মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমে দুর্নীতি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০২:৩৯ পিএম
প্রতীকী ছবি
শিক্ষা খাত দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত, কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিষয়টি; কিন্তু আমাদের শিক্ষা খাতের এমন কোনো স্তর নেই, যেখানে দুর্নীতি তার নোংরা থাবা বিস্তার করেনি। থানা থেকে শুরু করে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস, শিক্ষা ভবন এমনকি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগেও রয়েছে দুর্নীতির দাপট।
সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক ভার্চুয়ালি এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ সম্পর্কিত নানা তথ্য। এই গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, বদলি, এমপিওভুক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে পদে পদে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পরিচালনা কমিটিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাড়ে ৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। পাশাপাশি সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগেরও অভিযোগ আছে। অন্যদিকে শিক্ষক বদলিতেও জনপ্রতি এক থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মধ্যস্বত্বভোগীরাও এর সঙ্গে জড়িত।
দেশের মাধ্যমিক শিক্ষায় এ ধরনের ঘটনার ফল কতটা ভয়ানক, সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে, যোগ্যতার পরিবর্তে আর্থিক লেনদেনের সুযোগে যখন একজন শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়, তিনি তার শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রদানে কতটা উপযুক্ত, তা প্রশ্নের দাবি রাখে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকরাই পারেন দ্রুত মানবসম্পদ উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে। শিক্ষকদের মান প্রশ্নবিদ্ধ হলে দেশের মানবসম্পদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। টিআইবি শুধু মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণা করেছে। বলা বাহুল্য, শিক্ষার অন্য ক্ষেত্রগুলো নিয়ে গবেষণা করা হলেও ভিন্ন কোনো চিত্র মিলবে না।
এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে ২০ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, মাঠ পর্যায়ে সরাসরি রাজস্ব খাতের আওতাভুক্ত সমন্বিত জনবল কাঠামো তৈরি করা এবং শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি পূরণ করা।
মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির যে তথ্য মিলেছে, সেগুলো আমলে নিয়ে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। পাশাপাশি এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।