২২ কোটি টাকার কোকেন মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড

খুলনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০২:১৭ পিএম | আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০৫:১৬ পিএম

আদালতে আসামিরা

আদালতে আসামিরা

খুলনার আলোচিত সাড়ে ২২ কোটি টাকা মূল্যের কোকেন উদ্ধার মামলায় আসামি বিকাশ চন্দ্র মন্ডলকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অপর আসামি সোহেল রানাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য ৪ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। 

বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ মো. মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আদালতের পিপি এনামুল হক এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।  

মামলার রায়ে আসামি বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাসকে মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা, সোহেল রানাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, আরিফুর রহমান ছগিরকে ১৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ জরিমানা, অনাদায়ে ২ বছরের কারাদণ্ড এবং অপর তিন আসামি বিকাশ চন্দ্র মন্ডল, এসএম এরশাদ হোসেন ও ফজলুর রহমান ফকিরকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। 

মামলার বিবরনী থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ আগস্ট রাত পৌনে ১০ টার দিকে র‌্যাব-৬ এর খুলনার একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ময়লাপোতা মোড় থেকে সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তিকে ২৩০ গ্রাম কোকেনসহ আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে গগনবাবু রোডের একটি বাড়ি থেকে কোকেন বিক্রির মূল হোতা আরিফুর রহমান ছগিরকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দাকোপ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিকাশ চন্দ্র মন্ডল ও ফজলুর রহমান ফকিরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া কবরখানা রোড থেকে এস এম এরশাদ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর রূপসা উপজেলার রাজাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় সে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তিনটি কোকেনের প্যাকেট বের করে দেয়। যার মধ্যে দুই কেজি ২০ গ্রাম কোকেন পাওয়া যায়। সোয়া দুই কেজি কোকেনের মূল্য ২২ কেটি ৫০ লাখ টাকা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কোকেনের এতোবড় চালান আটকের ঘটনা এটিই প্রথম। 

আটককৃতরা হলেন, চোরাচালান চক্রের ‘হোতা’ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী গ্রামের (বর্তমানে নগরীর গগন বাবু রোড) আরিফুর রহমান ওরফে ছগির (৬০), খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতী গ্রামের সোহেল রানা (৩৫), ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া গ্রামের বিকাশচন্দ্র বিশ্বাস (৩৫), খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়ের ২৫১ নং আকাশ ইল্লিল ম্যানসনের বাসিন্দা এস এম এরশাদ হোসেন (৪৮), দাকোপ উপজেলা সদরের চালনার বৌমার গাছতলা গ্রামের বিকাশচন্দ্র মন্ডল (৫৫) এবং একই উপজেলার মৌখালী গ্রামের ফজলুর রহমান ফকির (৩৭)।

র‌্যাব-৬’র তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার (সিও) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম অভিযানের পর ওই সময় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, চক্রটির মূল হোতা সগির নগরীর গগন বাবু রোডের একটি বাড়িতে ভাড়া থেকে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছিল। নগরীর ময়লাপোতা মোড় থেকে মাদক বিক্রির সময় অভিযান চালিয়ে প্রথমে চক্রের সদস্য সোহেল রানাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার শরীর তল্লাশি চালিয়ে ২৩০ গ্রাম কোকেন পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, তারপর তার স্বীকারোক্তিতে চক্রের মূলহোতা ছগিরের নাম জানা যায়। পরে ছগিরকে তার বাসা থেকে গ্রেফতারের পর তাদের নিয়ে রূপসা উপজেলার রাজাপুরস্থ পপুলার জুটমিলের সামনে থেকে বিকাশচন্দ্র বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়। বিকাশের কাছ থেকে বাকি ২ কেজি ২০ গ্রাম কোকেন উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যে চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়।

এ ঘটনায় র‌্যাবের ওয়ারেন্ট অফিসার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে ছয় জনের নাম উল্লেখ করে রূপসা থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি রূপসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম তদন্ত করেন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বজলুর রশীদ তদন্ত শেষে এজাহারভূক্ত ছয়জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মোট ২৭ জনের মধ্যে ২৪জন সাক্ষী আদালতে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। এর পর দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। 

এদিকে, মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি মো. এনামুল হক সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে ন্যায় বিচার পাননি বলে দাবি করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ ও আসাদুজ্জামান মিল্টন। তারা ন্যায় বিচার পেতে উচ্চ আদালতে আপীল করবেন বলেও উল্লেখ করেন। 



সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh