তিস্তার ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

এস কে সাহেদ, লালমনিরহাট

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:৩৯ পিএম

তিস্তার ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

তিস্তার ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গত ১২ দিনের ব্যবধানে হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলায় শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

বসত-বাড়ি হারা মানুষজনের কারও আশ্রয় মিলছে আত্মীয়-স্বজনের জমিতে, কেউ আশ্রয় নিচ্ছেন বাঁধের রাস্তায়, আবার কেউ পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই রয়েছেন। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে শত শত হেক্টর জমির রোপা আমন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনে হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুনা ইউনিয়নের তিস্তা চরের চিলমারীপাড়া গ্রামটির কোনো অস্তিত্ব নেই। চারদিকে থৈ থৈ করছে পানি। প্রচণ্ড স্রোতে একের পর এক ভাঙছে বাড়ি। চরম দুর্ভোগে পড়েছে পরিবারগুলো। হুমকির মুখে পড়েছে জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্লিনিক, মসজিদ ও মাদ্রাসা।

পানিবন্দি ও ভাঙনকবলিত পরিবাগুলো জানায়, গত কয়েক দিন পানিবন্দি থাকার পর শুরু হয় তিস্তার ভয়াবহ ভাঙন। আতঙ্কে ঘর-বাড়ি সরাতে থাকি। এর মধ্যে অনেকের ঘর-বাড়ি প্রবল স্রোতে ভেসে যায়। 

ভাঙনকবলিত সাদেকুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ১৫ দিন আগেও আমার বসত ভিটা ও ফসলি জমি ছিল আর আজ সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চার দিকে পানি আর পানি। এখন পরিবার নিয়া মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এখন ঘর করে কই থাকব, তারও জায়গা নেই। বৃদ্ধা মা ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কই যাব, কি খাব তা একমাত্র আল্লাহ জানে। 

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা মোবারক হোসেন বলেন, ‘কয়দিন আগোতও হামার বাড়ি-ঘর, সংসার আর আবাদি জমি ও ফলের বাগান আছিল। এ্যালা আর হামার কিছুই নাই। এ্যালা যে পরিবার নিয়া কোনটে যাইম কাহো জানে না।’ 

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় লালমনিরহাটের সদর, আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

হাতীবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুনা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, আমার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চিলমারী পাড়ার প্রায় ৩০০ ঘর-বাড়ি নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন এলাকায় জেলা প্রসাশক মহোদয় পরিদর্শন করেছেন। 

তিনি আরও বলেন, এই তিস্তা পাড়ের মানুষের মৌলিক দাবি একটাই তিস্তার বাম তীরে বাঁধ চাই। 

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ভাঙন কোথাও কোথাও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঝূঁকিপূর্ণ স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলছে। 

জেলা প্রসাশক আবু জাফর বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ২১৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় খাদ্য মজুদ রয়েছে। তালিকা করে শিগগির বিতরণ শুরু হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh