সঞ্চয়ের শেষ টাকায় উদ্যোক্তা হুমায়রা

মেহনাজ খান

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৩৫ পিএম | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২৫ পিএম

উদ্যোক্তা হুমায়রা সুলতানা

উদ্যোক্তা হুমায়রা সুলতানা

স্বাবলম্বী ও নিজের পায়ে দাঁড়াবার দীপ্ত সংকল্প থাকে অনেক নারীর। দেশী পণ্যের ওপর ভালোবাসা ও গুরুত্ব দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অনেকেই। সেই সাথে নিজের ও দেশর অর্থনৈতিক চাকা স্বাবলম্বী করছে। এমন এক নারী উদ্যোক্তা হলেন হুমায়রা সুলতানা। 

উদ্যোক্তা হুমায়রা সুলতানা বলেন, ২০২০ সালে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে শুরু হয় ‘শখের ডিব্বা’। শখের শাড়ি নিয়ে- ‘শখের ডিব্বা’। শখের ডিব্বার ছাতার নিচেই আছে গ্ল্যাম আপ উইথ হুমায়রা। 

উদ্যোক্তা হুমায়রা- বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। মা গৃহিণী, একসময় তিনিও কর্মজীবী নারী ছিলেন। বাবা অটোমোবাইলস ইঞ্জিনিয়ার। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ শহরে। তবে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স এ মাস্টার্স শেষ করেছেন তিনি। পাশাপাশি প্রফেশনাল প্রফিশিয়েন্সির জন্য মাস্টার্স ইন কমুনিকেশন করেছেন উদ্যোক্তা হুমায়রা। 

২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন বেসরকারি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা যেমন- এডুকেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এডুকো), প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন বাংলাদেশ এ ডেভেলপমেন্ট কমুনিকেশন্স এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করেছেন হুমায়রা। পাশাপাশি বর্তমানে কাজ করছেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশে।


উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে হুমায়রা সুলতানা সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ‘২০২০ সালে সদ্য ম্যাটারনিটি লিভ শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি। ঠিক তার পরপরই করোনা আমাদের জীবন থমকে দিলো। চারিদিকে লকডাউন, বাসায় সাহায্যের জন্য কোনো মানুষ নেই। একদিকে অফিস, অন্যদিকে আমার তিন সন্তান, যার মধ্যে কনিষ্ঠজন কেবল ৭ মাসে পরেছে। সব কিছু মিলিয়ে যখন নাভিশ্বাস, তখন মনে হলো, এই যে এতো যুদ্ধ করছি, চাকরি করছি, সব আমার সন্তানদের জন্য। অথচ তাদের সময় দিতে পারছি না, ঠিকমত যত্ন নিতেও পারছি না। ভাবলাম একা হাতে সব সামলানো যাবে না। বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দিলাম। একেবারে অনিশ্চিত সবকিছু জেনেও। চাকরিজীবনে গ্যাপ মানেই অনেক অনেক পিছিয়ে পরা। চাকরিটাও যে ভীষণ দরকার! না, বিলাসিতার জন্য নয়, প্রয়োজনে। এতোদিন চাকরি করা মানুষটা অগত্যা চাকরি ছাড়লাম ঠিকই, কিন্তু কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে বাঁচাও সম্ভব নয়। তখন ভাবতে থাকলাম, হাতে যা আছে তা নিয়েই কিছু একটা শুরু করব। হাল ছাড়ব না। নিজের শক্তি, দুর্বলতা বিচার করে খুঁজতে থাকলাম কী ভালো বুঝি অথবা কী করলে জীবনে থেমে যেতে হবে না। সেই নিজের বোঝাপড়ার ভেতর দিয়েই শুরু হলো শখের ডিব্বা ফেসবুক পেজের ব্যবসা।  


তিনি বলেন, হাতে যা টাকা ছিলো তা দিয়ে বড় জোর ৫ মাস চলতে পারতাম। তবে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রচেষ্টায় বেশি ঝুঁকি নিয়ে সব হারাবার রিস্কে যাওয়ার মতন অবস্থা বা ইচ্ছা ছিলো না। ৮০০০ টাকা পূঁজি দিয়ে শুরু করলাম ব্যবসা। 

ব্যবসা শুরু করি দেশি শাড়ি নিয়ে। যা ছিলো তাঁতের সুতি শাড়ি। সেই সুতি শাড়ি থেকে শুরু করে এখন রয়েছে জামদানি, মনিপুরি, কাতান থেকে শুরু করে নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি শাড়ি, কুর্তি, গয়না, সেই সাথে বিভিন্ন লাইফস্টাইলের প্রোডাক্টস। 


বর্তমানে শখের ডিব্বা একটি অনলাইন বা এফকমার্স প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে। প্ল্যাটফর্মটির খেয়াল রাখার জন্য টিম হিসেবে রয়েছেন চারজন। তাদের কাজের ধরণ আলাদা আলাদা করে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় অন্যান্য ফ্রিল্যান্স ফ্যাশন ডিজাইনারের সাথেও কাজ করে শখের ডিব্বা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের ডিজাইন নিয়ে কাজ করা হয়। 

উদ্যোক্তা তার ‘শখের ডিব্বা’ শপ সম্পর্কে হুমায়রা জানান, সামনেই শপ ওপেন হচ্ছে। সেই জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছি। উদ্যোগটি মূলত এফ কমার্সই ছিলো। ‘শখের ডিব্বার’ ট্যাগ লাইনটা হল “ছোট ছোট শখগুলোর সাথে আহলাদ করুন, ছোট ছোট শখগুলোর যত্ন নিন, সাথে আমি আমরা”। সকলের ভালোবাসা পেয়ে সেই ‘শখের ডিব্বা’ সাহস করেছে ছোট আউটলেট শুরুর।


বিদেশে পণ্য রপ্তানি নিয়ে তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে আমেরিকায় পণ্য পাঠিয়েছি। তবে, পণ্য পাঠানোর এই প্রসেসটি ক্লায়েন্টের জন্য আরো সুবিধাজনক ও দ্রুত করতে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া সারা বাংলাদেশে ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেমে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি ক্লায়েন্টের দরজায়।

হুমায়রা বলেন, যেটা ভালো বুঝি সেটা নিয়েই কাজ করা উচিত বলে মনে করি। এফ কমার্সের দুনিয়ায় অনেক শাড়ির পেজ রয়েছে। একে অন্যকে দেখে নিজেও একটা পেজ ওপেন করে ফেলার প্রবণতা আছে অনেকের মধ্যে। তবে পরামর্শ দিব একটাই- নিজে যা ভালো বুঝবেন, সেটাই করবেন, অন্যকে ফলো করে কোন কিছু করা যাবে না।ক্রেতাদের জন্য রুচিসম্মত পণ্য নিয়ে কাজ করলে সফল হওয়া খুব একটি কষ্টের বিষয় নয়।   

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh