পানি সংরক্ষণের পাত্র ‘লাউয়ের খোল’

উসিথোয়াই মারমা, বান্দরবান

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০৩:৪৯ পিএম

লাউয়ের খোল

লাউয়ের খোল

লাউয়ের খোলকে একটা বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন পাহাড়ের কয়েকটি জনগোষ্ঠী। বিশেষ করে বান্দরবানে ম্রো ও খুমী জনগোষ্ঠী বিভিন্ন প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম জিনিসের পরিবর্তে এখনো লাউয়ের খোল ব্যবহার করছেন। এর ব্যবহার একদিকে পরিবেশবন্ধব, অন্যদিকে এই খোলের পানি ঠান্ডা থাকে।

গরমকালে জুমক্ষেতে কাজ করার ফাঁকে পানিভর্তি লাউয়ের খোল অনেকে কলা গাছের গোড়ায় গর্ত করে পুঁতে রাখেন। ঘন্টা দুয়েক পরে এর পানি ফ্রিজে রাখার মতো ঠান্ডা জমে যায়। লাউয়ের খোল ব্যবহারকারী ম্রো ও খুমিরা বলছেন, এই খোলে অন্তত এক সপ্তাহ পানি রাখা যায়। আর এই পানি গরমকালে বেশ ঠান্ডাই থাকে। এ ছাড়া খোলের ভেতরের অংশ পানিকে আরও বিশুদ্ধ করে। 

এখনো ম্রো ও খুমীদের গ্রামে গেলে প্রত্যেকের ঘরে এর ব্যবহার দেখা যায়। একটা-দুইটা নয়, কারও বাড়িতে কমপক্ষে ত্রিশ-চল্লিশটা এই লাউয়ের খোলের পাত্র থাকে। তবে ত্রিপুরা এবং বম জনগোষ্ঠীর মধ্যে খোল ব্যবহার থাকলেও, তা শুধু দুর্গম এলাকায় ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। 

বান্দরবান সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, রামরি পাড়ায় একদল জুমিয়া জুমক্ষেতে কাজ করছিলেন। সঙ্গে রয়েছে কয়েকটি লাউয়ের খোলের পানির পাত্র। ক্লান্ত হয়ে পিপাসা লাগলে লাউয়ের খোলের পানি পান করছেন তাঁরা। সেই দলের ষাটোর্ধ্ব বয়সী চিংতুই ম্রো ও রুইতন ম্রো বলেন, এটিকে আমরা ঘরে এবং বাইরে পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। ঘরে অনেকগুলো লাউয়ের খোলে পানি জমা করে রাখা হয়। আবার ক্ষেত খামারে গেলে পানি ভরে নিয়ে যাওয়া হয় খাওয়ার জন্য। 

মেলকন ম্রো নামে এক নারী বলেন, ঝিরি থেকে প্রতিদিন লাউয়ের খোল দিয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়। এক থুরুংয়ে (এক ঝুড়িতে) কমপক্ষে ১০-১২টি পানির পাত্র বহন করা যায়। ঘরে এনে কলাপাতা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা হয়। যাতে ময়লা না পড়ে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো জানান, পানি সংরক্ষণের পাত্র লাউয়ের খোলকে ম্রো ভাষায় ‘তুইয়া’ বলা হয়। প্রত্যেক ম্রোর ঘরে কম-বেশি এই লাউয়ের খোল রয়েছে। জুমক্ষেতে এবং বাগানে যারা কাজ করেন তারা পানি ভরে সঙ্গে করে নিয়ে যায় খাওয়ার জন্য। 

দীর্ঘ সময় ধরে লাউয়ের খোলে পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন খুমীরা। তাদেরও ঘরে ঘরে রয়েছে এই লাউ খোলের পানির পাত্র। 

বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য ও খুমী সোস্যাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সিংঅং খুমী বলেন, দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা এখনো ঝিরি-ঝরণা এবং খালের পানির ওপর নির্ভরশীল। ঘরে পানি সংরক্ষণ করে রাখার কোনো উপায় ছিল না। ব্যবহারের জন্য এক সময় কোন কলস ও প্লাষ্টিকের জিনিসপত্র পর্যন্ত ছিল না। আমাদের আগের প্রজন্মের বয়োজ্যেষ্ঠরা লাউয়ের খোলকে বিশেষ কায়দা করে পানি সংরক্ষণ করে রাখত। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh