প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০১:০৫ পিএম
প্রতীকী ছবি
করোনাভাইরাস কিভাবে এলো তা নিয়ে এতদিন ধরে কম আলোচনা হয়নি। নানা ধরনের তত্ত্ব বাজারে এসেছে। কেউ বলেছে, চীনের উহানে সামুদ্রিক বাজার থেকে, কেউ বলেছেন বাদুর থেকে, আবার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো অনেকে অভিযোগ করেছেন, চীনের গবেষণাগার থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। চীন এই দাবি বারবার অস্বীকার করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর আগে বিজ্ঞানীদের একটি দল গঠন করে চীনে পাঠিয়েছিল। কিন্তু তারাও নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি ভাইরাসের উৎপত্তি কীভাবে হলো।
তারা চীনের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, সম্ভবত বাদুর থেকেই এই ভাইরাস এসেছে। তবে এনিয়ে আরও গবেষণা দরকার। যুক্তরাষ্ট্রও বিশেষজ্ঞদের দল গঠন করেছিল একই লক্ষ্য নিয়ে।
করোনার উৎস সন্ধানে ২৬ জন বিজ্ঞানী নতুন একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নাম রাখা হয়েছে সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অন দ্য অরিজিনস অব নভেল প্যাথোজেনস (সাগো)। তারা করোনা কিভাবে, কোথা থেকে এলো, তা জানার চেষ্টা করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনার উৎপত্তি জানার এটাই শেষ সুযোগ। তারা চীনকে প্রথম থেকে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতার জন্য আবেদন জানিয়েছে।
ডব্লিউএইচও’র এবারের টাস্কফোর্সে অবশ্য সবাই নতুন নয়। চীনে তদন্ত করতে যাওয়া আগের দল থেকেও ছয়জন রয়েছেন এতে। সাগোর সদস্যরা করোনা ছাড়াও ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে— এমন জীবাণু নিয়েও তদন্ত করবেন। ডব্লিউএইচওর প্রধান ডা. তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেন, আগামী দিনে নতুন কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে নতুন জীবাণুগুলো কোথা থেকে আসছে, তা বোঝাপড়া করা দরকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মারিয়া কারখভ বলেছেন, আরও ডজন তিনেক সমীক্ষা চালাতে হতে পারে। উহানে যারা প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাটাও খুব জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জার্নালে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে করোনার প্রথম ঘটনা নজরে আসে। মারিয়া বলেন, সেই সময় রক্ত পরীক্ষার স্যাম্পেল, প্রথম দিকের রোগীদের সম্পর্কে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখাটাও জরুরি। এটাই আমাদের করোনার উৎস খোঁজার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো সুযোগ ও সম্ভবত শেষ সুযোগ।
নতুন টাস্কফোর্সের বিষয়ে ডব্লিউএইচওর জরুরিবিষয়ক পরিচালক মাইকেল রেয়ান বলেন, করোনার উৎস সন্ধানে সাগোর তদন্তই হবে শেষ সুযোগ।
আর জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত চেন শু বলেছেন, সাগোর তদন্তকে ‘রাজনৈতিকীকরণ’ করা যাবে না। এর আগে দুইবার চীনে দল পাঠিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীনের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে একটি যৌথ রিপোর্টও দেয়া হয়েছে। আর কোনো দলের চীনে যাওয়ার দরকার নেই। বরং অন্য দেশে দল পাঠাক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
তার মতে, কোনও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যেন দল গঠন করা না হয়। বিজ্ঞানের স্বার্থে, বিজ্ঞানের জন্য যেন দল গঠন করা হয়।
সায়েন্স সাময়িকীতে এক যৌথ সম্পাদকীয়তে তেদ্রোস ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্য কর্মকর্তারা বলেছেন, একটি গবেষণাগারের দুর্ঘটনা বাতিল করে দেয়া যায় না।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথম মাসে সংগ্রহ করা লাখো মানুষের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন- সিএনএন এমন প্রতিবেদনে প্রকাশ করার পরপরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন টাস্কফোর্সের ঘোষণা এলো।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের শেষ ভাগে করোনা ছড়িয়ে পড়ার শুরুর দিকে সংগ্রহ করা দুই লাখের বেশি রক্তের নমুনা নতুন করে পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছে চীন। এসব নমুনা উহান ব্লাড সেন্টারে সংরক্ষণ করা রয়েছে। এ পরীক্ষা করোনার উৎস ও কখন, কীভাবে এটি মানবদেহে ছড়িয়েছে, সেসব নিয়ে আরও সুনির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ তথ্য জানাতে পারবে।