সবুজ চোখেরা

মৌসুমী বিলকিস

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২১, ০২:০৭ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

এক চিলতে সূর্যরশ্মি নিয়ে খেলা করছে নূরজাহান মানে নূর। সে দেখে কীভাবে যেন আলোর ফালিটা জানালা ভেদ করে এসে পড়ছে বিছানায়, একেবারে হাতের মুঠোয়। আলোর পথ ধরে তালু সঞ্চালন করে নূর, একবার ওপরে, আবার নিচে। আলোর বৃত্ত তালুতে পড়ে থাকে চুপচাপ। 

আলোর কি চেতনা আছে? যা স্পর্শ করে তারই বোধ জমা হয়ে থাকে আলোর মজ্জায়? তাহলে এ পৃথিবীর সবই জানে আলো। নিজেই ভাবে, নিজেই আশ্চর্য বোধ করে নূর। কিছুক্ষণ মগ্ন হয়ে দেখে আলোর ফালি। প্রায় অদৃশ্য অসংখ্য কণা উড়ে বেড়াচ্ছে আলোর শরীরে। এ কণারা কি আলোর নিজস্ব? নাকি আমাদেরই ঘাম, রক্ত, ধুলো? 

 ‘এই আলো... আলো।’ 

 উত্তর নেই। 

‘আমাকে খাবার দেবে?’ 

আলোর বৃত্তটা সামান্য নড়ে ওঠে। 

‘তুমি গাছেদের দাও। আমাকে দেবে না?’

স্থির তালুর ওপর ছোট্ট বৃত্তটা স্পট লাইটের মতো ঘোরাফেরা করে। তালুতে অদ্ভুত এক স্পর্শের বোধ। যেন ঘটনাটা খুব স্বাভাবিক, এমনভাবেই বৃত্তের চলন দেখে নূর। তার স্থির চোখের মণিতে আলোর বৃত্তটা ঘোরে। স্তব্ধ হয়ে সে দেখে। সমস্ত চিন্তা থেকে কিছুক্ষণের মুক্তি; কিন্তু আলোটা স্থির হতেই চিন্তা ঘিরে ধরে। শব্দ করে শ্বাস নেয় নূর যে শ্বাসে ভর করে কিছু দুশ্চিন্তা উন্মুক্ত হয় বাতাসে। 

‘জানো আলো, কাজ গেছে। ছাঁটাই। নিজের কথাই বেশি ভাবে লোকে। আমিও। এই লকডাউনে চুপচাপ ঘরে বসে।’, একটু থামে নূর। ‘জীবনের সব রসদ শেষ হয়ে এলো।’

আলোর বৃত্ত নিশ্চুপ।

‘বল প্লিজ, আমার খাবার বানিয়ে দেবে?’ 

আলোর বৃত্ত আবার ধীরে ধীরে নড়ে। ডান হাতের পাতাজুড়ে ঘুরতে থাকে। কিছুক্ষণ স্থির রেখে হাতটা সরিয়ে নিতেই বৃত্তটা কোলের ওপর এসে পড়ে। দু’পায়ের সংযোগ স্থলের ওপর ঘোরে বৃত্ত। আনমনা হয়ে দেখে নূর। সময় যেন থমকে থাকে বৃত্তটার ভেতর। এক সময় রশ্মির পথ ধরে বৃত্তটা হারিয়ে যায় আর বিছানায় শুয়ে পড়ে নূর। 

চোখ বন্ধ করতেই অসংখ্য চাকচিক্যহীন পা পিচ রাস্তায় হাঁটে। ধপ ধপ শব্দ করে লুটিয়ে পড়ে ক্লান্ত মানুষরা। ছোটে ট্রেন। রেললাইনে রক্তাক্ত রুটি। কালশীটেময় রক্তের একটা দেয়ালের মধ্যে ঢুকে পড়ে নূর। নিজের শরীরের সমস্ত রক্তই যেন ছিটকে ছিটকে পড়ছে রাজপথে। বন্ধ চোখের ওপর উড়ছে রক্তের এক পর্দা। অস্বস্তিকর অবস্থাটা কাটাতে উঠে বসে নূর। টেনে নেয় ‘বেলা অবেলা কালবেলা’। পাতা ওল্টায়। 

‘ইতিহাস খুঁড়লেই রাশি রাশি দুঃখের খনি

ভেদ করে শোনা যায় শ্রুষার মতো শত-শত জলঝর্ণার ধ্বনি।’ 

নূরের হৃদয় পর্যন্ত কিছুতেই পৌঁছাচ্ছে না সেই ধ্বনি। তবে কি শুনতে না পাওয়ার কৃতিত্বহীনতা তারই? খোলা বইয়ের পাতা। গুম হয়ে বসে থাকে সে। মাথার ভেতর ছেঁড়া ছেঁড়া কতকিছু যাতায়াত করে। শ্রুষার ধ্বনি খুঁজে নিতে হবে। কোথায়, কীভাবে জানে না। জানে না আদৌ ধ্বনির উৎস ছুঁতে পারবে কি-না। 

‘আমি কি পাগল হয়ে যাব?’, এই জিজ্ঞাসা তাকে কাতর করে তোলে। 

‘উফ!’, ভেতর থেকে কিছু উষ্ণ বাতাস উগড়ে স্বস্তি খোঁজে। 

জানলার ওপার অলৌকিক রোদে ভাসছে। এই তপ্ত দুপুরে, এই ঘামে নিষিক্ত শরীর দাঁড়াবে কি রোদের মায়ায়? সেঁকে নেবে জলজ অন্তর? নিংড়ে শুকোতে দেবে স্যাঁতসেঁতে নাছোড় ভাবনা? 

‘আমি পাগল হয়ে যাবো!’ 

নিশ্চিত হয় সে আর টের পায় বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা। ব্যথার অন্তরে কোনো তরলের অবিরল ক্ষরণ কুলকুল শব্দ করে। তীব্র আগুন। ঝলমলে শিখার ভেতর হেঁটে যেতে যেতে নিজের রক্ত-মাংসের গলে পড়া শোনে। সহসা সে অনুভব করে হাড়ে হাড়ে প্রবল কম্পন। আশীরনখ কাঁপতে কাঁপতে সাদা পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে বরফাচ্ছন্ন সীমাহীন উপত্যকার দিকে। বরফে ঢাকা স্ফটিকের মতো সরলবর্গীয় গাছ এক ঝলক দেখতে পায়, কেননা কষ্ট করে চোখের পাতা এক মুহূর্ত মেলতে পারে আর গাছটির নিচে এসে সে স্থির হয়। অবশ পড়ে থাকে। বৃষ্টির শব্দ মেখে আকাশ থেকে নেমে আসা বরফের কুচি এই উপত্যকার সবকিছুর মতো ক্রমে ক্রমে ঢেকে দেয় তাকে। এক শীতল কবরজুড়ে হিম আচ্ছন্নতা। 

কখন সকাল হয়, কখন রাতভর খোলা জানালাজুড়ে ফিনফিনে পর্দা ওড়ে, কখন একাকী চড়ুই এসে বসে দুলন্ত তারে, কখন বাতাস ঢেউ তোলে পতিত জমির আগাছার পাতায় পাতায় আর কখন আলোর ধাক্কায় জাগে নূর- জানে না সে; কিন্তু চেতনার গভীর প্রদেশে অস্ফুটে ঝুলে থাকে এইসব বিবিধ তুচ্ছতা। একটি ভোরের দৈনন্দিন শব্দাবলি কানের ভেতর শুষে নিতে নিতে খুব ধীরে চোখের পাতা খোলে নূর। তখনই সে অনুভব করে অন্তর্গত খিদের মোচড়। ছোট্ট রেন্টাল ফ্ল্যাটের যাবতীয় দেয়াল মৃদু দুলে ওঠে। নিজেকে সে নিঃসঙ্গ বিছানা থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় বাথরুমে আর হাতের পাতায় জল ভরে চোখেমুখে বোলাতে বোলাতে চোখ যায় ডান হাতের পাতায়। হালকা সবুজ আভা। ট্যাপের নিচে হাতের পাতা রেখে ভালো করে ধুয়ে আবার সে দেখে। রঙ লেগে থাকে। সাবানের ফেনা ঘঁষে আবার দেখে হাত। 

‘যাচ্ছে না কেন!’

ক্ষঢু ভাবনা নিয়ে প্রাতঃকৃত্য শেষ করে রান্নাঘরে যায়। খাবারের সমস্ত বয়াম হাতড়ে পায় কিছু গমের আটা। আর্তনাদ করে মেঝেতে ভেঙে পড়ে সুদৃশ্য সিরামিক বাটি। ভেঙে যাওয়া টুকরো কুড়িয়ে রান্নাঘরের তাকে তাকে সাজানো দৃশ্যত সুন্দর শূন্য কাচের বয়ামগুলোর দিকে নিঃস্পৃহ চেয়ে থাকে। ছোট্ট গ্লাস পটে এখনো কিছু নুন অবশিষ্ট। শৈশবের গ্রাম্য স্মৃতি হাতড়ে মনে পড়ে যায় রেসিপি। কোনও খাবার না জুটলে চারটি আটা ধার করে এনে মা বানিয়ে দিতেন। 

নুনজলে অল্প আটা নিয়ে সে বানিয়ে নেয় আটার মণ্ড। দু হাতের পাতায় মণ্ড ঘষে ঘষে নানান আকার দিতে থাকে। তারামাছ, লম্বাটে সুতলি, সুতলিগুলো কখনও চ্যাপ্টা করে দেয়, বানায় ছোট্ট বাতাসা। মনে পড়ে এর নাম, ‘এখে’। মণ্ডে আকার দিতে দিতে হাতের পাতার সবুজ ভাবটা আবার চোখে পড়ে। আটার মণ্ডে রঙ লাগছে না। তাহলে ত্বকেই হয়েছে কিছু। 

রান্নার গ্যাস এখনও শেষ হয়নি। ভাগ্যিস! নুনজল ফুটে উঠলে তার ভেতর ফেলে দেয় এখে। বাকি আটা জলে গুলে বানায় তরল আটা। কিছুক্ষণ এখে ফুটিয়ে তরল আটা ঢেলে দেয় ফুটন্ত জলে। সব মনে পড়ে যায়। শুধু তরল আটা নুনজলে ফোটালে এর নাম হতো ‘দলে’। তবে এখন এই পদটির নাম হল ‘এখে দিয়ে দলে’। অনেকটা জল আর সামান্য আটায় এভাবেই ক্ষিদে মেটাতো শিশু নূর এবং গ্রামের অনেকেই। আরও কতরকম যে ছিল গরীবের খাবার। এখনও নিশ্চয় অনেক প্রান্তবাসীরা এইসব খায়। নূর ভুলেই গিয়েছিল এর স্বাদ, এর যন্ত্রণা, এ স্বাদের দ্রোহ। লকডাউন ফিরিয়ে দিল সেই অনুভব, প্রান্তবাসীর যন্ত্রণা। 

বাটিতে করে সুপের মতো ‘এখে দিয়ে দলে’ খেতে খেতে অসুস্থ বোধ করে নূর। করোনা হয়ে গেল নাকি? কপালে তালুর উল্টোদিক স্পর্শ করে উত্তাপ নেয়। নেই। তবুও ভয় ও দুশ্চিন্তা ছেঁকে ধরে। যতটা না করোনার জন্য তার থেকে বেশি রোজগারের সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে। মা-বাবাকে টাকা পাঠানো বন্ধ হলে চলবে না। যেটুকু জমানো আছে সেখান থেকেই মাসে মাসে পাঠাতে হবে। ভাইবোনের হঠাৎ প্রয়োজনের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। বাড়িভাড়া, ইলেকট্রিক বিল, মোবাইলের খরচ কিছুই কমবে না। বাড়িওয়ালাকে বলেও ভাড়া কমানো যায়নি। বাকি দুটি সংগঠিত কোম্পানি। ওদের খরচ কমাতে বলার কোনও রাস্তাই খোলা নেই। ওদের কান অব্দি পৌঁছালেও মন অব্দি পৌঁছানোর সম্ভাবনা নেই। ফলে খাওয়া খরচে কোপ ফেলা ছাড়া উপায় নেই। চাকরি যাওয়ার পর নিজের মাসিক খরচ এক-তৃতীয়াংশ করে ফেলেছে। মাসে এর থেকে এক টাকাও বেশি খরচ করবে না। একমাত্র উপায়, না খেয়ে থাকা। 

বন্ধুবান্ধবদের জানালে সাহায্য করবে না? নিশ্চয় করবে; কিন্তু এই মুহূর্তে কার অবস্থা কেমন জানে না। যারা মোটা মাইনে পায় তাদের খরচও বেশি। হয়তো ইএমআই দেয় অনেককিছুর। ওদের মাইনেও কমেছে। তাদের কাছে হাত পাতা যাবে না। লকডাউন পীড়িত মানুষের জন্য অনেকে লঙ্গরখানা খুলেছে। শেষে কি সেখানে গিয়ে দাঁড়াতে হবে? লজ্জায় কুঁকড়ে যায় নূর। 

‘Neo poor! নব্য দরিদ্র। সব ছিল। কিন্তু ফুউউস... এখন নেই’, ভাবে নূর। 

আলোর ফালিটা আবার এসেছে। বৃত্তটা হাতে নিয়ে খেলা করতে করতে আলোর সঙ্গে কথা বলে নূর। আলোর বৃত্তটা হাতের পাতায় তুলে চুলের ভেতর মেখে নেয়, স্পর্শ করে চোখের পাতায়। একবার এ হাতে একবার ওহাতে। ছোট্ট একটা আলোর বল গড়িয়ে গড়িয়ে যেতে থাকে এহাত-ওহাত। 

‘কিন্তু দেখ, কেউ বিশ্বাসই করবে না দরিদ্র বলে। জামাকাপড়, জুতো, মেকআপ কিট সব ব্র্যান্ডেড। নামি ব্র্যান্ড। অর্থ জমিয়ে এক এক করে কিনেছিলাম।’, এহাত থেকে ওহাতে আলো ঢালতে ঢালতে বলে নূর। 

‘মাঝে মাঝে পার্লারে গিয়ে চুল ও ত্বকে মাঞ্জা দিতাম। সাজতে ভালোই লাগে। সুন্দরী মনে হয়। যদিও ছোটবেলা থেকে কেউ আমাকে সুন্দরী বলেনি। বরং আমি কত কুৎসিত সেটাই শুনেছি। বহুজাতিক কোম্পানিতে সামান্য চাকুরে হিসেবে কাজ করলেও এসব দরকার হয়। উচ্চাশাও বাড়ে। তবে অন্যের ক্ষতি করে উচ্চাশা করিনি।’ 

চুলের গুচ্ছ আলোর ভেতর ডুবিয়ে দেয় নূর। 

‘যদিও অনেকবার ভেবেও ফ্ল্যাট কেনার সাহস করিনি। অত ইএমআই দিতে গেলে বাড়িতে পাঠানোর টাকায় টান পড়তো। অসন্তুষ্ট হতো সবাই। সিদ্ধান্তগুলোও কেমন ভীরু। পিছনে টেনে রাখে। তাই না?’ 

হাতের পাতায় টলমলে আলোর ভেতর ঠোঁট ছোঁয়ায়, যেন চুমু খায়।

‘আর বিয়ে। এই প্রতিষ্ঠানে নাম লেখাতে চাইনি। বান্ধবীদের দশা দেখে। মা-বাবা ছোটবেলায় বিয়ে দিলে কতগুলো সন্তানের মা হতাম বলা মুশকিল। জীবন খুঁড়ে এভাবে দেখা হতো না, আমি নিশ্চিত।’ 

আলোটা ঘুরে ঘুরে সারা দেহে আদর বুলায়। অসুস্থ ভাব সহসা কেটে যেতে থাকে। নিহিত শূন্যতায় চঞ্চলতার বোধ। রশ্মির পথ ধরে ফিরে যায় আলো। 

‘কোন ছায়াপথ থেকে আসো তুমি আলো? নাকি তুমি নেবুলার স্মৃতি?’ 

 ভাবতে ভাবতে স্নানঘরে ঢুকে যায় নূর। শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক অনুভব বিষাদ টপকে উপচে পড়তে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসজুড়ে নরম রোদের সুবাস। শাওয়ার নিঃসৃত জলে নিহিত পাতাল স্পর্শ। শরীরময় দূরের হাতছানি। হাতের দুই তালু ঘন সবুজ। স্নানঘর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে নূর। ভিজছে মেঝের মার্বেল। নগ্ন দাঁড়ায় আয়নার বুকে। সবুজ চুল, যোনি কেশ, বাহুমূল। আচমকা এক ভয় হানা দেয়। 

‘আমি কি পাগল হয়ে গেছি? ত্বকে কী হয়েছে আমার?’ 

কিছুক্ষণ আগের সতেজ ভাব কেটে যায়। অসুস্থ মানুষের মতো ত্বক, চুল, তালু ঘঁষে ঘঁষে রঙ সরানোর চেষ্টা করে। রং থাকে আগের মতোই। চরম বিধ্বস্ত মনে ক্রমশঃ সে টের পায় ভেঙেচুরে যাচ্ছে অন্তর। অশান্ত এক কষ্ট এই ঘন রঙের মতোই চেপে বসে যেতে থাকে। কষ্টের ভেতর ডুবে যেতে যেতে অজানা কোথাও হেঁটে যাওয়ার তীব্র তাগিদ অনুভব করে সে। সময় এগোয়। গভীর তাগিদে বাইরে যাওয়ার দরজা খুলে বের হয় নূর। দাঁড়ায় নির্জন পথে। কোথাও যেন এক্ষুনি পৌঁছতে হবে। সামনে পা বাড়ায়। 

পায়ের স্পর্শে স্পর্শে জন্ম নেয় পথ। আদিম ধুলোয় পা ডুবিয়ে হাঁতে হাঁটতে নিজেকে নিরস্ত করার কোনো ইচ্ছেই জাগে না। কোনো এক ঘন নাছোড় রসায়ন তাকে টেনে নিয়ে চলে। রাস্তা তাকে নাকি সে-ই রাস্তাকে নিয়ে যায় প্রশ্ন সাপেক্ষ। অন্তর্গত তীব্র তাগিদ এনে ফেলে এক সমতলে যেখানে সে দেখে সেইসব চাকচিক্যহীন পা। দেখে তারই মতো সবুজ মানুষ। দেখে তাদের সমস্ত চুল নানান পাতার আকার নিয়েছে। দেখে বোধি প্রাপ্ত সবুজ চোখ। মানুষ গাছেরা হাসি মুখে অভ্যর্থনা জানায়। ছুঁড়ে দেয় বন্ধুত্বের রসায়ন। কেউ কারও অপর নয়, যেন কত যুগের যৌথ যাপনে অভ্যস্ত এই মানুষেরা। 

দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাসও। তারার আলোয়, চাঁদের সান্নিধ্যে, হাওয়ার ঘ্রাণে, শেকড়ে জলের শব্দে নূরের অন্তরের সবুজ পাতাগুলো কুঁড়ির মতো ফুটে উঠতে থাকে। পাতাগুলো বড় হয় আর বসন্ত আসে অথবা আসে না। অন্তঃস্থল থেকে জেগে ওঠে ফুলের গুচ্ছ। 

দাস হয়ে থাকার কাল তারা পেরিয়ে এসেছে। এই মানুষ-বনভূমির সবার মতোই খাদ্যের বিষয়ে এখন স্বনির্ভর নূর। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh