স্কুল-কলেজ খুলছে

বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কেন?

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:০৭ এএম

ছবি- সংগ্রহীত

ছবি- সংগ্রহীত

দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শর্তসাপেক্ষে খুলছে স্কুল-কলেজ। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে মেডিকেল সংশ্লিষ্ট কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ও খোলা হবে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

তবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। কারণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সবাইকে টিকার আওতায় এনে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলে আসছিল সরকার; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এখনো টিকা পায়নি, সে বিষয় কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, স্কুল-কলেজ খোলার দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কবে খুলবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক দফা বৈঠকের পর উপাচার্যদের সঙ্গে শিগগির ফের আলোচনায় বসবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এর আগে ভিসিদের সঙ্গে কথা হয়েছিল অন্ততপক্ষে সব শিক্ষার্থী এক ডোজ টিকা নেওয়ার পরে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। সেই আলোকে মধ্য অক্টোবর ঠিক করা হয়েছিল; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এখনো টিকা পায়নি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই উপাচার্যরা ফের বৈঠকে বসবেন। বৈঠক অবস্থা আবারও পর্যবেক্ষণ করে যদি উপাচার্যরা সিদ্ধান্ত নেন যে তারা আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। তাহলে সেভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার বিষয়ে আলোচনা হবে। গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল চালু করার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থও বরাদ্দ দেয় সরকার। তবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আর খোলা হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিদ্ধান্ত তাদের সিন্ডিকেট ও একাডেমিকভাবে হয়ে থাকে, তাই এ সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন; কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে আবারও একটি বৈঠক করব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, প্রভোস্ট কমিটি এবং ডিনস কমিটির মিটিংয়ে গৃহীত রোডম্যাপ অনুযায়ী খোলা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না।

জানা যায়, এর আগে গত ২৪ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভার সুপারিশের আলোকে পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ডিনস কমিটির এক সভায় আগামী অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাবির পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টির সব শিক্ষার্থীকে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর এবং মধ্য নভেম্বরে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের জন্য হল খুলে দেওয়া পরিকল্পনা ছিল। এভাবে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়; কিন্তু টিকা কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অক্টোবরে খুলে দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ঠিক কবে নাগাদ ক্যাম্পাস খোলা হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, নির্ধারিত তারিখ ওরকম নেই। আমাদের মূল পরিকল্পনা হলো- সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের তথ্যগুলো নিয়ে তারপরে তারিখগুলো নির্ধারণ করা- কবে আবাসিক হল, কবে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হতে পারে। তারপরে একটা পূর্ণাঙ্গ সময় দেওয়া যাবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ১৮ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত যখন গৃহীত হয়, তার মধ্যে যাদের এনআইডি আছে তাদের নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে। তারা কী পাবলিক, প্রাইভেট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না-কি সাত কলেজের, সেটা দেখা হয়নি। কাজেই যে কোনো শিক্ষার্থীর বয়স যদি ১৮ বছরের ওপরে হয়, তার এনআইডি থাকলে এখনই তিনি নিবন্ধন করতে পারেন। এখন তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা নিতে পারেন। যার এনআইডি নেই, তার জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাদের বয়স ১২ বছর হয়েছে, তাদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগে বলেছেন ১৮ বছরের অধিক যারা তাদের সবাইকে দিয়ে দেই। সেই কার্যক্রম চলছে। ১২ বছরের অধিক তাদেরও ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। তবে তা যেন ধাপে ধাপে হয়। আর খোলার পর স্বাস্থ্যগত ও শিক্ষা বিষয়ে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি-না, সেটা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পরীক্ষা নিয়ে মাতামাতি করা যাবে না। দুই বছরের পরিকল্পনা নিয়ে সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তাদের মৌলিক দক্ষতাগুলো অর্জনের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ১৩ তারিখ থেকে মেডিকেল কলেজের সশরীরে ক্লাস নেওয়া হবে। তবে তারিখ দু-একদিন হেরফের হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম বর্ষেও শিক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাস নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও সরাসরি ক্লাস নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের টিকাদানের উদ্যোগ : স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। সেক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১২ বছরে আনা হবে। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীরাও করোনাভাইরাস প্রতিষেধক টিকা পেতে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের ১৮টি দেশ শিশুদের করোনাভাইরাস প্রতিষেধক টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে। কয়েকটি দেশে শিশুদের ওপর টিকার ট্রায়াল চলছে। এর মধ্যে বাংলাদেশেও ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের টিকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলে দেশে প্রায় এক কোটির মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। এসব শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে হলে দুই কোটি ডোজের প্রয়োজন। এসব শিক্ষার্থীকে দিতে হবে ফাইজার অথবা মডার্না টিকা। 

তবে স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, ফাইজারের টিকার ১০ লাখ ডোজের মতো সরকারের কাছে মজুদ রয়েছে। আরও ৫১ লাখ ডোজ চলতি মাসেই চলে আসবে। এই টিকা মাধ্যমে ৩০ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরেও সরকারিভাবে ফাইজার ও মডার্নার টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। 

করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, শিশুদের টিকা দেওয়ার পরিস্থিতি এখনো হয়নি। বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের দেখতে হবে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বা বয়স্ক ব্যক্তিদের কমপক্ষে ৫০ শতাংশের টিকা দেওয়ার পর শিশুদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি ভাবতে হবে।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলার প্রস্তুতিতে আমরা খুশি। তবে খোলার পর যেন স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি প্রতিপালিত হয়। 

তিনি আরও বলেন, শ্রেণিপাঠে শিক্ষার্থীদের যেসব ঘাটতি রয়ে গেছে, স্কুল খোলার পর সেসব পুষিয়ে নিতে সরকার যেন দ্রুত একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করেন।

মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, এইচএসসি, এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণি বাদে অন্যান্য শ্রেণির ক্লাস তারা কোন কোন দিন নেবেন, তার সময়সূচিও ঠিক করেছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh