১১০ দিনে বিনা-১৭ ধানের বাম্পার ফলন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০১:৪১ পিএম

ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

ময়মনসিংহ অঞ্চলে চলতি আমন মৌসুমে চাষ করা স্থানীয় জাতের ধানের এখনো থোর বের হয়নি অথচ বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউ (বিনা) উদ্ভাবিত আগাম জাতের বিনাধান-১৭ এর কর্তন শুরু হয়েছে। স্বল্প সময়ে ভালো ফলনে এ ধানকে ঘিরে কৃষকদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। খরা সহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকালীন ও অধিক ফলনশীল বিনাধান-১৭ এর বাম্পর ফলন দেখে বেজায় খুশি কৃষক।

পাখির চোখে এমন দৃশ্য দেখে সহজেই বুঝা যায় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে সবুজের মাঝে এক খণ্ড জমিতে সোনালী বিনাধান-১৭ যেন চাঁদর বিছিয়ে রেখেছে। চলতি আমন মৌসুমে ময়মনসিংহ অঞ্চলে স্থানীয় জাতসহ রোপন করা বিভিন্ন জাতের ধান গাছে এখনো থোরই বের হয়নি। মাঝে মধ্যে একটা দুইটা শীষ গজালেও পরিপক্ক হতে আরো দেড় মাস লেগে যাবে। অথচ একই সময়ে চাষ করা বিনাধান-১৭ এখনই পেকে গেছে। ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিনাধান-১৭ কর্তন শুরু হয়েছে।

জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নের কোনাগাঁও কেজাইকান্দা গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউ (বিনা) থেকে ১০ কেজি বীজ নিয়ে ১৫ শতাংশ জমিতে বিনাধান-১৭ রোপন করেছিলেন। এখন ক্ষেতে বাম্পার ফলন হয়েছে। আশপাশের অন্য ক্ষেতের ধানে থোর না আসলেও বিনাধান-১৭ পেকে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামীতে পুরো জমিতে বিনাধান-১৭ লাগানোর ইচ্ছা রয়েছে।  

কৃষিবিদ একেএম আজিজুল হক দুদু বলেন, ৫২ শতক জমিতে বিনা-১৭ চাষ করেছি। প্রথমে একটু ভয় ছিল ধানকে ঘিরে। রোপনের পর ফলন ভালো হওয়ায় আশা জাগিয়ে তুলেছে বিনাধান-১৭। এলাকার অনেক কৃষক আগামীতে এ ধান চাষ করার জন্য পরামর্শ নিচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে কয়েক বছরের মধ্যে এটি বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আশ্বিন মাসে বিনাধান-১৭ কর্তন করতে পেরে ভালো লাগছে। সাধারণত অগ্রায়ন মাসে আমরা আমন ধান কর্তন করে থাকি। এ ধানগুলোর ছড়া অন্য ধানের ছড়ার চেয়ে বেশ বড়। ধানের রংও ভালো। আশা করছি দামও ভালো পাব।

কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেকেই বিনাধান-১৭ রোপন করার সময় তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করেছি। কিন্তু আজকে তারা ধান কাটছে। আর আমাদের ক্ষেতে এখনও থোরই হয়নি। আগামীতে আমরাও বিনাধান-১৭ রোপন করব।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ও বিনাধান-১৭ এর উদ্ভাবক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, চীন, ইরি এবং বিনা যৌথ গবেষণা করে অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে বিনাধান-১৭ উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই ধানটি রোগ বালাই সহনশীল, এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার ও অর্ধেক পানি সাশ্রয়ী এবং খরা সহিষ্ণু হওয়ায় আগাম ও অধিক ফলনশীল বিনাধান-১৭ কে ‘গ্রীণ সুপার রাইস’ বলা হয়। এই ধানটি ‘মেগা ভ্যারাইটি’ হবে।

প্রতি হেক্টর জমিতে ৮ টন ধান পাওয়া যায়। রোপনের ১১০ দিনে ধান কাটা যায়। একই জমিতে বিনাধান-১৭ করে আরো কমপক্ষে তিন থেকে চারটি ফসল অতিরিক্ত করে বোরো আবাদ করা সম্ভব। এতে করে কৃষকদের আয় বাড়বে। ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে চ্যালেঞ্জ নেয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে বিনাধান-১৭ সারা দেশ ব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ময়মনসিংহ অঞ্চলেও এই ধানটি দিনদিনই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh