ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৩৩ এএম

রূপালী ইলিশ

রূপালী ইলিশ

সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার দেড় মাস পর চলতি সপ্তাহে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রূপালী ইলিশ। ফলে বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। আনুপাতিক হারে কমেছে দাম। ফলে সাধারণ মানুষের অনেকটাই ক্রয়ক্ষমতার কাছাকাছি এসেছে রূপালী ইলিশ। ইলিশ রক্ষায় সরকারের নেয়া উদ্যোগের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।    

মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে- ইলিশ রক্ষায় সরকার তিনটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রথমত, ডিম ছাড়ার জন্য প্রজনন মৌসুমে (আশ্বিন মাসে পূর্ণিমার আগে ও পরে ২২ দিন) ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। আগে যদিও ১১ দিন ছিলো, পরে তা বাড়িয়ে ১৫দিন, এবং পরবর্তীতে তা আরো বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের ৩১ মে মাস পর্যন্ত জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তৃতীয়ত, দেশের ৬টি এলাকাকে ইলিশ অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ইলিশের জন্য অভয়াশ্রমগুলো হলো- পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার। চরইলিশার মদনপুর থেকে ভোলার চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার। ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার।  চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার। শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত নিম্ন পদ্মার ২০ কিলোমিটার এবং বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার, হিজলার মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার। এ সীমানার মধ্যকার নদ-নদী হচ্ছে- কালাবদর, আড়িয়ালখাঁ, নয়ভাঙ্গুলী, গজারিয়া ও কীর্তনখোলা।

সূত্র জানায়, যখন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে সেসময় জেলেদের মাসে ৪০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেয় মৎস্য অধিদফতর। মার্চ মাসে নদীতে জাটকার প্রাচুর্য সবচেয়ে বেশি থাকে বলে এ মাসে পালন করা হয় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ।

ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশের ইকোফিশ প্রকল্পের অধ্যাপক আবদুল ওহাব তার এক গবেষণায় জানিয়েছেন, মা ও জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ করা, অভয়াশ্রম বাড়ানো ও জেলেদের সুরক্ষা দেয়ায় এই সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশে এখন ৬ লাখ টনেরও বেশি ইলিশ উৎপাদন হচ্ছে। আগে যেখানে ৩ লাখ থেকে সোয়া তিন লাখ টন ইলিশ পাওয়া যেতো।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, মেঘনা নদীতে প্রতি ১০০ মিটার জালে ঘণ্টায় ২ দশমিক ৭৭ কেজি জাটকা ধরা পড়েছে, যেখানে ২০০৭ সালে ধরা পড়ত এক কেজিরও কম (০.৭২ কেজি)।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মা ইলিশ রক্ষার অভিযান আরো কঠোরভাবে পালন করা উচিৎ। কারেন্ট জালের উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা উচিৎ এবং মাছ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো উচিৎ।

হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে এখন উৎসবের আমেজ। ঘাট চলতি সপ্তাহে জেলে ও ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা সাগরে গেলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে জালে ওঠেনি ইলিশ। এতে হতাশ ছিলেন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত এক সপ্তাহে পাল্টে গেছে এখানকার চিত্র। সাগর থেকে ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। ঘাট থেকে মোকামে তোলা হচ্ছে ছোট-বড় ইলিশ। ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক ও কেনাবেচায় সরগরম হয়ে উঠে এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি। অনেক ব্যবসায়ী কাঙ্ক্ষিত দাম পেয়ে ট্রাকে করে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন ইলিশের চালান।

বঙ্গোপসাগর থেকে ১৪ দিন পর ঘাটে ফিরেছে আল্লাহর দান ফিশিং বোট। বড় মাছ পেয়ে খুশি বোটের আমিন মাঝি। বড় ইলিশ মাছ পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন যে ইলিশ পাইতেছি তা দেড় কেজির ওপরে। ছোট ইলিশ কম পাচ্ছি। বড় পাছ পাওয়ায় দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

গভীর সমুদ্র থেকে ফিশিং বোট নিয়ে আসা জয়নাল মাঝি বলেন, গভীর সমুদ্রে গেলে বড় বড় মাছ পাওয়া যায়। সেগুলো দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের। মাছগুলোর বয়স দেড় থেকে দুই বছরের। আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো দাম পাচ্ছি।

চেয়ারম্যান ঘাটের ইলিশের বেপারী আমিন আলী বলেন, বাজারে ইলিশের চাহিদা অনেক বেশি। বর্তমানে দেড় দুই বছর বয়সের বড় বড় ইলিশ মাছ আসছে। 

হাতিয়ার হরনী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আরিফ বলেন, হাতিয়া উপজেলায় প্রায় এক থেকে দেড় লাখ জেলে ইলিশ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন মাছের জমজমাট মৌসুম। যখন নিষেধাজ্ঞা থাকে তখন সরকার জেলেদের যে সুযোগ সুবিধা দেয় তাতে জেলেরা মোটামুটি খুশি। তবে তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক জেলে সরকারি সুযোগ সুবিধা পায়। নিবন্ধন নাই এমন জেলের সংখ্যাই বেশি।

হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ইউসুফ বলেন, চেয়ারম্যান ঘাটে এসেছি পরিবারের জন্য মাছ কেনার জন্য। মাছগুলো কমের মধ্যেই পেয়েছি। 

জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাহরাজ বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আমাদের এলাকার জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে গেছে। তারা বড় বড় মাছ পেয়ে অনেক খুশি।

হাতিয়া মৎস্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল বলেন, হাতিয়া উপকূলের ৫০০ ফিশিং বোট সাগরে মাছ আহরণ করে। এক সপ্তাহ ধরে নদীতে অনেক মাছ ধরা পড়ছে। আগে এই উপকূলে মাছ শিকারে গেলে ডাকাতের কবলে পড়তো জেলেরা। কিন্তু বর্তমানে ডাকাত নেই। জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ ধরতে পারছে। সামনে ভরা মৌসুমে নদীতেও অনেক মাছ পাওয়া যাবে।

জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪০ হাজার ৮২ জন। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের মোহনায় মাছ ধরতে জেলেরা আসে। আমরা জেলেদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য তথ্যের হালনাগাদ শুরু করেছি। যেসব জেলেরা পেশা পরিবর্তন করেছে অথবা মারা গেছেন তাদের স্থানে নতুনদের নাম যুক্ত করা হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh