আলো-আঁধারির বিশ্বকাপ

মাহমুদ হাসান

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২১, ০২:২৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

টি-টোয়েন্টি মানেই ধুন্ধুমার ক্রিকেট। বাড়তি লড়াই, রোমাঞ্চ। দাঁতে দাঁত কামড়ে ক্রিকেটে মজে থাকার সময়। আর যদি বিশ্বকাপ হয়? তাহলে তো কথাই নেই। উত্তাপ বেড়ে যায় বহুগুণ। ক্রিকেট উন্মাদনায় মেতে ওঠে বিশ্ব। সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসর। এর আগে ছয়বার মাঠে গড়িয়েছে এই টুর্নামেন্ট। তাতে উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন অনেকে, পুড়েছেন বিষাদেও।

সেসব আলো-আঁধারির গল্প এক নজরে-

বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের রাত

এই দুঃখ প্রকাশের উপযুক্ত শব্দ আসলে কোনটি? দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকতে পারে এ নিয়ে। ম্যাচশেষে তখনকার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন, ‘শেষ তিন বল পর্যন্ত আমরাই এগিয়ে ছিলাম, সিঙ্গেলটা আমাদের নেওয়া উচিত ছিল; কিন্তু যাই হোক, দুর্ভাগ্য।’ এটি যে স্রেফ সান্ত্বনা সেটি নিশ্চয়ই বুঝতে পারার কথা; কিন্তু তাতেও কি আসলে দূর হয় সব কষ্ট? ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। জিততে পারলে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার হাতছানি। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকেই ভারতের বিদায়ের শঙ্কা। শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ১০ রান। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। স্ট্রাইকে এসেই টানা দুই বলে চার হাঁকালেন মুশফিকুর রহীম। শেষ তিন বলে বাংলাদেশের দরকার ১ রান। সহজ জয়ই তো পাওয়ার কথা। পরের দুই বলেই কি না আউট হলেন রিয়াদ ও মুশফিক। শেষ বলে এক রান নিতে পারেননি মুস্তাফিজুর রহমান ও শুভগত হোম। তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটে জন্ম নিল আজন্ম আক্ষেপের এক গল্পগাথা। চোখের জলে লেখা হলো বিশাদের এক হারের কথা।

প্রথম লড়াইটা জিতল ভারত

অনেক নতুনের বিশ্বকাপ ছিল ২০০৭। ওই বছর ওয়ানডে ফরম্যাটের বিশ্ব আসরও ছিল, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেরও। তখনকার বাস্তবতায় একদিনের বিশ্বকাপ নিয়েই আগ্রহ ছিল বেশি; কিন্তু রোমাঞ্চ কম ছড়ায়নি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। ফাইনালেই যেমন, ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য দুই দলের লড়াইটাই যথেষ্ট। সেখানে কি না ম্যাচটা হয়ে গেল টাই! তখনো সুপার ওভারের প্রচলন শুরু হয়নি। বোল আউটে মিলবে সমাধান, কে হবেন চ্যাম্পিয়ন। অর্থাৎ যারা স্ট্যাম্পে হিট করতে পারবেন বেশি বল, তারাই জিতবেন বিশ্বকাপ। ‘বুদ্ধির খেলা’ খেললেন ধোনি। পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক বোলারদের হাতে বল তুলে দিলেও ধোনি দিলেন ভালো ফিল্ডারদের। তারা ভারতকে এনে দিলেন প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের সম্মান।

কখনো বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তাদের

এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্বাগতিক ছিল এই দেশগুলো-দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও ভারত; কিন্তু তারা হয়তো দ্বিতীয়বার নিজেদের দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন করার আগে ভাবতে বসে যাবেন। কেন? স্বাগতিক হয়ে এখনো যে কেউ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলতে পারেননি। তবে অন্তত পরের বার জেতার জন্য হলেও বিশ্বকাপের স্বাগতিক হতে পারেন কেউ চাইলে। ২০১০, ১২ ও ১৪ এই তিন টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছেন আগেরবারের স্বাগতিকরা। ২০১৬ সালে অবশ্য ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার ওই পথে হাঁটতে পারেনি বাংলাদেশ।

তার সেরা হয়ে ওঠার শুরু

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কেমন হবে আদতে? কেবল কি চার-ছক্কাই হবে? ২০ ওভারের ক্রিকেট আবার কেমন! এমন প্রশ্ন, শঙ্কা কিংবা ভয় তখনো কাটেনি পুরোপুরি। অথচ ক্রিস গেইল কি না প্রথম ম্যাচেই জানান দিলেন, এই ফরম্যাটে আর যাই হোক তিনি বেশ উপভোগ করবেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ডেভেন স্মিথকে নিয়ে ক্যারিবীয়ানদের ইনিংস শুরু করেছিলেন ক্রিস গেইল। ৩৪ বলে ৩৫ রান করে ফিরে গিয়েছিলেন স্মিথ। গেইল? ১০ ছক্কা আর ৭ চারে ৫৭ বলে করেছিলেন ১১৭ রান। সেদিন থেকেই যাত্রা শুরু স্বঘোষিত ‘ইউনিভার্স বসের।’

কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, রিমেম্বার দ্য নেইম

ইয়ান বিশপের ভরাট গলার সেই বাক্যটা মনে আছে? ‘রিমেম্বার দ্য নেম, কার্লোস ব্রাথওয়েট’, ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে উচ্ছ্বাসে ভাসতে ভাসতে বলেছিলেন তিনি। দৃশ্যপটটা কি মনে নেই? ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জেতার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ ওভারে দরকার ১৯ রান। বোলিংয়ে আসলেন স্টোকস। ব্রাথওয়েট তখনো এতটা পরিচিত মুখ নন। সেই তিনি একে একে হাঁকালেন চার-ছক্কা। বিমূর্ষ মুখে বসে পড়লেন স্টোকস। দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইয়ান বিশপ নিশ্চয়ই এখন স্বস্তি পাচ্ছেন, ব্রাথওয়েটের নামটা এখনো মনে আছে সবার। শেষ ওভারে কেউ অবিশ্বাস্য কিছু করে দলকে জিতিয়ে দিলে অথবা না পারলে তার নামটাই তো সবার আগে মাথায় আসে!

আক্ষেপের শেষ শ্রীলঙ্কার...

২০০৭ ও ২০১১ দুই ওয়ানডে বিশ্বকাপেরই ফাইনাল খেলেছিল শ্রীলঙ্কা। একটা সোনালি প্রজন্ম তাদের ছিল। কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, তিলকারত্নে দিলশান কিংবা লাসিথ মালিঙ্গার মতো দুর্দান্ত ক্রিকেটাররা ছিলেন। ছিল না কেবল ভাগ্যের ছোঁয়া। দিন দিন বাড়ছিল ওই আক্ষেপও। ২০১৪ সালে এসে শেষ হয় সেটি। বছর তিনেক আগের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের কাছে হারার প্রতিশোধও নেওয়া হয় কিছুটা। তাদের কাছে হেরেই তো শিরোপাটা খুঁইয়েছিলেন সাঙ্গাকারারা। ঢাকায় অবশ্য অপেক্ষা বাড়েনি। আগে ব্যাট করে ভারতের দেওয়া ১৩১ রানের লক্ষ্য ১৩ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখেই জিতে নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh