মো. হাবিবুর রহমান
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৩১ পিএম
আড্ডায় মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। ছবি: তপু
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রতিটি মানুষের অপরিহার্য সঙ্গী বন্ধু । আর একে অপরের সুখে দুঃখে সবসময় পাশে থাকার নাম হলো বন্ধুত্ব । প্রতিটি মানুষের নির্দিষ্ট কিছু বন্ধু থাকে। মানুষ জীবনে যত ভাল সময় কাটায় তার বেশিরভাগ সময়ই কাটায় এই বন্ধুত্বের আড্ডায়। একজন ব্যক্তি তার দৈনন্দিন জীবনের নানান কর্মকান্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে এই আড্ডায়। অন্য যেকোন জায়গায় যেমন একটি কথা বলার আগে দশবার ভাবতে হয়। বন্ধুত্বের আড্ডায় তেমনটি করতে হয়না।
ক্যাম্পাসের বন্ধুত্বের আড্ডায় যেমন থাকে হাসি ঠাট্টা ও খুনসুটি তেমনি থাকে সুখ দুঃখের গল্পগুলোও। তাই একজন মানুষ তার মনের অভিব্যক্তিগুলো সম্পূর্ণরুপে প্রকাশ করতে পারে এই বন্ধুত্বের আড্ডায়। মাতৃভাষা ছাড়া মানুষ যেমন মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তৃপ্তি পায়না। তেমনি একজন মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের অভিব্যক্তি গুলো আরেকজন বন্ধুকে না বলে তৃপ্তি পায়না। ক্যাম্পাস জীবনের সবচেয়ে সেরা ও সুন্দর মুহর্তগুলো মানুষ বন্ধুচক্রের ক্যাম্পাস আড্ডাতেই কাটায়।
বর্তমান ফেসবুক আর স্মার্টফোন এর যুগে বন্ধুত্বের আড্ডাগুলো আর সেভাবে জমে উঠেনা। ঘরে বসে ফেসবুক আর চ্যাটিং করে সময় পার করছে বেশিরভাগ মানুষ। ঘরে বসেই যেখানে সকল বন্ধুর সাথে কথা বলা ও দেখা যাচ্ছে সেখানে সরাসরি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে আড্ডা দেওয়ার আগ্রহ দিন দিন কমতে শুরু করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে ।
অনেক সময় বন্ধুরা আড্ডাচক্রে হাজির হলেও ফেসবুক, ইন্টারনেট ব্যবহারের সহজলভ্যতা ও অভ্যাসের কারণে আড্ডার মধ্যেও অনেকে ম্যাসেজিং ফেসবুক স্ক্রলিং করে থাকে। বন্ধুচক্রের আড্ডাতে যেখানে শোরগোল আর হুটহাট চলতি গানের দুএকলাইন ভেসে উঠার কথা সেখানে এখন শুধুই নীরাবতা। সবাই পাশাপাশি বসে থাকলেও যে যার মতো স্মার্টফোনে সময় দিতে ব্যস্ত। এ যেন একজন অপরের অনেক কাছে থেকেও অনেক দূরে এনে দাড় করে দিয়েছে। প্রাণচাঞ্চল্যকর আড্ডার মাঝে প্রাণহীন অসার নীরাবতা নেমে এসেছে। এতে করে বন্ধুত্বের সম্পর্কেরও অবনতি হচ্ছে।
এছাড়া ফেসবুক, ইউটিউব ও বিভিন্ন ধরনের মোবাইল গেইমসে আসক্তি কিশোর তরুনদের মাঝে আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে বয়সের যে সময়টাতে শিশুকিশোরদের মাঠে খেলাধুলার কথা সে সময়ে তারা মোবাইলে ব্যস্ত থাকছে। এতে করে অল্প বয়স থেকেই তারা মাঠের খেলাধুলা ও বন্ধুত্বের আড্ডা এড়িয়ে ঘরে বসে স্মার্টফোন আর মোবাইল গেইমসের দিকে ঝুকছে ।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের এক অধ্যাপক প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থের উপর স্মার্টফোনের প্রভাব নিয়ে গবেষনা করেছেন। ‘হ্যাভ স্মার্টফোনস ডেস্ট্রয়েড আ জেনারেশন?’ শিরোনামের এই গবেষণায় উঠে এসেছে, এ যুগের কিশোররা বন্ধুদের সাথে কম সময় কাটাচ্ছে, ডেটিং এ কম বেরোচ্ছে, এমনকি পুরো প্রজন্মের ঘুম কম হচ্ছে। হতাশা, উদ্বেগ ও আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে এই সাইবার নিপীড়ন এর কারণে।
স্মার্টফোন আর ফেসবুক যে সব সময় বন্ধুত্বের আড্ডার ক্ষতি সাধন করছে এমনটিও নয়। এই স্মার্টফোন ফেসবুক ইত্যাদির কল্যাণে করোনার মধ্যেও লকডাউনে সবাই ঘরবন্দী জীবনযাপন করলেও ভার্চুয়াল আড্ডায় একে অপরের সাথে যুক্ত হতে পেরেছে। স্মার্টফোনের সঠিক ব্যবহার বন্ধুত্বের আড্ডার জন্য হুমকি নয়। এর সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার সমাজের জন্য কল্যাণও বয়ে আনতে পারে।
তবুও বন্ধুত্বের সরাসরি আড্ডার যে এক প্রাণবন্ত উৎফুল্লতা তা অন্য কোন মাধ্যমে সম্ভব নয়। ফেসবুক, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন এর ব্যবহার পরিমিত হোক বন্ধুচক্রের আড্ডাগুলো আবার ফিরে পাক প্রাণচাঞ্চল্য।