প্রাণ ফিরছে পর্যটনে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২০ পিএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২৩ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা আউটবাউন্ড ট্যুরিজম অর্থাৎ দেশের বাইরে পর্যটনে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এই খাতের ৯০% ব্যবসা ফিরেছে বলে জানিয়েছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ কমে আসায় সেইসাথে দেশব্যাপী টিকা কর্মসূচির কারণে অনেক দেশই বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য ভিসা চালু করেছে, ফ্লাইট চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে আসছে। সবশেষ গত ১৫ নভেম্বর থেকে পর্যটন ভিসা চালু করেছে ভারত। দেশটিতে এতদিন চিকিৎসাসহ বিশেষ ক্যাটাগরিতে ভিসা দেয়া হলেও পর্যটন ভিসা বন্ধ ছিলো।

ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তাহিয়া রুবাইয়াত পরিকল্পনা করছেন ভারত ঘুরে আসার। যদিও কদিন আগেই তিনি নেপাল থেকে ঘুরে এসেছেন। মহামারির সময়ে টানা দেড় বছর একপ্রকার গৃহবন্দি থাকার পর নেপাল যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আর হাতছাড়া করেননি।

তিনি বলেন, নেপালে ফ্লাইট চালু হতেই টিকেট কেটে ফেলি, ওখানে যেতে তো আগে থেকে ভিসা করার ঝামেলা নেই। কোভিডের টেস্ট করিয়েছি, টিকা সনদ তো ছিলই। ঘুরে আসার পর মনে হচ্ছে এতদিনের মানসিক চাপ থেকে বেরিয়েছি। সামনে ভারতও যাবো, যেহেতু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।

দীর্ঘ সময় বহির্বিশ্বে পর্যটন বন্ধ থাকায় সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্ট বা ট্যুর অপারেটর কোম্পানিগুলো। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহামারির আগে বহির্বিশ্বে পর্যটনকে ঘিরে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিসর ছিলো প্রতি মাসে ১৮০০ কোটি টাকার মতো। সেটা মহামারির সময় ২০০ কোটিতে নেমে এসেছিল। এমন পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ কোম্পানি তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

তবে টিকা আসার পর থেকে সেইসাথে করোনার সংক্রমণ অনেকটাই কমে আসায় ব্যবসা বাড়তে শুরু করেছে বলে জানান, জু ট্রাভেল অনলাইনের প্রতিষ্ঠাতা লুৎফে আলী। সাম্প্রতিক সময়ে এই খাতের ব্যবসা ৯০% ফিরে এসেছে বলে তিনি জানান।


লুৎফে আলী বলেন, মহামারির পুরো সময়ে আমাদের দুই কোটি টাকা লস হয়েছে। ওই সময়ে ৭০% ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরাও একটা অফিস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। এখন আস্তে আস্তে বিদেশ যেতে শুরু করেছে। এখন টুরিস্টরা এক কথায় ক্রেজি হয়ে আছে। ট্রাভেলের খরচ বাড়লেও মানুষ কোভিডের টিকা নিয়ে, টেস্ট করে হলেও ঘুরতে যাচ্ছে। এখন মাসে ১৮০০ কোটি টাকার ব্যবসা না হলেও ১৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে। সব দেশ বুঝে গিয়েছে যে করোনা কিভাবে সামলাতে হয়। তাই আমি আশাবাদী যে ট্যুরিজম আর বন্ধ হবে না।

তবে ২০১৫ সালে সরকার নতুন পে স্কেল ঘোষণা করার পর, এই খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক তাকরিমা সাইয়েদা।

দেশের বাইরে পর্যটনের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকার থেকে শুরু করে ভ্রমণকারীদের বেশ কিছু ব্যাপারে দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মিস সাইয়েদা। কারণ এর আগে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে ভুয়া কোভিড টেস্টসহ, তথ্য জালিয়াতির নানা অভিযোগে উঠেছিল।


সাইয়েদা বলেন, সরকারকে দুটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, প্রথমত যদি ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে অন্তত ৯০% মানুষকে কোভিড টিকার আওতায় আনতে হবে। আর ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টা আগে কোভিডের যে টেস্ট রিপোর্ট জমা দিতে হয় সেটায় যেনকোনো ভুল না থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর মানুষ যদি ব্যক্তিগত সচেতনতা থেকে ঠিকভাবে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মানে তাহলে আমাদের ব্যাপারে বাইরের দেশে দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক থাকবে।

এরই মধ্যে বেশিরভাগ দেশ পর্যটনের সুযোগ খুলে দিলেও একেক দেশে কঠোরতা একেক রকম। হংকং-সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে নিজ খরচে বাধ্যতামূলক ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয় আবার অন্যান্য দেশে টিকা সার্টিফিকেট এবং ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টা আগে কোভিড টেস্টের ভ্যারিফাইড সার্টিফিকেট দিলেই চলে।

বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের এসব নিয়ম প্রতিনিয়ত আপডেট হয়। তাই ভ্রমণের আগে সেসব বিষয়ে ধারণা নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh