জলবায়ু পরিবর্তনে ঢাকায় ডেঙ্গু আরও বাড়ার আশঙ্কা : বিশ্বব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০২:৫১ পিএম | আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০২:৫৩ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

জলবায়ু মশার উপযোগী হওয়ায় ঢাকা শহরে ডেঙ্গু বাড়ার আরও আশঙ্কা আছে। জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে হচ্ছে, তাতে ডেঙ্গুর মতো বাহক নির্ভর রোগের প্রকোপ বাড়ছে শহর এলাকায়।

আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে বিশ্বব্যাংকের গবেষণা জানিয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংক তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

আবহাওয়া যেভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে জনস্বাস্থ্যের ওপর এরই মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এবং আগামী দিনগুলোতে তা আরও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্দ্রতার পরিসর ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ, তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০০ থেকে ৮০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত মশার জন্য আদর্শ পরিবেশ। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৯ সালের আবহাওয়ার তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, ঢাকায় আর্দ্রতার মাত্রা কমছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গ্রীষ্মে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এগুলো নগরায়নের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু বিস্তারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

এসময়ের মধ্যে বাংলাদেশে গণতাপমাত্রা বেড়ে গেছে শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর তার ফলে ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে ঋতুভেদে আবহাওয়ার বৈচিত্র্য। প্রতি বছর গ্রীষ্মের সময় বাড়ছে, সেইসঙ্গে বাড়ছে গরম। আবার যে সময়ে শীত থাকার কথা, তখনও তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকছে। আবার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে গড় বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে বর্ষাকাল। অথচ যে সময়টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হত আগে, সেই জুন-অগাস্ট মৌসুমে গড় বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে।

এর ফল হচ্ছে অন্যরকম। এই সময়টায় যেসব রোগের প্রদুর্ভাব দেখা দেয়, তা আরও বেশি সময় ধরে ছড়ানোর মতো উপযুক্ত তাপমাত্রা ও বৃষ্টির পরিবেশ পাচ্ছে।  

দেখা গেছে, ১৯৯০ সালের পর থেকে পুরো বিশ্বেই এইডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতি এক দশকে দ্বিগুণ হচ্ছে।

বর্ষাকালের তুলনায় শুকনো মৌসুমে সংক্রামক রোগের প্রবণতা ১৯.৭ শতাংশ কমে আসে। ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মত মশাবাহিত রোগের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি প্রযোজ্য। এসব রোগে প্রতি বছর যে পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হয়, তার ২৫ শতাংশ হয় বর্ষাকলে, আর শীতকালে হয় ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ বর্ষাকালের দৈর্ঘ্য বাড়লে এসব রোগের মৌসুমও দীর্ঘ হবে।    

বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। ৪৫ বছরে এমন বৃষ্টি আর হয়নি। পরবর্তী মাসগুলোতেও অনেক বেশি বৃষ্টি ছিল। যার কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছিল। তখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যায়। 

২০১৯ সালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। তবে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে- তাপমাত্রা ও আদ্র্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের উদ্বেগে ভোগার প্রবণতাও বেড়ে যায়। আর গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়ে বেশি। নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি মাত্রায় উদ্বেগে ভোগেন।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত। আর ৬ শতাংশের মধ্যে উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে। এ বিষণ্নতা ও উদ্বেগের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সম্পর্ক রয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। আর ২১০০ সাল নাগাদ তা বেড়ে যেতে পারে ২.৪ ডিগ্রি পর্যন্ত। ২০৪০ থেকে ২০৫৯ সালের মধ্যে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে ৭৪ মিলিমিটার।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh