থাইরয়েডের সমস্যায় এড়িয়ে চলতে হবে যে খাবারগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:৩২ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মানুষের গলার সামনের দিকে প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থিটির নাম থাইরয়েড। মানুষের বৃদ্ধি, বিকাশ, শারীরবৃত্তিক আর বিপাকীয় নানা ক্রিয়া-প্রক্রিয়া সাধন করার জন্য এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরয়েড হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

মূলত হরমোনের তারতম্যের জন্যেই এই রোগ দেখা যায়। যখন এই গ্রন্থিটি খুব বেশি পরিমাণে কাজ করতে শুরু করে, কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় কম কাজ করে, তখনই এই রোগ দেখা দেয়।

বর্তমানে থাইরয়েড গ্রন্থির নানা সমস্যা বিশ্বে অন্যতম হরমোনজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। হরমোনজনিত রোগের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের পরই এর অবস্থান। 

মূলত নারীরাই এই  সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন।  প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজন কোনো না কোনোভাবে থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত। নারীর জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও সময়ে থাইরয়েড হরমোনের প্রভাব ব্যাপক। এসব সময়ে এই হরমোনজনিত সমস্যা দেখা দিলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে নারীর জীবনের ওপর। 

থাইরয়েড গ্রন্থিতে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। যদি এই গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন হরমোন তৈরিতে ঘাটতি দেখা দেয়, তবে সেটি হাইপোথাইরয়েডিজম। এটি থাইরয়েডের সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা। নারীদের ক্ষেত্রে এটি পুরুষদের তুলনায় প্রায় আট গুণ বেশি হয়ে থাকে। 

হরমোনের ঘাটতি হওয়ার কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অটোইমিউন বা ইমিউন ব্যবস্থার গোলমালের কারণে থাইরয়েড কোষ বিনষ্ট হয়ে এটি হয়। এছাড়া কিছু ওষুধ, থাইরয়েডের অস্ত্রোপচার, বিকিরণ (রেডিয়েশন), প্রদাহ ইত্যাদি কারণে হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে।

হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলে শরীরের থাইরয়েড গ্ল্যান্ড পরিমাণ মতো হরমোন ক্ষরণ করে না। তাই চুল পড়ে যাওয়া, হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া, বিপাক হার কমে ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। 

আর হাইপোথাইরয়ডিজম সাধারণত পুরোপুরি নির্মূল হয় না। তবে কয়েকটি খাবার এড়িয়ে চললে হাইপোথাইরয়ডিজম বা থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

এই অসুখ থাকলে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলাই শ্রেয়, জেনে নেয়া যাক-

১. সয়াবিন বা সয়াবিনজাত সব খাবার

হাইপোথাইরয়ডিজমের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে আইসোফ্ল্যাভোনস, যা থাকে সোয়া, সোয়া মিল্ক ও টফুতে। বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সয়ার খাবার খেলে থাইরয়েডের ওষুধ ঠিক মতো কাজ না-ও করতে পারে। তাই সয়াবিন, সয়ার দুধ, টফুর মতো খাবার মেপে খাওয়াই ভাল।

২. বাঁধাকপি-ফুলকপি

কপির মতো যেকোনো খাবারেও সমস্যা হতে পারে থাইরয়েডের ওষুধে। অনেকেই ওজন ঝরাতে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ব্রোকোলি মতো শাক-সবজি রাখেন ডায়েটে। কিন্তু থাইরয়েড থাকলে এগুলো মেপে খাওয়া বিশেষ প্রয়োজন। কারণ ব্রোকোলি, বাঁধাকপির মতো সবজিতে আছে গোইট্রোজেন আছে। এই উপাদান থাইরয়েড উৎপাদন কমিয়ে দেয়। 

৩. কফি

সকালে এক কাপ কফি না হলে অনেকেরই চলে না। কিন্তু যাদের থাইরয়েড আছে, তাদের জন্য কফি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সকালে উঠে থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার পর যদি চিকিৎসক অনুমতি দেন, একমাত্র তা হলেই ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর মাত্র এক কাপ কফি পান করা যেতে পারে। তবে বেলা বাড়ার পর আর না খাওয়াই ভাল।

৪. মিষ্টি

যেকোনো খাবার যাতে চিনি বা বাড়তি মিষ্টি দেয়া হয়েছে, তা ডায়েট থেকে বাদ দিন। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই চিনি এড়িয়ে চলাই ভাল। চিনির বদলে গুড় বা মধু কিছু রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন।

৫. জাঙ্ক ও প্রসেসড খাবার

থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে প্রথমেই এড়িয়ে চলতে হবে জাঙ্ক ও প্রসেসড খাবার। খেতে ভাল লাগলেও যাদের থাইরয়েডের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এ ধরনের খাবার বিষের সমান। প্যাকেটজাত মাংস, চিপস, কেক বা ক্যান ভর্তি নরম পানীয়র মধ্যে কোনো পুষ্টিগুণ থাকে না। কিন্তু এগুলোর মধ্যে থাকে প্রচুর চিনি আর লবণ। থাইরয়েডে হজম ক্ষমতা কমে যায়, তাই বাড়তি ক্যালোরি কম করা একটা সমস্যা হয়ে যায়।

৬. দুগ্ধজাত খাবার

এখন বেশির ভাগ চিকিৎসকই মনে করেন, দুগ্ধজাত খাবার শরীরে হরমোনের তারতম্য আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই দুধ, মাখন, চিজের মতো খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। তবে দই হজমের পক্ষে খুবই উপকারি। দই খাওয়া যাবে কি না, তা এক বার নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নিন।

৭. অ্যালকোহল

থাইরয়েড থাকাকালীন মুড সুইংয়ের সঙ্গে অ্যালকোহলের যোগ আছে। অতি মাত্রায় অ্যালকোহল সরাসরি থাইরয়েড গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে। এতে আচমকা হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায় বা কমে যায়। তাই এড়িয়ে চলা উচিৎ অ্যালকোহলও।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh