এ শহরের সাক্ষীবৃক্ষ

বুলবুল চৌধুরী

দিদার মিয়া

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:১৪ পিএম | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:২১ পিএম

বুলবুল চৌধুরী। ফাইল ছবি

বুলবুল চৌধুরী। ফাইল ছবি

সদ্য ছেড়ে যাওয়া এ মায়ার দুনিয়ায় একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী এক আলোজ্জ্বলা জোনাকি। সুদীর্ঘকাল ধরে হেঁটে যাওয়া আমাদের শহরের সাক্ষীবৃক্ষ তিনি। লোকপ্রিয় এ মানুষটির কর্মপরিধি দীর্ঘ এক চিরচেনা নদীর মতোই বহমান। বাংলা কথা সাহিত্যে অনেক কালজয়ী রচনার রচয়িতা তিনি। তার রচনার ঢং আলাদা, বয়ন তার নিজস্ব, একেবারে আপনার মতোন। পাঠক মুহূর্তে হারিয়ে যাবেন তার লেখার রাজ্যে। বন্ধু কায়েস আহমেদের অনুপ্রেরণায় লেখার রাজ্যে যেন ঢুকে পড়েন এবং নিজেকে আবিষ্কার করতে থাকেন। 

বুলবুল চৌধুরী এক আলোজ্জ্বলা জোনাকি। সুদীর্ঘকাল ধরে হেঁটে যাওয়া আমাদের শহরের সাক্ষীবৃক্ষ তিনি। লোকপ্রিয় এ মানুষটির কর্মপরিধি দীর্ঘ এক চিরচেনা নদীর মতোই বহমান। বাংলা কথা সাহিত্যে অনেক কালজয়ী রচনার রচয়িতা তিনি। তার রচনার ঢং আলাদা, বয়ন তার নিজস্ব, একেবারে আপনার মতোন। পাঠক মুহূর্তে হারিয়ে যাবেন তার লেখার রাজ্যে

লেখক শব্দটির সঙ্গে অনেকের মিল থাকে কি-না, জানি না- তবে বুলবুল চৌধুরী ছিলেন একেবারে সন্দেহাতীতভাবে লেখক, আমার ধারণা তিনি লেখক হবেন বলেই এসেছিলেন মায়ার দুনিয়ায়। সৃষ্টির মাঝে যে অপার আনন্দ, তা বোধ করি এই চৌধুরীকে দেখলেই বোঝা যায়। বুলবুল ভাই- চমকে যাওয়া এক সন্ধ্যা যেন জীবনানন্দের কার্তিকের মাঠের; তিনি বেশ গল্প বলতে ভালোবাসতেন। নেশায় চুর হয়ে চশমায় তাকাতেন, এ যেন কালের শিল্পী। তাঁর জীবনঘনিষ্ট কবিবন্ধু ছিলেন আবুল হাসান, যার সঙ্গে হেঁটে গেছেন ঢাকার রাজপথ অলিগলি, হাসান কবিতা লিখছেন- বুলবুল গাঁজা টানছেন। অভূতপূর্ব দু-বন্ধুর মিল ছিল, রাত ক’রে স্টেশন যাপন সে যেন ছিল ফ্যাশন। 

কথাসাহিত্যিক বুলবুল খুব যে লিখেছেন, তা নয়, তবে যা লিখেছেন তাও কম কী? টুকা কাহিনী, পরমানুষ, মাছের রাত, চৈতার বউ গো-এর মতো গল্পগ্রন্থ। অপরূপ বিল ঝিল নদী, কহকামিনী, তিয়াসের লেখন, অচিনে আঁচড়িসহ লিখেছেন আরও কিছু চমৎকার উপন্যাস। বুলবুল চৌধুরী ছিলেন- বোহেমিয়ান ধারার মানুষ; কিন্তু তিনি কখনো সমাজচ্যুত ছিলেন না। তার চেতনায় ছিল জীবনকে উপভোগ্য করে তোলার নিরন্তর চেষ্টা। ব্যক্তিমানুষের আটপৌরে চাহিদার গোলাম হওয়ার মানুষ তিনি ছিলেন না। মোটা কাচের চশমায় তিনি দেখতে পেতেন এক হাতের মধ্যে, তবুও কিছু দেখার প্রেরণা পেতেন একটু কষ্ট করে দেখে যেতেন স্টেশনের সন্ধ্যা, গভীর রাত কিংবা মানুষ। 

বুলবুল চৌধুরী ১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা গ্রহণ করেন জগন্নাথ কলেজে। তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি। পেশায় তিনি কোথাও স্থির হতে পারেননি। অসংখ্য চাকরির জায়গা বদলেছেন। সিনেমার পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার, তা আর হয়ে ওঠেনি। আমাদের অদ্বিতীয় অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি ছিলেন তাঁর বন্ধু। আড্ডায় মশগুল ছিলেন দু’জনেই আর অদ্ভুতরকম প্রাণসঞ্চারি। বিনোদন জগতের অধিকাংশ কুশলীই বলবেন- হুমায়ূন ফরীদি কেমন আনন্দজাগানিয়া মানুষ ছিলেন, তেমনি শাদামনের বুলবুল চৌধুরীকেও জানেন সাহিত্যপাড়ার লোকেরা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh