বজ্রপাতে বাড়ছে মৃত্যু
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০৭:৫৩ পিএম
সেমিনারে বক্তারা
কৃষকের জীবন বাঁচাতে দেশের প্রতিটি হাওরে বজ্র নিরোধক টাওয়ার ও আগাম বার্তা পৌঁছে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) আইডিবি রিসার্চ ও টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক আয়োজিত ‘বজ্রপাত জনিত জাতীয় দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি থেকে জানমাল রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এ দাবি জানান।
ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ এর সভাপতি একেএমএ হামিদের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন, সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড. কবিরুল বাশার।
সেমিনারে পূর্বাভাস ও সুরক্ষার কৌশল শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন। প্রবন্ধে বাংলাদেশের বজ্রপাত প্রবণতার মূল কারণ হিসেবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন জঙ্গল উজাড়, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রবাহ, উত্তরের হিমালয়ের পাদদেশে পুঞ্জীভূত মেঘ, মেঘ সৃষ্টির প্রক্রিয়া কিউমোলো নিম্বাস, মোবাইল টাওয়ার হতে উৎপন্ন অতি মাত্রার ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও ওয়েবকে দায়ী করা হয়।
এছাড়া, প্রবন্ধে মৃত্যুর হার অনুযায়ী দেশের শীর্ষ ১০টি জেলার কথা উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলো- সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, শেরপুর ও জামালপুর।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, কৃষকদের জান-মাল রক্ষায় খুব শিগগিরই হাওরে আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। সেখানে কৃষক সুপেয় পানিপানসহ বিশ্রাম নিতে পারবেন।
সেমিনারের বক্তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আপনাদের দাবির সাথে আমি একমত। হাওরের কৃষকদেরকে জানমালের কথা চিন্তা করে সরকার ৪৩০ কোটি টাকা প্রজেক্ট রেডি করেছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
কিশোরগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে বজ্রপাতের সংখ্যা বেশি। বিদ্যুৎ সব সময় পরিবাহী চায়। তাই আকাশের এই বজ্র যখন মাটির দিকে আসে তখন সবার ওপরে থাকা বিদ্যুৎবাহী বস্তুর ওপর পড়ে। এক্ষেত্রে বড় কোনো গাছ থাকলে তার ওপর পড়ে। বজ্রপাত মোকাবেলায় লম্বা প্রজাতির গাছ লাগানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বজ্রনিরোধক টাওয়ার নির্মাণ করতে গিয়ে যেন হাওরের সৌন্দর্য্যে ব্যাঘাত না ঘটে। হাওর এখন পর্যটক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্ট্রর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম (এসএসটিএএফ) এর প্রেসিডেন্ট এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. কবিরুল বাশার বলেন, দেশের হাওর অঞ্চলগুলোতে বেশি বজ্রপাত হওয়ায় দ্রুত ওইসব অঞ্চলে আগাম বার্তা ও বজ্রনিরোধক টাওয়ার নির্মাণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের সাড়ে ৯ মাসে বজ্রপাতে ৩৪৯ জন লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবে নিহতদের বেশিরভাগই কৃষক। কারণ তারা মাঠে কাজ করতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজে। কাছাকাছি বড় গাছ না থাকায় কৃষকের ওপর পড়ে মৃত্যু হয়। এমতাবস্থায় দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখতে যারা নিরলস পরিশ্রম করেন সেই কৃষক ভাইদের জানমাল রক্ষায় প্রতিটি হাওরে সরকারি বা বেসরকারিভাবে বজ্রনিরোধক টাওয়ার নির্মাণ খুবই জরুরি। বজ্রপাতের চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ১৭৭ জনের মধ্যে ১২২ জনই কৃষি কাজ করা অবস্থায় মারা যান।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুর হার যতটা তার চেয়ে অনেক বেশি মৃত্যুহার বজ্রপাতে। এ সময় তিনি তার সংগঠন সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্ট্রর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন- বজ্রপাত হওয়ার অনেক আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর কোন কোন এলাকায় বজ্রপাত হবে তা জানতে পারেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর এই তথ্যটি সংশ্লিষ্ট এলাকার সবার মোবাইল মেসেজ জানানোর ব্যবস্থা, হাওর, বাঁওড়, খোলা মাঠে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, দেশীয় প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা, বাড়ি বাড়ি বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপনের জন্য রাজুকের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি, ভবনের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপনের বিষয়টি আরো গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ‘পোর্টেবল এফএম ট্রান্সমিটার ডিভাইস’ এর মাধ্যমে আগাম সতর্ক বার্তা দেয়া সম্ভব এমন একটি প্রযুক্তি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিবি রিসার্চ ও টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের আব্দুল্লাহ আল আরাফ। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সরকারি মোকাবিলা টিমের সদস্যরা দুর্যোগ আসার পূর্বে মাইক অথবা হুসেল বাজিয়ে সবাইকে জানান দেয় এতে করে অনেক সময় কমিউনিকেশন গ্যাপ থেকে যায়। আর এই দুর্যোগের আগে বা পরে আমাদের মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। ওই মুহূর্তে একমাত্র রেডিও সিগন্যাল কাজ করে। তখন আমরা রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করে পোর্টেবল এফএম ট্রান্সমিটার ডিভাইস ব্যবহার করে দুর্যোগের বিভিন্ন তথ্য প্রচার করেতে পারবো।