নাটক মঞ্চে ফিরেছে

তৌফিকুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১২:৫৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনা অতিমারির থাবায় পুরো পৃথিবীই থমকে দাঁড়িয়েছিল, সেই সঙ্গে স্থবির হয়ে গিয়েছিল সংস্কৃতিচর্চার অঙ্গন। মঞ্চে ওঠেনি নাটক, মহড়াকক্ষে হয়নি কোনো রিহার্সেল, ঘরবন্দি এক ঘোরলাগা সময়ে সবাই যেন একটু শান্তিতে নিঃশ্বাসটুকুও নিতে পারছিল না। সে অনিশ্চিত সময়ের ফেউ কাটিয়ে আবারও মঞ্চে নাটক ফিরেছে, মহড়াকক্ষগুলোতে চেনা মানুষের শিল্পচর্চার ঝংকার বাজছে আর মঞ্চের নিয়নআলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে, একের পর এক নাটকের হিল্লোল।

এবারের প্রতিবেদনে দীর্ঘদিন মঞ্চ নাটক নিয়ে কাজ করা তিনটি নাট্যদলের কার্যক্রম তুলে ধরা হলো

স্বপ্নদল

যুদ্ধ ও আণবিক অস্ত্রবিরোধী সচেতনতা তৈরিতে ১৮ বছর ধরে নিয়মিতভাবে ‘ত্রিংশ শতাব্দী’র মঞ্চায়ন করে আসছে স্বপ্নদল। গতকাল ১৭ নভেম্বর নাট্যদলটির ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ নাটকের ১১৫তম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আগামী ৩০ নভেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘চিত্রাঙ্গদা’-র ৮৩তম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।

স্বপ্নদলের প্রধান সম্পাদক জাহিদ রিপন জানান, অক্টোবরের ১৭ তারিখ হল খোলার পর আমরা ইতিমধ্যে ৫টি শো করে ফেলেছি, এ দুটি প্রযোজনা মিলে ৭টি হবে। ত্রিংশ শতাব্দী নাটকটি আমরা ইংল্যান্ড ও জাপানেও প্রদর্শন করেছি। এটা আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রদর্শিত নাটক।

করোনাকালীন ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে জাহিদ রিপন বলেন, আমাদের কিছু নাট্যকর্মীকে হারিয়ে ফেলেছি। বর্তমানে তারা অন্য কোনো কাজের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে অথবা ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। সে জায়গা থেকে এটা একটা নতুন শুরু। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিয়মিত প্রযোজনা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ ও ‘চিত্রাঙ্গদা’ নাটকের জন্য অন্য নাট্যকর্মীদের তৈরি করেছি। 

করোনাকালীন সময়ে আমরা দেড় লাখ টাকার মতো শুধু গোডাউন ভাড়া দিয়েছি। যেখানে সেট বা প্রুপসগুলো (থিয়েটার উপকরণ) আমরা রাখি। এখন প্রতিটি দলেরই কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। যদিও সরকার অর্ধেক আসনে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনা ভাড়ায় হলটা দিচ্ছে; কিন্তু আরও বেশি প্রণোদনা দরকার।

দর্শকের আগ্রহের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, থিয়েটার রেকর্ডেড কিছু না, থিয়েটার হচ্ছে জীবন্ত শিল্প, এ ক্ষেত্রে একই নাটক বারবার পারফর্ম করতে হলেও অনুভূতিটা কিন্তু আলাদা হয়। ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ নাটক ১৫ বার দেখেছে, ‘চিত্রাঙ্গদা’ নাটকটি ৯ বার দেখেছে এমন দর্শকও আমরা পেয়েছি। 

বটতলা

কিছুদিন আগে ‘মার্ক্স ইন সোহো’ নাটকটি মঞ্চে এনেছে বটতলা, এ নাটকের ইতিমধ্যে ৬টি প্রদর্শনী হয়ে গেছে। মহিলা সমিতিতে প্রদর্শিত হওয়া এ নাটকের সবকটি শো হাউসফুল ছিল। নাটকটির গল্প মাত্র দুটি চরিত্রকে ঘিরে। যেখানে কাল মার্ক্স আর তার স্ত্রীকে বর্তমান দুনিয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। বটতলার পূর্ববর্তী প্রযোজনার নিজস্ব ধরনের মতো করেই এ নাটকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, আজকের পৃথিবীকে বুঝতে মার্ক্স এখন কতটা প্রাসঙ্গিক? 

বটতলার আগামী প্রযোজনা নিয়ে নাট্যদলটির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আলী হায়দার জানান, বটতলা মোহাম্মদ সাঈদের নির্দেশনায় দারিও ফো এর নাটক ‘রাইজ অ্যান্ড শাইন’ মঞ্চে আনছে। নাটকটি অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক আব্দুস সেলিম। এ নাটক নিয়ে বর্তমানে বটতলার নাট্যকর্মীরা মহড়াকক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ ছাড়া অতীতের ধারাবাহিকতায় বটতলা আগামী বছর আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব পালনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

ম্যাড থেটার

আর্য মেঘদূতের অভিনয়ে ম্যাড থেটারের তৃতীয় প্রযোজনা একক নাটক অ্যানা ফ্রাঙ্ক। অ্যানা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি অবলম্বনে নির্মিত প্রযোজনাটি সম্প্রতি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে মঞ্চস্থ হয়েছে। আসাদুল ইসলামের রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী আনিসুল হক বরুন।

এ নাটকে কেমন সাড়া পেয়েছেন জানতে চাইলে ম্যাড থেটারের সোনিয়া হাসান সুবর্ণা জানান, আমরা প্রত্যাশার বাইরে দর্শকদের ভালো সাড়া পেয়েছি।

নাটকে অভিনয় নিয়ে আর্য মেঘদূত বলেন, ‘সাধারণত একক পারফরমেন্স বড় আর্টিস্টরা করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আমি যখন জানলাম এ নাটকটা আমাকে নিয়েই লেখা হয়েছে, এটা জানার পর আমি খুব আপ্লুত ছিলাম। কতটুকু করতে পেরেছি এটা আসলে দর্শকরাই বলতে পারবেন। আমার আসলে নাটকটিতে পারফর্ম করতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। আর অ্যানা ফ্রাঙ্কের মতো চরিত্র, যার ডায়েরিগুলো সবাইকে অনুপ্রাণিত করে আসছে এবং করে যাবে। সুতরাং এরকম একটা চরিত্র করতে পেরে সত্যি অনেক ভালো লেগেছে।’ 

ম্যাড থেটারের আগামী প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথের দ্বিতীয় বিজয়া, আসাদুল ইসলামের লেখা ও নির্দেশনায় এ নাটকটির কাজ চলছে বলে সোনিয়া হাসান সুবর্ণা জানিয়েছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh