জলবায়ু সম্মেলন শুরু
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৫৪ এএম
বিশ্ব নেতাদের উপর চাপ প্রয়োগে জলবায়ুকর্মীরা জড়ো হয়েছেন গ্লাসগোতে। ছবি : রয়টার্স
জীবাষ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমিয়ে আনা আর ভুক্তভোগী দেশগুলোর জন্য জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুতি আদায়ের বড় প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ ।
গতকাল রবিবার (৩১ অক্টোবর) স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে শুরু হওয়া এ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমাবেন এবং পৃথিবী নামক গ্রহকে সাহায্য করবেন, তার ঘোষণা দেবেন।
এবারের শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতি যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রী অলোক শর্মা বলেছেন, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি হার এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রিতে বা তার নিচে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে এখিই পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, ছয় বছর আগে প্যারিসে আমরা একটি যৌথ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম, ২০১৫ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈশ্বিক উষ্ণতা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার চুক্তি হয়েছিল। সেখানে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার চেষ্টার কথা বলা হয়েছিল। এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নামিয়ে আনতে হলে কপ-২৬ হচ্ছে শেষ সুযোগ।
তিনি হুঁশিয়ারি করে বলেন, এই পরিকল্পনা যদি সফল না হয় তাহলে উষ্ণ তাপমাত্রায় পুরো পৃথিবী যেমন বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, তেমনি সমুদ্রসীমা বেড়ে অনেক দেশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা যে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের এবারের জলবায়ু সম্মেলনে নানান প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে। সম্মেলনে দুইশর বেশি দেশের কাছে জানতে চাওয়া হবে, কীভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনতে চান।
এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৫ সালের সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন বিশ্ব নেতারা। সেইসঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করার লক্ষ্যমাত্রা নিতে একমত হয়েছিল।
কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পথে আছে, যা জলবায়ু বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এখন সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে ক্ষতির শিকার হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এই সম্মেলন বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার মুহূর্ত।
এর আগে ইতালির রোমে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে চূড়ান্ত আলোচনার আগে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি বলেছিলেন, বিশ্ব নেতাদের এখনই কাজ শুরু করতে হবে। না হলে পরে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে। তিনি একে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস এই সম্মেলনকে ‘শেষ ও চূড়ান্ত সুযোগ’ হিসাবে অভিহিত করেছেন। এই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তিনি।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে দুই সপ্তাহের এই সম্মেলনে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন। সম্মেলন থেকে প্রায় দুইশর বেশি দেশকে অনুরোধ করা হবে যেন তারা কার্বন নিঃসরণে আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন।
এবারের সম্মেলনে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা, যতটা সম্ভব কম গাছ কাটা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে যত বেশি সম্ভব মানুষকে রক্ষার বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমানোর লক্ষ্য পূরণের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে।
এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দরিদ্র দেশগুলো। তাদের একটি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য দরিদ্র দেশগুলোকে গ্রিন টেকনোলজি বা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি করেছিল ধনী দেশগুলো। কিন্তু এজন্য যে অর্থ প্রয়োজন ছিল, এই ধনী দেশগুলো তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপদাহ, বন্যা ও দাবানলের মতো চরম আবহাওয়াজনিত দুর্যোগগুলোর তীব্রতা বাড়ছে। গত দশক ছিল এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ দশক; পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া যে প্রয়োজন, সে বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকাররা একমতও হয়েছে।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নত, উত্তর গোলার্ধ্ব থেকে শুরু করে দক্ষিণ; জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কারো একার মাথাব্যাথার বিষয় নয়। যে দেশগুলো এতদিন নিজেদের নির্ভার মনে করেছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ বৃদ্ধির আঁচ তারাও টের পেতে শুরু করেছে।
চলতি বছরই অস্বাভাবিক দাবানলে পুড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, তুরস্ক। বন্যা দেখা দিয়েছে চীন, জার্মানিতে। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো নিচু দেশগুলো দায়ী না হয়েও আগে থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের ভুক্তভোগী।
জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত এ আয়োজন যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত হওয়া অন্যতম বড় সম্মেলন। সম্মেলনটি গত বছর হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এক বছর পিছিয়ে যায়।
ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ
প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিল আদায় সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রধান লক্ষ্য থাকবে ৷ এই বিষয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা ৪৮টি দেশের জোট ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) চেয়ারপারসন হিসাবে গ্লাসগো সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে গত শনিবার (৩০ অক্টোবর) ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো অঙ্গীকার করেছিল, জলবায়ু তহবিলে ২০২০ থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে। আমরা চাই, এবার সেটির বাস্তবায়ন হবে।
পাশাপাশি তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে ‘ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশনস (এনডিসি)’ ঠিক করা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়াতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টিও সম্মেলনে তুলে ধরবে বাংলাদেশ। -বিবিসি ও ডয়চে ভেলে