প্রতিবেশী দেশ থেকে মাদক আসে: আইজিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০৬:৫৬ পিএম

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন,  কোনো মাদকই দেশে তৈরি হয় না। ফেনসিডিল আসে প্রতিবেশী দেশ থেকে। ইয়াবাও আসে প্রতিবেশী আরেক দেশ থেকে। এখন আবার আসছে আইস। এসবের কোনটিই কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তৈরি হয় না। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে আমরা যে কাজটি করার চেষ্টা করি তা হচ্ছে মাদকের সাপ্লাই কাট। মাদক দমনে ছয় থেকে সাতটি বাহিনী একসঙ্গে কাজ করে। এছাড়া কাস্টমস বিভিন্ন পোর্টে মাদক দমনে কাজ করে।

বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ওয়েসিসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, কেউ মাদকাসক্ত হলে তার পরিবারের কী অবস্থা হয়, পুলিশে চাকরির সুবাদে আমার তা দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে। সমাজের অনেক সম্মানিত ব্যক্তির নীরব কান্না দেখতে হয়েছে আমাকে। এ গোপন কান্না এত কষ্টের, যা কারও সঙ্গে শেয়ারও করা যায় না সামাজিক মর্যাদার কারণে। কিন্তু আমার কাছে এসে শেয়ার করেছেন। এমন ঘটনা একটি নয়, অহরহ আছে।

তিনি বলেন, প্রচলিত মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে নাম-পরিচয় দিতে হয় বলে অনেকে ছেলে-মেয়েদের চিকিৎসা করাতে আগ্রহী হন না। আবার যার চিকিৎসার প্রয়োজন, তিনি চিকিৎসা নিতে চান না। পরিবার চায়, তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে, যা অনেক সময় আইনসম্মত না-ও হতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধান বলে এ দেশের নাগরিকরা স্বাধীন ও মুক্ত। তাই কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোথাও নিয়ে যাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮০ লাখ, আবার কেউ কেউ বলেন এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৩৬ লাখ। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে মোট বেড আছে সাত হাজার। তাহলে এতো সংখ্যক মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের আমরা কত বছরে চিকিৎসা দেবো?

তিনি বলেন, যদি ডিমান্ড থাকে, কোনো না কোনোভাবে দেশে মাদকের সাপ্লাই হবেই। আর মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা যদি হয় এক কোটি, ৮০ লাখ ও ৩৬ লাখ, তাহলে প্রতিদিন মাদক কোনো না কোনোভাবে দেশে প্রবেশ করানোর চেষ্টা হবেই। এ কারণে অবশ্যই আমাদের মাদকের ডিমান্ড কাট করতে হবে। ডিমান্ড কাট করতে হলে এ সমস্ত যারা মাদকাসক্ত আছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ওয়েসিস আমাদের অতি ক্ষুদ্র একটি উদ্যোগ।

পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের আরেকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র বা হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি। সেখানে আমরা ইতোমধ্যে নদীর তীরে ২০ বিঘা জমি কিনেছি। আমি পারলে ১০০ বিঘা জমি কিনতে চাই। সেখানকার পরিবেশে ঢুকলে যেন মানুষের মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। আমরা এমন একটি পরিবেশে ৫০০ থেকে এক হাজার বেডের হাসপাতাল তৈরি করতে চাই। এটিকে আমরা মাদক চিকিৎসার ক্ষেত্রে রিজিওনাল হাব করতে চাই।

পুলিশ হাসপাতালে ক্যান্সার ইউনিট স্থাপনের দাবি জানিয়ে আইজিপি বলেন, আমাদের পুলিশের যে ধরনের কাজ, আমরা সাধারণ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হই। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কিডনির সমস্যা। পুলিশ হাসপাতালে আমরা ইতোমধ্যে ৩৪টি কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন করেছি। আরেকটি হচ্ছে হার্টের সমস্যা। আমাদের জব স্ট্রেস থেকে আরেকটি রোগ হয়, তা হলো ক্যান্সার। আমাদের প্রচুর লোক আছে যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত। পুলিশ হাসপাতালে আমরা একটি ক্যান্সার ইউনিট চাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাব আগামী বছরের মধ্যে ক্যান্সার ইউনিট করে দেওয়ার জন্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এটি উদ্বোধন করে দেবেন বলে আশা রাখি।

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh