নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০৫:৪৯ পিএম | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০৬:১৭ পিএম
মো. সৈকত মন্ডল (২৪) ও মো. রবিউল ইসলাম (৩৬)
নিজের ফেসবুক ফলোয়ার বাড়ানো এবং সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে রংপুরের পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মইন।
রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার অন্যতম হোতা মো. সৈকত মন্ডল (২৪) ও সহযোগী মো. রবিউল ইসলামকে (৩৬) গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পেয়েছে র্যাব।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) দিবাগত রাতে তাদেরকে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়াতে এবং নিজেকে জনপ্রিয় বানাতে প্রায়ই উস্কানিমূলক পোস্ট দিতো রংপুরের স্নাতকের শিক্ষার্থী সৈকত মন্ডল। সবসময় দুর্বল সময়ের অপেক্ষায় থাকতো সে। এই সুযোগ হিসেবে কুমিল্লায় পূজামন্ডপের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে বেছে নেয় সে। এজন্য সেদিন রাতে ফেসবুকে সৈকত মন্ডল পোস্ট দেয়- ‘এ মুহূর্তে গ্রাম পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সংবাদ, হিন্দুদের আক্রমণে এক মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে’। তার এই পোস্টকে ছড়িয়ে দিতে রংপুরের পীরগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাসের এলাকার পাশের মসজিদে মাইকিং করে রবিউল ইসলাম। এরপরই স্থানীয় সাধারণ মানুষ উত্তেজিত হয়ে হিন্দুদের ঘর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাট করে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টায় কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী এবং রংপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উস্কানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টা করছে চক্রান্তকারীরা। এ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অভিযানে প্রায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করে ইতোমধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে দুর্বৃত্তরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর, দোকানপাট ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই ঘটনায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে রংপুরে পীরগঞ্জ থানায় ৩টি মামলা দায়ের হয়। এই প্রেক্ষিতে র্যাব-১৩ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। গ্রেফতারকৃতদের তথ্যে হামলায় নেতৃত্বদান ও ঘটনা সংগঠিত করার সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানা যায়। ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৩ এর একটি আভিযানিক দল গত ২২ অক্টোবর রাতে টঙ্গী এলাকা থেকে পীরগঞ্জে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা মো. সৈকত মন্ডল (২৪) ও সহযোগী (২) মো. রবিউল ইসলাম (৩৬) কে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতাকৃতরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অরাজকতা তৈরির ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার এবং মাইকিং করে হামলাকারীদের জড়ো করে বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত সৈকত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উস্কানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে উত্তেজিত করে তোলে। এছাড়া সে উক্ত হামলা ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। সে গ্রেফতারকৃত রবিউলকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করতে নির্দেশনা দিয়েছিলো বলে জানায়। ঘটনার পর সে আত্মগোপনে চলে যায়।
র্যাব কমান্ডার আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত রবিউল ওই হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পূর্বে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মাইকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও মিথ্যাচার করে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তোলে ও উক্ত হামলায় অংশগ্রহণের জন্য জড়ো হতে বলে। অতঃপর সে মাইকিং এর দায়িত্ব তার আস্থাভাজনকে প্রদান করে নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ ও নির্দেশনা প্রদান করে। সে জানায়, গ্রেফতারকৃত সৈকতের নির্দেশনায় ও প্ররোচনায় সে মাইকিং করাসহ হামলায় অংশগ্রহণ করে। ঘটনা পর সে-ও আত্মগোপনে চলে যায়। সে স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াযযিন হিসেবে নিয়োজিত ছিলো।
কী উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছিলো সৈকত মন্ডল- এমন প্রশ্নে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তার (সৈকত) ফেসবুক পেজে ২৭০০-২৮০০ ফলোওয়ার রয়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়েছেন ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সৈকত রংপুরের একটি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। রংপুরে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে নিজে প্রচার করতো। কিন্তু তার কোনো রাজনৈতিক পোস্ট-পদবি ছিলো না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার কোনো সম্পৃক্ততাও আমরা পাইনি।
সৈকত ফেসবুকে কী ধরনের পোস্ট করতো এমন প্রশ্নে কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, সৈকত তার ফেসবুকে পেজে বিভিন্ন ছোট-বড় ইস্যুতে উসকানিমূলক পোস্ট দিতো। মূলত কুমিল্লার ইস্যুর পর থেকেই সে ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলো। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে যখন একটি ঘটনা ঘটে, তখন থেকে সৈকত একের পর এক উসকানিমূলক পোস্ট দিতে থাকে। মূলত তার এসব পোস্ট দেখেই পীরগঞ্জে শত শত লোক জড়ো হয়েছিলেন।