যমুনা সার কারখানার সিবিএ সভাপতি-সম্পাদককে মারধর

জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০২:৩৯ পিএম | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০২:৫৯ পিএম

হামলায় আহত সিবিএ নেতা

হামলায় আহত সিবিএ নেতা

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সার কারখানায় (জেএফসিএল) বিধিবহির্ভূত নিয়োগকৃত শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হওয়ায় তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ হয়েছে। 

বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ চলাকালে সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মারধর করেছে শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদারের লোকজন।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত ৪৮৬ জন শ্রমিকের অধিকাংশই নীতিমালা অমান্যসহ দায়িত্বে অবহেলা করে আসছেন। এরমধ্যে ৬১জন খণ্ডকালীন শ্রমিক বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ নিয়ে কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে মাসের পর মাস বেতন উত্তোলন করায় সম্প্রতি তাদের বাদ দেয়া হয়।

জেএফসিএল সূত্র জানায়, যমুনা সার কারখানায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দৈনিক ৩৭৫ টাকা হাজিরা (কাজ নাই তো মজুরি নাই) ভিত্তিক ৪২৫জন শ্রমিককে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক সরবরাহের কার্যাদেশ পায় সরিষাবাড়ী বাস স্ট্যান্ডের মেসার্স জান্নাত এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত জনবলের বাইরে অতিরিক্ত আরো ৬১জন শ্রমিককে বিধিবহির্ভূত নিয়োগ ও মাসের পর মাস বেতন দেয়ায় কারখানায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) অডিটে তাদের বেতন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মঈনুল হক গত ২৯ আগস্ট ৬১জন শ্রমিককে বাতিল করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে পত্র দেন।

অপরদিকে বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ৪২৫জন শ্রমিক পরিচয়পত্র ব্যতীত কারখানায় প্রবেশের আদেশ ও ড্রেসকোড অমান্যসহ দিনের পর দিন দায়িত্বে অবহেলা করে আসলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রহস্যজনক কারণে না দেখার ভান করে আসছিল। এ বিষয়গুলো উল্লেখ করেও ওই পত্রে ঠিকাদারকে সতর্ক করা হয়।

এদিকে পত্র পাওয়ার পর ঠিকাদারের লোকজন ও বাতিলকৃত শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সোমবার থেকে তারা কারখানা এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষোভ চলাকালে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি আব্দুস সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসামাত্র বিক্ষুব্ধরা তাদের গতিরোধ করে। এসময় সিবিএর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে টিকাদারের লোকজন হামলা চালিয়ে তাদের মারধর করে।

সিবিএর সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান জানান, আন্দোলনকারীদের কিছু লোক আমাদের কাছে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে আসছে। এছাড়া খণ্ডকালীন শ্রমিকদের কর্তৃপক্ষ বাতিল করায় তারা আমাদের দায়ী করছে। আন্দোলন চলাকালে আমরা কারখানায় প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করার সময় হঠাৎ তারা আক্রমণ চালায়। এতে সভাপতির চোখে ফোলা জখম হয়।

হামলাকারীরা সভাপতির মানিব্যাগসহ টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয় বলেও তিনি জানান।

সিবিএ নেতাদের মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে ঠিকাদার মো. সাখাওয়াত আলম মুকুলকে বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

তবে মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছিলেন, আমি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ঠিকাদারি করছি, খণ্ডকালিন ৬১জন শ্রমিককে আমার আগের ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছিল। কর্তৃপক্ষ আমার সাথে কথা না বলেই ওদের বাদ দিয়েছে, এতে এলাকার কিছু লোক কর্মহীন হয়ে পড়ল।

কর্তৃপক্ষের পত্রের ব্যাপারে তিনি জানান, আমি সব নীতিমালা মানতে প্রস্তুত। শ্রমিকদের ড্রেস ও পরিচয়পত্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কোনো শ্রমিক দায়িত্বে অবহেলা করে না বলেও তিনি দাবি করেন।

এব্যাপারে যমুনা সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মঈনুল হক বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুপারিশ ও মৃত্যুজনিত শূন্যপদের বিপরীতে নিয়োগ অতিরিক্ত ৬১জনকে খণ্ডকালীন নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কারখানার নিয়মে অনুমোদন রয়েছে ৪২৫ জনের, তাই বাকিদের বাদ দেয়া হয়েছে।

সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর রকিবুল হক বলেন, যমুনা সার কারখানায় খণ্ডকালীন শ্রমিকদের বাতিল করায় বিক্ষোভ হয়েছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিষয়গুলো নিয়ে শ্রমিকদের সাথে কথা বলছিলেন বলে তিনি জানান।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh