তারিক আল বান্না
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২১, ০২:৩০ পিএম
ছবি- সংগৃহীত
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে। কিউইদের দলটি কিন্তু ছিল একেবারেই তৃতীয় শ্রেণির মতো। যে দলে ছিল না নিউজিল্যান্ডের জাতীয় দলের কোনো খেলোয়াড়।
তাই সিরিজ জিতলেও বলা যাবে না, বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপের জন্য ভালো প্রস্তুতি সেরেছে। বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে বাংলাদেশকে ব্যাটিং বোলিংসহ সব বিভাগেই আরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে টাইগাররা মোটামুটি শক্তিশালী অজি বাহিনীর বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতে। হয়তো অজি দলটিতে ফিন্স, ওয়ার্নার, স্মিথসহ বেশ কয়েকজন ভালো ভালো খেলোয়াড় ছিলেন না। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার এই দল থেকে ৯ জন খেলোয়াড় বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছে। সিরিজ দুটি জিতলেও আমাদের ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, উইকেট কিপিং- সবদিকেই অনেক দুর্বলতা লক্ষ্য করা গেছে। ঘাটতি রয়েছে আমাদের সাহসিকতার ক্ষেত্রেও। তাই কয়েকটি দিকে নজর দেওয়া দরকার।
প্রথমত, বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনের ঘাটতিগুলো দূর করতে হবে। সেখানে আমাদের সবার আগে ভালো উদ্বোধনী জুটি তৈরি করতে হবে। নাইম, লিটন দাস ছাড়াও আরও কয়েকজনকে ওপেনিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা দরকার। তামিম ইকবাল দলে থাকলে কিছুটা ভালো হতো। যেহেতু তামিম নেই, তাই চিন্তাটা বেশি। একটি ভালো ওপেনিং জুটি থাকলে ব্যাটিং লাইন ৫০ শতাংশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ বড় বড় দলের ওপেনিং জুটি অনেক বেশি কার্যকর।
দেখা যায়, দলগুলোর পুরো ইনিংসের বড় একটা রান আসে ওপেনিং জুটি থেকে। ওপেনিং জুটির পর ওয়ান, টু, থ্রি ও ফোর্থ ডাউন ব্যাটসম্যানদেরও কমবেশি রান সংগ্রহ করতে হবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওপেনিং জুটি এবং পরের তিন/চারজন ব্যাটসম্যান যদি মোটামুটি স্কোর গড়তে পারেন, তাহলে দলীয় সংগ্রহ ভালো হবেই। কারণ, শেষের দিকের ব্যাটসম্যানরাও চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারবেন। এতে করে দলীয় সংগ্রহ দেড়শ থেকে দুইশ’ হওয়াটা কঠিন কিছু নয়।
দ্বিতীয়ত, ফিল্ডিং একেবারেই যাচ্ছে তাই বাংলাদেশের। বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে এ পর্যন্ত যে সব ম্যাচ হেরেছে, তার অনেকগুলোই হয়েছে বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে। বিশ্বের সফল দলগুলো কিন্তু ফিল্ডিংয়ের জন্য সুনামের অধিকারী। ফিল্ডিংয়ের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, যে যেখানে উপযুক্ত, তাকে সেখানেই দায়িত্ব দিতে হবে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের বোলিং সাইড ভালো বলে একটি কথা প্রচলিত আছে।
তবে সর্বশেষ ম্যাচগুলোতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান আর নাসুম আহমেদের বোলিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এটা নিশ্চয়ই ভালো কথা নয়। ওই তিনজন ছাড়া কিন্তু কেউ নিয়মিত ভালো করছেন না। এ জন্য বোলিং অলরাউন্ডার খুঁজে বের করতে হবে আরও কয়েকজন। সাকিব, মোস্তাফিজ ও নাসুম মোটামুটি ভালো করেছেন, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে বাকি বোলাররা এক ম্যাচে ভালো করেন তো পরের তিন ম্যাচ খারাপ করছেন। সাকিব ছাড়াও মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাইফউদ্দিনের মতো অলরাউন্ডার দলে নিয়মিত হলে বাংলাদেশের জন্যই ভালো।
চতুর্থত, আমাদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আছে, ‘মি. ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক আছে, ‘শেষ ভরসা’ মাহমুদউল্লাহ আছে, ‘হার্ডহিটার’ লিটন দাস আছে, ‘দুঃসময়ের কাণ্ডারি’ আফিফ আছে, ‘বিগহিটার’ সৌম্য আছে, ‘এডিশনাল অলরাউন্ডার’ সাইফউদ্দিন আছে, ‘কাটারমাস্টার’ মোস্তাফিজ আছে, ‘স্পিড স্টার’ রুবেল ও তাসকিন আছে। সবই আছে একটা শক্তিশালী দল গঠনের জন্য। তাহলে কী নেই আমাদের? আসলে মনস্তাত্বিক শক্তি কম আমাদের খেলোয়াড়দের।
বোলারদের দেখা যায়, যখন বল ইয়র্কার করার কথা, তারা শর্টপিচ ডেলিভারি দিচ্ছেন কিংবা তাদের হাত ফসকে বল শর্টপিচ হয়ে যাচ্ছে। মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতার কারণ এমনটি হয়। আশা করা যায় দলের ঘাটতিগুলো দূর করতে পারলে আসন্ন বিশ্বকাপে চমক দেখাতে পারবে টাইগাররা।