জাকারিয়া জাহাঙ্গীর, জামালপুর
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:০৭ পিএম
ছবি- সংগ্রহীত
প্রজাপতি পার্ক কথাটা শোনার পর হয়তো মনের মধ্যে উঁকি দিতে পারে, এটি এমন কী আর! ব্যাপারটি সত্যিই আশ্চর্যজনক। বিশেষত ফুল-ফসলের পরাগায়ণ বৃদ্ধি ও প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়াতে কৃত্রিম উপায়ে মৌমাছির অভয়ারণ্যের নামই ‘প্রজাপতি পার্ক’। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম মফস্বল পর্যায়ে প্রজাপতি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে। সবাই যাকে বলে, হাসমত স্যারের প্রজাপতি পার্ক।
উপজেলার আওনা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের তানজিম পল্লীতে প্রায় ৫ একর জমির মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে এটি। যার উদ্যোক্তা পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মুনসুরনগর ইউনিয়নের ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হাসমত আলী। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও ফুল-ফসলের উৎপাদন বাড়াতে প্রকৃতির অতুলনীয় বন্ধু মৌমাছি। চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি রোডে প্রথম ‘প্রজাপতি পার্ক’ স্থাপিত হয়। এ ধারণা থেকেই উদ্যোগটি আরও বিস্তৃত করতে বাংলাদেশে দ্বিতীয়, তবে মফস্বল পর্যায়ে প্রথমবারের মতো সরিষাবাড়ীতে প্রজাপতি পার্ক গড়ে তোলা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে এখানে প্রায় ৩০ প্রজাতির কয়েকশত প্রজাপতি রয়েছে। প্রজাপতিগুলো সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত ৬০ ফিট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফিট প্রস্থ এবং ২০ ফিট উচ্চতার একটি নেট দিয়ে ঘেরা আবাসস্থল তৈরি করা হয়েছে। প্রজাপতির পছন্দের বিভিন্ন ধরনের গাছপালা যেমন- রঙ্গন, মুসেন্ডা, নয়নতারা, মাধবীলতা, কামিনী, কসমস, লজ্জাবতী, কদম, এরিকা পাম, লিচু, ঝুমকোলতা, আশশেওড়া, ল্যান্টেনা, কলকাসুন্দা, লেবু, গাঁদাফুল, ভেরেন্টা, আমগাছ, আঙ্গুর লতাসহ অর্ধশতাধিক গাছপালা প্রজাপতির হোস্ট প্ল্যান্ট হিসেবে রোপণ করা হয়েছে। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ এ পার্কটি দেখার জন্য ভিড় করে।
প্রজাপতি পার্কের প্রতিষ্ঠাতা হাসমত আলী জানান, বসতভিটার কাছেই একটি ফুলবাগান ছিল। এখানে বসার জন্য দোলনা ছিল। অবসরে দোলনায় বসে বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতাম। এ সময় প্রজাপতি এসে ভিড় করত। তখন ভাবতাম, যদি প্রজাপতিগুলো সবসময়ের জন্য এখানে রাখতে পারতাম! এ চিন্তা থেকেই প্রজাপতির জীবনাচরণ সম্পর্কে গবেষণা শুরু করি। তখন জানলাম যে, পৃথিবীজুড়ে প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। আর বাংলাদেশে যার সংখ্যা মাত্র তিন শতাধিক। যাদের সংরক্ষণ ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য পার্ক করা সম্ভব। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের বসতভিটায় প্রজাপতি পার্ক তৈরি করার।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন স্যারের সঙ্গে কথা বলি। তার দিক-নির্দেশনায় পার্কের কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বাশার এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রজাপতি গবেষক ও প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সফিক হায়দার চৌধুরী স্যারের সঙ্গেও বিশদ আলোচনা হয়। তাদের সহযোগিতায় এ পার্কটি গড়ে উঠে। উদ্ভিদ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতি যাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে, সে জন্য পরবর্তীতে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে তিনি ইচ্ছা পোষণ করেন।
সিনিয়র উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রজাপতি প্রথমে ডিম দেয়, এরপর লার্ভা থেকে পিউপা ও পরে পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতিতে পরিণত হয়। যত্রতত্র কীটনাশকের ব্যবহার ও অবাধ বিচরণে বাধা প্রদান করায় এদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট এবং প্রজাপতি মারাও যাচ্ছে। হাসমত সাহেব প্রজাপতির বিচরণ এবং বংশবৃদ্ধির জন্য যে প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন, তা প্রজাপতির বংশ বৃদ্ধির সহায়ক হবে। ফুল ফসলের পরাগায়ণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তার এ উদ্যোগটি এগিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক সহায়তা প্রদান করবে।