ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২১, ১২:৪২ পিএম
জো বাইডেন
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে চীন ও রাশিয়ার নেতারা অংশ না নেয়ায় তাদের সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) রাতে দেয়া বক্তব্যে বাইডেন বলেন, জলবায়ু একটি বিশাল সমস্যা এবং চীন এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। রাশিয়া ও পুতিনের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কেউই এই সম্মেলনে অংশ নেননি। তবে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত দুই সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত এই সম্মেলনের আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য দুই দেশই তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।
বিশ্বে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণকারী দেশ চীন, তাদের পরের স্থানেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান পাঁচ নম্বরে। তিন ও চারে রয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ভারত।
গ্লাসগোতে চলমান এই সম্মেলনে অংশ নিতে ১২০টিরও বেশি দেশের নেতারা যোগ দিয়েছেন। উপস্থিত দেশগুলো এরই মধ্যে বড় ধরণের পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নিঃসরণের হার কমানো ও বন উজাড় রোধ করা।
চীন ও রাশিয়া বৃক্ষ নিধন কমানোর অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেছে। সম্মেলনে বাইডেনের বক্তব্যের আগে পুতিন বন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি বৈঠকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন। পুতিন ওই বৈঠকে বলেন, রাশিয়া বন সংরক্ষণে সবচেয়ে কঠোর ও জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে।
চীন, রাশিয়া ও সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে চীন ও রাশিয়ার সমালোচনা করে বাইডেন বলেন, চীন নতুন ভূমিকায়, নতুন বিশ্ব শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে আর (এখানে) উপস্থিত হয়নি, কী আশ্চর্য!
তিনি বলেন, আইসল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়া- গোটা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় এখন পরিবেশ ও জলবায়ু। অথচ সেই সম্মেলনেই এলেন না চীনের প্রধান। এর থেকেই বোঝা যায়, চীন কেমন নেতৃত্ব দেবে।
রাশিয়াকেও এদিন এক হাত নিয়েছেন বাইডেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চল জ্বলছে। রাশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভয়ংকরভাবে পড়তে শুরু করেছে। অথচ প্রেসিডেন্ট কিছু করছেন না। চুপ করে বসে আছেন।
অক্টোবরে যখন রাশিয়া ঘোষণা করে পুতিন এই সম্মেলনে অংশ নেবেন না, তখন তার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রুশ প্রেসিডেন্টের এই সম্মেলনে অংশ না নেয়ার কোনও কারণ জানাননি। যদিও সেসময় তারা বলেছিল যে রাশিয়ার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার।
একই সময়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে কর্মকর্তারা জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট জিনপিং এই সম্মেলনে যোগ না দিতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে জিনপিং ২০২০ সালের প্রথম দিক থেকে চীনের বাইরে বের হননি। সেপ্টেম্বরে তিনি ঘোষণা দেন যে ২০৬০ সালের মধ্যে চীন কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করবে।
১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক জ্বালানি ফোরামে দেয়া এক বক্তব্যে পুতিন জানিয়েছিলেন, রাশিয়াও ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করবে।
নেট জিরো বা কার্বন নিরপেক্ষতা বলতে বোঝায় বায়ুমণ্ডলে বর্তমান মাত্রার সাথে আর গ্রিনহাউজ গ্যাস যোগ না করা।
রাশিয়া ও চীনকে আক্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্র কি করতে চায় সে বিষয়ে নির্দিষ্ট দিশা দিয়েছেন বাইডেন। তিনি জানিয়েছেন, মিথেন গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র উদ্যোগী। দ্রুত এই গ্যাসের নিঃসরণ বন্ধ করা হবে।
মিথেন গ্যাসও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমানো হবে বলে আগেই জানিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্য কিছু দেশ।
সম্মেলনে উপস্থিত প্রায় প্রতিটি দেশই শপথ নিয়েছে যে, জঙ্গল রক্ষা করা হবে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, জঙ্গল আছে এমন ৮৫ শতাংশ দেশ এই শপথে অংশ নিয়েছে। -বিবিসি ও ডয়চে ভেলে