জলবায়ু সম্মেলন

ভারতের কারণে কয়লা ব্যবহারে ‘ইতি’ টানা হলো না

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২১, ০২:১০ পিএম

সম্মেলনে কেন্দ্রের বাইরে জলবায়ু কর্মীরা বিভিন্ন দেশের নেতাদের মুখোশ পরে বিক্ষোভে করেন। ছবি : রয়টার্স

সম্মেলনে কেন্দ্রের বাইরে জলবায়ু কর্মীরা বিভিন্ন দেশের নেতাদের মুখোশ পরে বিক্ষোভে করেন। ছবি : রয়টার্স

জলবায়ুর বিপজ্জনক পরিবর্তনে ইতি টানার উদ্দেশ্যে করা একটি চুক্তি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর কপ-২৬ সম্মেলনে এখন বাধার মুখে পড়েছে।

‘গ্লাসগো ক্লাইমেট প্যাক্ট’ হচ্ছে প্রথম কোনও জলবায়ু চুক্তি যেখানে কয়লা ব্যবহার থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল। কয়লাকে বলা হয় গ্রিনহাউজ গ্যাসের জন্য সবচেয়ে খারাপ জীবাশ্ম জ্বালানি।

চুক্তিতে আরও জরুরি ভিত্তিতে গ্রিনহাউজ গ্যাস উদ্গীরণ কমানো এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আরো অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর উপর জোর দেয়া হয়; যাতে করে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে পারে। কিন্তু উষ্ণতা বৃদ্ধির সীমা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে দেয়ার উদ্দেশ্যে এই চেষ্টা খুব বেশি এগোতে পারেনি।

পূর্ববর্তী দরকষাকষির খসড়ায় কয়লা ব্যবহার থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও ভারত নেতৃত্বাধীন বিরোধীতার কারণে শেষ পর্যন্ত নাটকীয় এক পরিসমাপ্তি হয়।

ভারতের জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী ভুপেনদার ইয়াদাভ প্রশ্ন তোলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যেখানে ‘এখনও উন্নয়নের নানা এজেন্ডা ও দারিদ্র বিমোচন নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে’ সেখানে তারা কীভাবে কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেবার প্রতিশ্রুতি দেবে?

শেষ পর্যন্ত দেশগুলো কয়লার ব্যবহার থেকে ‘ধাপে ধাপে পুরোপুরি সরে আসার’ পরিবর্তে ‘ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার’ ব্যাপারে একমত হয়। তবে দেশগুলোর নেতারা তাদের গভীর হতাশাও ব্যক্ত করেন।

কপ-২৬ এর প্রেসিডেন্ট অলক শর্মা বলেছেন , যেভাবে যেভাবে ঘটনাপ্রবাহ এগিয়েছে তাতে তিনি গভীরভাবে দুঃখিত। তিনি বহু কষ্টে অশ্রু সংবরণ করেন এবং প্রতিনিধিদের বলেন, সম্পূর্ণ চুক্তিটি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, দুনিয়াটার ভাগ্য স্রেফ একটি চিকন সুতার মাধ্যমে ঝুলে আছে। আমরা এখনও একটি জলবায়ু বিপর্যয়ের দরজায় টোকা দিচ্ছি। এখনই সময় জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার। অথবা গ্রিনহাউজ গ্যাস উদগীরণ শূণ্যে নামিয়ে আনার সম্ভাবনা শূন্য হয়ে যাবে।

চুক্তির অংশ অনুযায়ী দেশগুলো আগামী বছর বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছে তিনি।

চুক্তির মূল অর্জন 

১. কার্বন নিঃসরণের মাত্র কমিয়ে এনে তাপমাত্রা ১.৫ সেলসিয়াসে আনার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেটা পরের বছর আবার পর্যবেক্ষণ করা হবে।

২. প্রথমবারের মতো সমন্বিতভাবে কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি।

৩. উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়ানো।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, তিনি আশা করেন বিশ্ব কপ-২৬ এর দিকে ফিরে তাকাবে জলবায়ু পরিবর্তনের শেষের শুরু হিসেবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন তিনি লক্ষ্যে পৌঁছাতে অবিরাম কাজ করবেন।

মার্কিন জলবায়ু বিষয়ক দূত জন কেরি বলেন, আমরা আগের চেয়ে প্রকৃতপক্ষে অনেক কাছাকাছি অবস্থান করছি কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে। সেগুলো হলো- জলবায়ু বিষয়ক জটিলতা, দুষণমুক্ত বায়ু নিশ্চিত করা, নিরাপদ পানি ও সুরক্ষিত গ্রহ।

দেশগুলো পরের বছরে আবারও কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার আহ্বান জানাবে যাতে করে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ থাকে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই তাপমাত্রা ঠিক না রাখলে লাখ লাখ মানুষকে ভয়ানক তাপমাত্রা সহ্য করতে হবে।

এই চুক্তিতে আরো জোর দেয়া হয় জরুরি ভিত্তিতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আরও অর্থ দেয়া যাতে করে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। কিন্তু বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫সেলসিয়াস মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার যে আহ্বান সেটা বেশি দূর আগায়নি। -বিবিসি

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh