বসদের যেসব ভুলে চলে যান যোগ্য কর্মীরা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২১, ১২:৪৪ পিএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২১, ১২:৪৮ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বসের সঙ্গে কর্মীদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না হলেও সুসম্পর্ক থাকা জরুরি। বস নির্দেশনা দেন ও কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের বৃহৎ অংশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দেন। এক্ষেত্রে কর্মীদের কারো সঙ্গে বসের তিক্ত সম্পর্ক হলে পতনের শুরু হয়, একইসঙ্গে ওই বসও কর্মীদের মনোযোগ ও প্রতিশ্রুতি হারাতে বসেন। 

সর্বপরী একজন খারাপ স্বভাবের বসের কারণে কর্মী ও প্রতিষ্ঠান উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক বসদের যেসব ভুলের কারণে যোগ্য কর্মীরা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যান।

প্রতিদান না দেওয়া  

দক্ষ কর্মীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে পাওনাটাও অন্যদের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। নয়তো মেধা বা প্রতিভার অবমূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু যখন তারা আর সবার মতোই বিবেচিত হন, তখন চলে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়।

ভুল মানুষকে পদন্নোতি দেওয়া 

বস হয়তো কোনও কারণে আপনাকে পছন্দ করেন না, তাই পদোন্নতিতে আপনার নামও তিনি লেখেননি। অথচ যার সঙ্গে বসের খুব ভালো সম্পর্ক, দেখা যায় তার নাম ঠিকই উঠে আছে পদোন্নতির তালিকায়। এটা যখন কোনও দক্ষ কর্মী বুঝতে পারেন, তখন তিনি সুযোগ খুঁজতে থাকেন। কারণ দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মীরা কিছুটা বেশি পাওয়ার দাবি রাখেন। কিন্তু অনেক সময়ই বসরা তাদের এড়িয়ে ভুল মানুষদের প্রমোশন দেন। এতে যোগ্য কর্মীদের মাঝে হতাশা চলে আসে। তারা কাজের স্বীকৃতি পেতে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যান।

খারাপ আচরণ 

গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনন্দিন অসন্তোষের একটা প্রতিকূল প্রভাব পড়ে সার্বিক উৎপাদনশীলতার উপর। বসদের খারাপ আচরণের কারণে অবশেষে ভালো কর্মীদের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যেতে হয়। রুঢ়তা, অহেতুক দোষ দেওয়া, ব্যঙ্গ করা ও প্রতিহিংসা নিয়ে খেলা করার কারণে কর্মীদের উদ্বেগ বাড়তে থাকে। বসদের বিরক্তিকর ও খারাপ আচরণ একটি ভালো কাজের পরিবেশের অন্তরায়।

কর্মীর দক্ষতাকে হেয় করা 

বসের কাজ হলো কর্মীদের কর্মক্ষমতা বাড়ানো। তাদের নতুন নতুন কাজে উৎসাহ দেওয়া। প্রতি মাসে কর্মীদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা। নিজের মতো করে কর্মীদের যোগ্য করে তোলা। অথচ কিছু কিছু বস আছেন যারা শুধু কর্মীদের ভুল খুঁজে বেড়ান। তাদের মাথায় সারাক্ষণ ছাঁটাইয়ের চিন্তা ঘোরে। কিন্তু এসব কর্মীকে গ্রুমিং করাও যে বসের দায়িত্ব, সেটা তিনি ভুলে যান। তার সঙ্গে কাজ করলে কিছু শেখা যাবে না, এটা বুঝতে পেরেই যোগ্য কর্মীরা চাকরি ছেড়ে দেন। 

কর্মীর উপর দোষ চাপানো

লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলে জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে অনেক সময় বসরা কর্মীর উপর দোষ চাপিয়ে দেন। তাদের বিশ্বস্ততা, দক্ষতা, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই অনৈতিক আচরণ কোনো কর্মীর কাছেই গ্রহণযোগ্য হয় না।

সৃষ্টিশীলতায় বাধা দেওয়া 

মনোযোগী ও দক্ষ কর্মীরা যে কাজেই হাত দেন, সেখানেই ভালো ফলাফল আসে। যেসব প্রতিষ্ঠান সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে তাদের অনুসরণ করলে দেখা যাবে, সৃষ্টিশীল কর্মীদের এই অসাধারণ গুণের কদর করেছে তারা। কিন্তু উল্টো সৃজনশীল কর্মীকে হেয়প্রতিপন্ন করা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনদিনও দাঁড়াতে পারেনি। কারণ সৃজনশীল কর্মীকে হেয় প্রতিপন্ন করলে কাজে তাদের বিতৃষ্ণা চলে আসে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বস এ ধরনের উল্টো কাজে পারদর্শী সেসব প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত ততোই অন্ধকার।

বাড়তি কাজ 

দক্ষ কর্মীরা যতটুকু কাজ করেন তা গুণগত মানসম্পন্ন হয়। এ কারণে বসরা তাদের দিয়ে সব সময় বাড়তি কাজ করিয়ে নিতে চান। তখন কর্মীদের কাছে পারদর্শিতা শাস্তি হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে বাড়তি প্রতি ঘণ্টার কাজে উৎপাদনশীলতা কমতে থাকে। কাজেই দক্ষদের দিয়ে বেশি বেশি কাজ করিয়ে লাভ নেই।

ভালো-মন্দ না দেখা 

যেসব বস কর্মীদের ভালো-মন্দ বাছবিচার করেন না সেসব প্রতিষ্ঠানে বস ও কর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকে না। যেসব বস কর্মীদের সফলতায় আনন্দিত হন না অথবা সমস্যা সমাধানের পথ দেখাতে এগিয়ে আসেন না, তাদের অধীনে কোনও কর্মীই কাজ করতে চান না।

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা 

ভালো কর্মীদের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে অনেক বসই নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু মুখের কথা শেষ অবধি কথাই থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে বসদের ওপর আস্থা হারান তারা। অবিশ্বস্ত বসের অধীনে নিরাপত্তাবোধ করেন না কোনও কর্মী।

কর্মীদের আবেগকে পাত্তা না দেওয়া  

প্রত্যেক কর্মীর নিজস্ব পছন্দ ও প্রয়োজন রয়েছে। এগুলো বসের কাছে নিগৃহীত হলে কর্মীদের অহংবোধে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের উৎপাদনশীলতা কমতে থাকে। যারা সব নিয়ম পালন করেও আবেগ লালনে বাধাপ্রাপ্ত হন, তাদের কাছে কাজের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে ওঠে।

পীড়াদায়ক লক্ষ্য নির্ধারণ করা 

প্রত্যেক কর্মীর কর্মক্ষমতার সীমা রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় প্রাথমিক লক্ষ্য না দিয়ে বসরা অস্বাভাবিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেন। আর তা অর্জনে কর্মীদের সুস্থ ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া জরুরি মনে হয় কর্মীর কাছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh