পানশিরে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে তালেবান

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৫০ এএম

পানশিরের এই দোকান মালিক মনে করেছিলেন, তালেবান তার কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু বাড়ি কাছে একটি স্থানে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ছবি : বিবিসি

পানশিরের এই দোকান মালিক মনে করেছিলেন, তালেবান তার কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু বাড়ি কাছে একটি স্থানে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ছবি : বিবিসি

আফগানিস্তানের পানশির উপত্যকায় অন্ততপক্ষে ২০ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে তালেবান হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। পাহাড়ি ওই উপত্যকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ায় সেখানকার সংবাদ জানা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

তবে বিবিসির কাছে এমন কিছু তথ্যপ্রমাণ এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, প্রতিশোধ না নেয়ার অঙ্গীকার সত্ত্বেও তালেবান হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে, পানশিরের একটি কর্দমাক্ত সড়কের পাশে সামরিক পোশাক পরা একজন ব্যক্তিকে তালেবান যোদ্ধারা ঘিরে রেখেছে। এরপর বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা যায় এবং সেই ব্যক্তিকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়। এটা পরিষ্কার নয় যে ওই ব্যক্তি কোনো সেনাসদস্য কিনা। ওই অঞ্চলে সামরিক পোশাক পরা খুব সাধারণ একটি ঘটনা। ভিডিও করার সময় পাশে দাঁড়ানো একজন দাবি করেছেন, ওই ব্যক্তি একজন বেসামরিক বাসিন্দা।

বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে যে, পানশিরে অন্তত এরকম ২০ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাদের একজন হচ্ছেন- একটি দোকানের মালিক ও দুই সন্তানের জনক আবদুল সামি।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, তালেবান যখন অগ্রসর হচ্ছিল, তখন ওই ব্যক্তি পালিয়ে যাননি। তিনি বলেছিলেন- আমি সামান্য একজন দরিদ্র দোকান মালিক, যুদ্ধের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হয়, প্রতিরোধ গড়ে তোলা যোদ্ধাদের কাছে সিম কার্ড বিক্রির অভিযোগ তোলা হয়। কয়েকদিন পরে বাড়ির কাছাকাছি একটি স্থানে তার মৃতদেহ ফেলে যাওয়া হয়। যারা তার মৃতদেহ দেখতে পেয়েছেন তারা জানিয়েছেন যে, তার শরীরে নির্যাতনের ছাপ রয়েছে।

গত মাসে তালেবান যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে, তখন শুধুমাত্র এই একটি অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। আফগানিস্তানে প্রতিরোধ যুদ্ধে পানশির উপত্যকার পুরনো ইতিহাস রয়েছে। কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদের নেতৃত্বে এই এলাকা সোভিয়েত ও প্রথমবারের তালেবান শাসনের ঠেকিয়ে দিয়েছিল। উপত্যকার চারদিকে ঘিরে রাখা পাহাড়ের চূড়াগুলোর কারণে এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়া যে কারো জন্যই কঠিন।

আহমদ শাহ মাসুদের সন্তান আহমদ দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তবে গত সপ্তাহে তালেবান সেখান বিজয় দাবি করেছে, তাদের যোদ্ধারা তালেবান পতাকা উত্তোলন করছে বলে ভিডিও প্রচার করেছে।

প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। তালেবানের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আহমদ মাসুদ।

তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেয়ার পর দেশের অন্যান্য এলাকার মতো পানশিরে কী ঘটতে যাচ্ছে, সেদিকে সবার নজর রয়েছে। তালেবান যখন উপত্যকায় প্রবেশ করে, তখন তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করার আহ্বান জানিয়েছিল।

তবে ওই এলাকা থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক সময়ের ব্যস্ত বাজারঘাট জনশূন্য হয়ে পড়েছে। মানুষজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। উপত্যকার লম্বা পাহাড়ি চূড়াগুলোর নিচে গাড়ির লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। সেখানে খাবার ও ওষুধের স্বল্পতাও তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে বেসামরিক বাসিন্দাদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তালেবান। তবে সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের সদস্যদের গণহত্যা ও একজন নারী পুলিশ সদস্যকে হত্যার খবর সামনে আসার পর বোঝা যাচ্ছে, প্রতিশোধমূলক হামলা না করার জন্য তালেবান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেখানকার বাস্তব চিত্র তারচেয়ে আলাদা। -বিবিসি

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh