ভ্রমণে যে প্রস্তুতি বিপদ এড়াতে সাহায্য করে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:৪৫ পিএম

ভ্রমণপিপাসু

ভ্রমণপিপাসু

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের আরোপ করা সর্বশেষ দফার লকডাউন উঠে গেছে গত অগাস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে, আর পর থেকে শুরু হয়েছে দেশের মধ্যে পর্যটনের জোয়ার। দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন পর্যটন স্পটে দেখা যাচ্ছে ভিড়। দীর্ঘদিন পর চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় অনেকেই বেরিয়ে পড়েছেন- একা, বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে।

কিন্তু কেউ কেউ ফিরে আসছেন আনন্দের ভ্রমণের স্মৃতির সাথে দুর্ঘটনার বিষাদ নিয়েও। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নানা রকম দুর্ঘটনা, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুর খবরও আসছে গণমাধ্যমে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, বান্দরবনের নীলাচল পাহাড়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরসহ দেশের উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বেড়াতে গিয়ে সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই দুর্ঘটনায় অন্তত ছয়জন মানুষের মৃত্যুর খবর দিচ্ছে দেশের সংবাদমাধ্যম।

দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে- খাগড়াছড়ি, সাজেক, বান্দরবান, রাতারগুল, সিলেট অঞ্চলের হাওর আর ঝরনা, সুন্দরবন, কক্সবাজার-কুয়াকাটা-সেন্ট মার্টিন সমুদ্রসৈকত। সেই সাথে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতিসহ দেশের প্রাচীন স্থাপনাগুলোও রয়েছে ভ্রমণপিপাসুদের পছদের তালিকায়।

তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে দেশে এবং দেশের বাইরে বেড়াতে গিয়ে বাচ্চা-বুড়ো সকলেই হঠাৎ দুর্ঘটনার মুখে পড়তে পারেন। কেবল মৃত্যুই নয়, প্রায়শই পর্যটন স্পটগুলোতে বেড়াতে গিয়ে পিছলে পড়ে চোট পাওয়া, হাড়ভাঙা, পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ার মত বিপজ্জনক দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়।নতুন জায়গায় অনভ্যস্ত স্বাদে বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ফুড পয়জনিং বা পেট খারাপ হয় অনেকের।

কয়েক বছর আগে বান্দরবানে বেড়াতে গিয়ে স্রেফ মশার কামড়ে হওয়া ম্যালারিয়া নিয়ে ফিরেছিলেন একজন সাংবাদিক, যিনি পরে মারা গিয়েছিলেন।

পোকার কামড়ে ত্বকে ইনফেকশন নিয়ে ফেরেন অনেকেই। আর যে কেউ চুরি, ছিনতাই বা প্রতারণার শিকার হতে পারেন অসাবধানে।

দেশের বাইরে অজ্ঞানতাবশতঃ আইন ভেঙে দণ্ডের সম্মুখীন হবার নজিরও বিরল নয়। আর মহামারিকালে ঠিকঠাক তথ্য না নিয়ে ভ্রমণ করলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে ফেরা অসম্ভব নয়।

এছাড়া চুরি বা ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে কিংবা বেহিসেবী খরচ করে বাড়ি ফেরার আগেই ফতুর হয়ে যেতে পারেন কেউ। দৈব দুর্বিপাক হয়তো এড়ানো কঠিন, কিন্তু কিছু সতর্কতা ভ্রমণের সময় একজন পর্যটককে নিরাপদ রাখতে পারে।

ভ্রমণ বিষয়ক গাইড লোনলি প্ল্যানেট বলছে, যেকোনো স্থানে ঘুরতে যাওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে পুরো সময়টা আনন্দময় হতে পারে।

১. কোথাও যাবার আগে সময় নিয়ে পরিকল্পনা করুন। পরিকল্পনা বলতে প্রথমেই আসবে, যেখানে যাচ্ছেন সে জায়গাটি সম্পর্কে ভালো করে রিসার্চ করুন, মানে যতটা সম্ভব জেনে নিন। ওই জায়গাটির আবহাওয়া জেনে নিন। আর মহামারিকালে ওই নির্দিষ্ট এলাকায় করোনাভাইরাসে দৈনিক সংক্রমণের হার সম্পর্কে জেনে নিন।

২. দেশের বাইরে ভ্রমণের সময় নির্দিষ্ট দেশের দূতাবাসের ওয়েব পেইজে গিয়ে ভ্রমণ সম্পর্কিত তথ্য জেনে নিন।

৩. কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, দর্শনীয় জায়গা-এসব সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে রাখা উচিৎ। দেশের বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্যুর অপারেটর, ট্র্যাভেল এজেন্ট, হোটেল, এয়ারলাইন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখার চেষ্টা করা, প্রয়োজনে যাচাই করে দেখা উচিত।

৪. সম্ভাব্য খরচের খাত হিসেব করে বাজেট করে নিন।

৫. গন্তব্যে পৌঁছানোর সময়টি রাতে না হওয়া ভালো - কারণ দেশে কিংবা দেশের বাইরে প্রায় সবসময় হোটেলে চেক-ইনের সময়টি হবে দিনের বেলায়, ফলে রাতে পৌঁছুলে আবাসন নিয়ে সংকটে পড়তে হতে পারে। এছাড়া অচেনা জায়গায় রাতে নিরাপত্তার ঝুঁকিও থাকে।

৬. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন।

যাত্রাপথে আপনার সাথে ব্যাগেজ যত ছোট হবে, ভ্রমণের সময়টাতে তত সুবিধাজনক আর আরামদায়ক অবস্থায় থাকবেন আপনি।

তবে সাথে প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে ভুললে চলবে না, কারণ যেখানে যাচ্ছেন সেখানে হাতের নাগালে সব কিছু নাও পেতে পারেন। তাই লাগেজ গোছানোর আগে তালিকা করে নিতে পারেন, যাতে দরকারি কোন জিনিস মনের ভুলে ফেলে চলে না যান।

১. যেখানে যাবেন সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে আগে জেনে আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক নিন সাথে।

২. জায়গা বুঝে প্রস্তুতি নিন - যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে বেড়াতে গেলে মশাসহ বিভিন্ন পোকার কামড় এড়াতে রেপেলেন্ট সাথে নিন।

৩. ভ্রমণে ভালো একজোড়া জুতো অপরিহার্য। পাহাড়ি ঝরনা বা ঝিরিতে বেড়াতে গেলে সহজে পিছলে যায় না, এমন জুতো নিয়ে যাওয়া দরকার।

৪. ট্রেকিংয়ে গেলে বিশেষ ধরনের জুতো, গিয়ার, দড়ি-এসব প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট নিতে ভুলবেন না

৫. প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে নিন। নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, এমন ক্ষেত্রে হিসেব করে ওষুধ নিতে হবে। এছাড়া সাধারণ জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা, পেট খারাপ, অ্যাসিডিটির ওষুধ, কাটাছেড়ার জন্য ব্যান্ডএইড, প্লাস্টার সাথে রাখা নিরাপদ।

৬. মোবাইল ফোনের চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখুন।

৭. বৈধ পরিচয়পত্রের একটি কপি সাথে রাখুন। দেশের বাইরে হলে পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্রের একসেট ফটোকপি আলাদা ব্যাগে রাখা উচিৎ।

৮. শরীর সুস্থ রাখতে হবে, সেজন্য ভ্রমণের সময় প্রচুর পানি পান করুন, তাতে শরীর পানিশূন্য হয়ে কাহিল হয়ে পড়বে না। এছাড়া খাবার পছন্দের সময়ও সাবধান হোন।

৯. চলাফেরা ও উদযাপনে সতর্ক থাকুন। সাগরে নামলে জোয়ার-ভাটার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল করা উচিৎ, ভাটার সময় সাগরে নামা বিপজ্জনক। তেমনি পাহাড়ি ঝরনা বা জলপ্রপাতে নামলে পাথরের ওপর হাটার সময় অসতর্ক হয়ে যাতে পিছলে না পড়েন, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

১০. টাকা-পয়সা দুইভাগে রাখুন, যাতে কোনভাবে মূল পার্স হারিয়ে গেলে কপর্দকশূন্য না হয়ে পড়েন।

সবচেয়ে বড় বিষয় সতর্ক থাকুন - বেহিসেবী আনন্দ বা ঝুঁকি নয়, তাহলেই এড়ানো সম্ভব বিপদ-আপদ।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh