ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:৪৪ পিএম
উত্তরপ্রদেশের একটি হাসপাতালের চিত্র। ছবি : পিটিআই
ভারতের উত্তরপ্রদেশের একের পর এক জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। পরিস্থিতি সামাল দিতে নাজেহাল দশা বিজেপি সরকারের। প্রদেশটির ফিরোজাবাদ জেলার অবস্থা সবচেয়ে করুণ।
গতকাল সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সরকারি হিসেব অনুয়ায়ী, শুধু ফিরোজাবাদেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১১৪ জনের। তার মধ্যে ৮৮টি শিশু। আর গতকালই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যার হাহাকার।সরকারি হাসপাতালগুলোতে উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। কার্যত বিনা চিকিৎসায় ডেঙ্গু রোগীরা প্রাণ হারাচ্ছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
ফিরোজাবাদ জেলা হাসপাতালে গতকাল সকাল ৮টা নাগাদ নিয়ে যাওয়া হয় ডেঙ্গু আক্রান্ত পাঁচ বছরের সাওন্যা গুপ্তকে। তাকে ভর্তি করানোর জন্য হাসপাতালের কর্মী থেকে চিকিৎসক- সকলের কার্যত হাতে-পায়ে ধরেছেন মেয়েটির পরিজন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তখন ওই পাঁচ বছরের মেয়েটির প্রবল জ্বর ছিল। প্রায় তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা দৌড়দৌড়ি, আবেদন-নিবেদনের পর দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাওন্যাকে। কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছু ক্ষণ পরে মারা যায় শিশুটি।
তার ভাই বলেন, ‘সময়মতো যদি চিকিৎসা হতো, বোনকে বাঁচানো যেত। হাসপাতালের কর্মীদের ওর অবস্থার কথা বারবার বলেছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের কথা কানে তুলল না।’
কাপড়ে ঢাকা সন্তানের দেহের পাশে বসে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন শিশুটির মা। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন এক নারী। তিনি বলেন, ‘ডাক্তারেরা কিছুই করলো না। ওরা শুধু টাকা চায়।’
ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিজনের বক্তব্য, ফিরোজাবাদ হাসপাতালের এই ছবি রাজ্যের অন্য হাসপাতালগুলোতেও। শয্যার অভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না অনেকেই। অল্পবয়সিদের কোলে নিয়ে হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরছেন তাদের মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনেরা।
ফিরোজাবাদ জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু রুখতে তারা চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না। ৯৫টি স্বাস্থ্য শিবির করা হয়েছে।
সরকারি হাসপাতালে শয্যার অভাব, সেই সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালগুলো মোটা অঙ্কের টাকা চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভীম নগরের বাসিন্দা বীর পাল পেশায় দিনমজুর। ডেঙ্গু হয়েছিল তার পাঁচ বছরের ছেলের। জানালেন, কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে তার ছেলেটি।
বীর পালের কথায়, বেসরকারি হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়েছিলাম, ৩০ হাজার রুপি চাইল। বলেছিলাম- ভর্তি করুন আমি টাকা জোগাড় করে আনছি। শুনল না। ছেলেকে নিয়ে গেলাম ফিরোজাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে তো হাসপাতালের কর্মীরা কথাই শুনতে চায় না। ছেলেকে ভর্তি নিল না। তখন ওর প্রবল জ্বর। ট্যাক্সি করে আগ্রার দিকে রওনা হলাম। যদি কোথাও ভর্তি করা যায়। পথেই মারা গেল ছেলেটা।
বিরোধীরা বলছেন, উত্তরপ্রদেশের জেলাগুলোতে ঘুরলে এমন উদাহরণ আরো পাওয়া যাবে। শুধু ফিরোজাবাদে নয়, আগ্রা, মথুরা, মৈনপুরীর মতো জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। সাধারণ মানুষ থেকে বিরোধী দলগুরোর অভিযোগ, সর্বত্রই হাসপাতালগুরোতে শয্যার অভাব। নেই চিকিৎসা ব্যবস্থা। উদাসীন যোগী আদিত্যনাথের সরকার। -আনন্দবাজার পত্রিকা ও এনডিটিভি