জীবিতকে মৃত্যুর সনদ: চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২১, ০৬:১৪ পিএম

মানিকগঞ্জ মানচিত্র

মানিকগঞ্জ মানচিত্র

জীবিত ব্যক্তিকে মৃত্যু সনদ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যানের মৃত্যু সনদের কারণে ভুক্তভোগীর বয়স্ক ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। চেয়ারম্যানের দেয়া সনদ অনুযায়ী ৪ মাস আগে মৃত্যু হয়েছে শফিকুল ইসলামের (৬৩)। অথচ শফিকুল ইসলাম নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিবালয় মডেল ইউনিয়নের নবগ্রাম এলাকায়। শফিকুল ইসলাম ওই ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার শারমিন বেগমের স্বামী।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম শুক্রবার (১ অক্টোবর) বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলাল উদ্দিন, নিজ স্ত্রী শারমিন বেগম ও ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ খানকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী মহিলা মেম্বার শারমিন বেগমকে আটক করেছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি একটি ঋণ উত্তোলনের জন্য শিবালয় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যান। এসময় অফিসের কাগজপত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসার জানান তার নামের ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। প্রমাণ হিসাবে শিবালয় উপজেলা মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিনের স্বাক্ষরিত মৃত্যু সনদ দেখানো হয়। যার স্বারক নম্বর শিবা/ইউ:/পি-২০২১.০১.৪৮। মৃত্যু সনদে উল্লেখ আছে ৮ নং ইউপি সদস্যের সুপারিশে এই সনদ দেয়া হলো। এই মৃত্যু সনদের কারণে তার বয়স্ক ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানতে পারেন তিনি। পরে শফিকুল ইসলাম মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে মৃত্যু সনদ দেয়ার বিষয়ে জানতে গেলে তারা তার সাথে খারাপ আচরণ করে এবং নানা হুমকি ধামকি দেন।

তিনি বলেন, তার স্ত্রী মহিলা মেম্বার শারমিন বেগম দীর্ঘ দিন ধরে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছে। একারণে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বাড়ি ছাড়া। এই সুযোগে চেয়ারম্যান ও আরেক ইউপি সদস্যের যোগসাজশে তাকে মৃত বানিয়ে সম্পত্তি আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে। এ কারণে গত ২৬ মে অসুস্থ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন মর্মে সনদ দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন ‘আমি জীবিত আর আমাকে উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে কেন মৃত দেখানো হলো আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিনের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি, তার ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

শিবালয় উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. পলাশ হুসাইন জানান, শফিকুল ইসলাম নামে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড ছিলো। পরবর্তীতে যাচাই বাছাইয়ের সময় বয়স কম ধরা পড়ায় বিধিমোতাবেক তার কার্ডটি বাতিল করা হয়। তবে তার মৃত্যুর সনদটি কিভাবে অফিসে আসলো তা তার জানানেই বলে জানান। তবে জীবিত ব্যক্তির মৃত্যুর সনদের বিষয়টি অবগত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের মৌখিকভাবে অবগত করা হয়েছে। 

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ কবির জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে, ইতোমধ্যেই তার স্ত্রী শারমিন বেগমকে আটক করা হয়েছে। 

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ আমাকে লিখিত বা মৌখিকভাবে অবগত করেনি। অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh