নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০৫:৪৫ পিএম
মনিরুল ইসলাম
সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার নাম করে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে নাটোরের বাগাতিপাড়ার মনিরুল ইসলাম নামে এক প্রতারককে আটক করেছে র্যাব।
সাতক্ষীরা ও ঠাকুরগাঁও এলাকার দুই যুবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের নন্দিকুজা গ্রাম থেকে ওই প্রতারককে আটক করে র্যাব।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান র্যাব-৫ এর নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন। আটক মনিরুল ইসলাম বাগাতিপাড়া উপজেলার নন্দিকুজা এলাকার কফির উদ্দিনের ছেলে।
র্যাব-৫ এর নাটোর ক্যাম্পে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৫ এর উপ-অধিনায়ক সহকারী পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা শ্যামনগর গ্রামের মৃত কোবাত আলীর ছেলে শাহিন আলম ও ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর গ্রামের মো. নাসিম এই দুইজনের কাছ থেকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার নামে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারক মনিরুল ইসলাম প্রায় ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত রাতে বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের নন্দিকুজা গ্রামে প্রতারক মনিরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাব। এসময় নগদ ৫৮ হাজার ১০০ বাংলাদেশী ও ৮০০ ভারতয়ি রুপি, বিভিন্ন নিয়োগপত্রের সফট কপির দুটি পেইন ড্রাইভ, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৬টি চেক বই, ৭টি এটিএম কার্ড ১টি ভুয়াসহ তিনটি এনআইডি কার্ড, ২টি ভুয়া নিয়োগপত্র, চাকরি দানের ৩টি চুক্তিনামা, ৪টি সিমকার্ড, ২টি মোবাইল ফোন, ৮টি অর্থ লেনদেনের রেজিস্টার ও ১২টি জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রতারক মনিরুল নিজেকে চাঁন মন্ডল এবং ঢাকা সেনাবাহিনীর সিএমএস এর করনিক পরিচয় দিয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়া প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
অভিযুক্ত মো. মনিরুল ইসলাম এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে পেশায় একজন ঔষধ বিক্রেতা হলেও নিজেকে সেনাবাহিনীর সিএমএইচ, ঢাকায় করণিক পদে কর্মরত আছে বলে পরিচয় ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর সৈনিক, অফিস সহায়ক, মেসওয়েটার, স্টোরম্যান এমন বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে চাকরি প্রত্যাশী যুবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো। প্রতারক মনিরুল জাল-জালীয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে চাকরি প্রার্থীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে থাকতো। নিয়োগপত্রে উল্লেখিত যোগদানের তারিখে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগদানের নিমিত্তে যাওয়ার পর চাকরি প্রার্থীরা বুঝতে পারতেন যে ওই নিয়োগপত্র ভুয়া। এভাবে প্রতারক মনিরুল ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এছাড়াও মনিরুল প্রতারণার কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজ নাম পরিবর্তন করে চাঁন মন্ডল পরিচয় ধারণ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক মনিরুল অভিযোগকারী মো. শাহিন আলম (২৭) ও মো. নাসিম (২১) এর কাছে ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদান ও মোটা অংকের অর্থ গ্রহণসহ জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে।
এই প্রতারণার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বাগাতিপাড়া থানায় মামলা হয়েছে বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।