সাফে হন্তারক সেই নেপাল, সঙ্গে রেফারি

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০১:৫৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্নটা এবার একটু বড় করে দেখেছিল বাংলাদেশ। সর্বশেষ চারটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর আশাহত না হয়ে আশাবাদী হয়েছিল ফুটবলপ্রিয় মানুষ। দুই বছর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে তৃতীয় বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর পরই জেমি ডেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় অস্কার ব্রুজোনকে।

বসুন্ধরা কিংসের এই কোচও পারেননি সাফ ফুটবলে বাংলাদেশকে ফাইনালে নিয়ে যেতে। টানা দুই ম্যাচে রেফারিরা বাংলাদেশকে জ্বালিয়ে ছেড়েছে। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা রাজ্যের হতাশা আর কষ্ট নিয়ে উজবেকিস্তানের রেফারি আর আখরোলকে ঘিরে ধরেন। যদিও কিছু বলার আগেই খেলা শেষে তৈরি থাকা মালদ্বীপ পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দর্শকদের মধ্যেও।

কষ্টে ফেটে পড়ে তারা রেফারিদের গালাগাল করতে থাকেন; কিন্তু একজন সেখানে একেবারেই আলাদা হয়ে কাঁদতে কাঁদতে হয়রান হয়ে পড়েন। তিনি মোহাম্মদ মহসিন। জাতীয় দলের এই টিম এটেনডেন্ট গত দুই দশক ধরে দলটির সঙ্গে রয়েছেন। আনন্দের চেয়ে কষ্টই বেশি পেয়েছেন তিনি; কিন্তু নেপাল ম্যাচের পর যেভাবে চোখের পানি ফেলেছেন তাতে করে দেশের প্রতি তার ভালোবাসা আর মমত্ববোধই প্রকাশ পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মহসিনের ছবিগুলো বেশি করে শেয়ার করেছেন মানুষ। টানা পাঁচটি সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া বাংলাদেশ তাই এখন খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি দল। ৮৭ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলের লিড ধরে রেখেও জয় নিয়ে ফাইনালে ওঠা হয়নি জামাল ভূঁইয়ার দলের। 

এবারও হন্তারক সেই একই দল, নেপাল। ২০১৮ সালের ঘরের মাঠে এই নেপালের বিপক্ষে যেখানে ড্র করলেই ফাইনাল নিশ্চিত ছিল বাংলাদেশ দলের, সেই ম্যাচটা ২-০ গোলে হেরে গিয়েছিল। এবার নেপালের যেখানে ড্র প্রয়োজন ছিল, সেখানে বাংলাদেশের জয়। প্রয়োজনীয় ১ পয়েন্ট নিয়ে ইতিহাসে প্রথমবার পৌঁছে গেল ফাইনালে। বাংলাদেশ পারেনি ১৬ বছরের আক্ষেপ ঘুঁচিয়ে আবারও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জায়গা করে নিতে। আরেকবার কষ্ট, কান্না আর হতাশা নিয়েই দেশে ফিরে আসতে হবে। অথচ বাংলাদেশের ফাইনালে খেলার মঞ্চটা যেন তৈরিই ছিল; কিন্তু সেখানে ওঠা হয়নি অস্কার ব্রুজোনের শিষ্যদের। নেপালের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় উজেবিকস্তানের রেফারি। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর লালকার্ড থেকে শুরু করে একেবারে শেষমুহূর্তে পেনাল্টি সবই যেন পরিকল্পনা করেই হয়েছে।

তবে একে অনেকেই টুর্নামেন্টের ফাইনালটাই নেপালকে উপহার দিলেন রেফারি, বলে মন্তব্য করেছেন। আর তাতেই স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় আরেকবারের জন্য পুড়তে হলো বাংলাদেশের। মাঠে রেফারির পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ম্যাচ শেষে গড়িয়েছে সংবাদ সম্মেলন পর্যন্তও। বাংলাদেশ কোচ অস্কার ব্রুজোন তো অনেকটা সরাসরি জানিয়েই দিলেন, ভারত ম্যাচের পর থেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে অদৃশ্য শক্তি কাজ করেছে। বাংলাদেশকে যারা ফাইনালে দেখতে চায়নি তারাই মালদ্বীপের পর নেপাল ম্যাচেও একই কাণ্ড ঘটিয়েছে। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা সাফের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দু’জনই বাংলাদেশের। সভাপতি আবার বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। আর সাধারণ সম্পাদক বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল। সর্বোচ্চ পদে এই দু’জন থাকার পরও বাংলাদেশের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়নি।

ব্রুজোনের কথা ধরে এগোলে বলতে হবে, মালদ্বীপ ম্যাচ থেকেই রেফারি বাংলাদেশের বিপক্ষে বাঁশি বাজিয়েছে। সেটি অব্যাহত ছিল ’সেমিফাইনাল’ ম্যাচ হিসেবে গুরুত্ব পাওয়া নেপালের বিপক্ষে ম্যাচেও। এর আগে ২০০৫ সালে সর্বশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্টে একমাত্র শিরোপা জয় তারও দুই বছর আগে ২০০৩ সালে।

রাকিব হোসেনের অমার্জনীয় ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ডি বক্সের বাইরে বেরিয়ে এসে ইচ্ছে করে হাতে বল না লাগালেও দেশসেরা এই গোলরক্ষককে লালকার্ড দেখান রেফারি। একটা বিতর্ক শেষ হওয়ার মিনিট কয়েক পরই আরেকটা চরম বিতর্কের জন্ম দেন রেফারি ও লাইন্সম্যানরা মিলে। ৮৮ মিনিটে ডি বক্সের ভেতরে অঞ্জন বিস্টাকে হেড নিতে বাধা দিয়েছিলেন সাদ উদ্দিন; কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অঞ্জনকে নাকি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন তিনি; কিন্তু রিপ্লেতে পরিষ্কারভাবে দেখা মেলে সাদ আসলে তাকে ধাক্কা দেননি। অনেকটা পেনাাল্টি আদায় করে নেওয়ার মতো অভিনয় করেই বিস্টা নেপালকে ফাইনালে নিয়ে গেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ পেনাল্টিতে গোল করতে এতটুকু ভুল করেননি অঞ্জন। কেবল রেফারির সমালোচনা করতে ছাড়েননি বাংলাদেশ কোচ, সেইসঙ্গে এক হাত নিয়েছেন নেপালের খেলোয়াড়দেরও। তাদের প্রতারক হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ। এর আগে গত আগস্ট মাসে এএফসি ক্লাব কাপে একই পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়েছিল বসুন্ধরা কিংসকে।

একই ভেন্যুতে কষ্টটা আরও একবার পেল লাল-সবুজ ফুটবলাররা। ভারতীয় ক্লাব মোহনবাগান এফসির বিপক্ষে ম্যাচে এভাবেই এক গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত দশজন নিয়ে ড্র করেছিল বসুন্ধরা কিংস। এই ড্রয়ের ফলে কিংসের বদলে মোহনবাগান টুর্নামেন্টের পরের রাউন্ডে জায়গা করে নেয়। এর ঠিক দুই মাস পর জাতীয় দলেও একই ঘটনার শিকার হন অস্কার ব্রুজোন। এই ম্যাচেও তার দল দশজনে পরিণত হয় এবং টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা। এবার বিদায় নিয়েছে লাল-সবুজ জাতীয় দল।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh