হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ড ‘কাঠামোগত হত্যা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২১, ১১:২৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনাকে ‘কাঠামোগত হত্যা’ বলে অভিহিত করেছে নাগরিক তদন্ত কমিটি।

মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশিষ্ট ১৯ নাগরিককে নিয়ে গঠিত এ কমিটি।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারখানার মালিক এবং সরকারের কলকারখানা, প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়ী করেছে কমিটি। এছাড়া কমিটি বেশ কয়েকটি সুপারিশও করেছে।

সংবাদ সম্মেলেন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, তাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে- ছয়তলা ভবনের কোথাও স্মোক ডিটেকটর, ফায়ার অ্যালার্ম ও জরুরি বহির্গমনের ব্যবস্থা ছিল না। সংশ্লিষ্ট যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের তদারকির দায়িত্ব ছিল, সেই দায়িত্ব যথাযথ পালন হয়নি। কারখানাটির বিভিন্ন ধরনের ছাড়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের অনিয়ম ছিল। ভবনের চারতলায় সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া গেছে। কারণ, সেখানে পেছনের গেটে তালা লাগানো ছিল। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার দফায় এ কারখানায় সেফটি প্ল্যান ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে নোটিশ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে কারখানাটির ত্রুটিপূর্ণ ফায়ার সেফটি প্ল্যানকে সাময়িকভাবে অনুমোদন দেয় তারা।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, কারখানার শ্রমিকদের বেশিরভাগই ১৪ বছরের কম বয়সের। শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হতো কারখানায়। এভাবে শিশুদের শ্রমে নিয়োজিত করে কারখানা কর্তৃপক্ষ এ দায় এড়াতে পারে না।

তিনি বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতি নিহতের পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে দিয়ে তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নিয়েছে- তাদের আর কোনো দাবি-দাওয়া নেই। মানুষের জীবনের ক্ষতিপূরণ দুই লাখ টাকা হতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এ ধরনের যত ঘটনা ঘটেছে, তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ীদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে।

সুপারিশ

কারখানায় দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে নাগরিক কমিটি। এর মধ্যে রয়েছে- হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা; কারখানা ভবনের নকশা অনুমোদন, অগ্নিনির্বাপণ ও শ্রম আইনের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেনি, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; শ্রম আইনের বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে নিহত, আহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারপ্রতি যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা; কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ সব প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শকের সংখ্যা ও দক্ষতা বাড়ানো; অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা; শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করা; কর্মস্থলে চিকিৎসাব্যবস্থা বাধ্যতামূলক; শিশুশ্রম নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

গত ৮ জুলাই বিকেলে হাসেম ফুডস কারখানার ছয়তলা ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শিশুসহ ৪৯ জন পুড়ে মারা যান। ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যান আরও তিনজন। তবে নাগরিক কমিটির দাবি, ৫৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh