লাগামছাড়া দ্রব্যমূল্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১১:৫৮ এএম
প্রতীকী ছবি
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সারাদেশে প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। পেঁয়াজ, চাল, আটা, ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, ডিম, সবজি কোনো কিছুই এর বাইরে নয়। পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হোটেল, রেস্তোরাঁতেও এর প্রভাবে খাবারের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ এ মুহূর্তে দেশে দাম বৃদ্ধির তেমন কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। বন্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, পরিবহন সংকট ও আন্তর্জাতিক মার্কেটে দাম বৃদ্ধির মতো কোনো ঘটনাও ঘটেনি; কিন্তু তারপরও বিশেষ করে রাজধানীর বাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এমনিতেই কোভিড-১৯ মহামারির কারণে নিদারুণ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি মানুষ। এর ওপর এই অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির বোঝা বেশিরভাগ মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে পড়েছে।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতির বক্তব্য অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় স্থানীয় বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেশি। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দামের অজুহাত আসলে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে অর্থনীতিবিদরা প্রধান প্রধান নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঝুঁকির জন্য বিদেশের বাজারের ওপর নির্ভরশীলতাকে দায়ী করে থাকেন। এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ জন্য কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভর্তুকি এবং সরকারের মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খুচরা বাজারে বিক্রির ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। করোনাকালে শহর ও গ্রামে উভয় এলাকার সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। তাই টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রম শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বিস্তৃত করতে হবে।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে গেলে সরকার আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষা করে থাকে; একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব।
তবে বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল শুল্ক কমিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যাবে না। এ জন্য উন্নত বিপণনব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে কৃষকের বাজার বা বিপণনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিক্রি করতে হবে। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন।
এ ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে বাজারে তদারকি বাড়ানো এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সীমিত আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। বিশেষ করে করোনাকালে যাদের আয় কমে গেছে। সেই সঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাও বাড়াতে হবে। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে ভোগ্যপণ্যের দাম যেমন কমাতে হবে, তেমনি তাদের আয় বাড়ানোর সুযোগও তৈরি করতে হবে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের উচিত অবিলম্বে এই বিষয়ে নজর দেওয়া এবং যেসব ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ আদায় করছে, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।