শুরু থেকেই আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা মন হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। 

তিনি আরো জানান, কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে তাদেরকে সহায়তা করা হয়ে থাকে। এছাড়াও আমরা নিয়মিত পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারকির পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকি। এছাড়াও কুষ্টিয়ার খাজানগরে বৃহত্তম চালের মোকাম থাকায় পাটের বস্তার ব্যবহার বাড়ার ফলে এ জেলায় পাটচাষও বাড়ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড.হায়াত মাহমুদ জানান, গত বছরের চেয়ে উৎপাদন, চাষের পরিমাণ ও দাম এ বছর বেশি। পাট চাষের উপযোগী আবহাওয়ার ফলে ফলন বেশি পেয়েছেন কৃষক। বাজারে পাটের দাম ভালো যাচ্ছে। আশা করি আগামী বছর কৃষকরা পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন। আগামীতে আবাদ আরো বাড়বে। 

তিনি আরো জানান, পাট অধিদফতর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাট চাষিদের প্রণোদনা প্রকল্পের মাধ্যমে পাট বীজ, রাসায়নিক সার দেয়া হয়েছে। মূলত পাটের দাম ভালো হওয়ায় চাষিরা পাট চাষে বেশি আগ্রহী হয়েছেন। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh